SAHA ANTAR

Published:
2021-10-29 07:23:15 BdST

রাখে ডাক্তার, মারে কেস্ত্রীর গলায় কোপ স্বামীর, কাটা গলা জুড়ে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচালেন চিকিৎসকরা


 


অভিরূপ দাস
________________

রাখে ডাক্তার, মারে কে? চিরতরে যাকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন স্বামী, তারই মৃত্যু ঠেকিয়ে দিলেন এসএসকেএম হাসপাতালের (SSKM Hospital) ইনস্টিটিউট অফ অটো রাইনো ল্যারিঙ্গোলজি হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা। সাফল্যের সঙ্গে বিরল অপারেশন করে নজির গড়লেন চিকিৎসকরা।
ঘুমন্ত স্ত্রী মণি ঘরাইয়ের গলায় ধারালো বটির কোপ বসিয়েছিলেন তাঁর স্বামী। মারাত্মক আঘাতে শ্বাসনালী খাদ্যনালী ফালাফালা। ওই অবস্থাতেই বছর পঞ্চাশের মহিলা এসেছিলেন এসএসকেএম হাসপাতালের ইনস্টিটিউট অফ অটো রাইনো ল্যারিঙ্গোলজি হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি বিভাগে। এই মুহূর্তে যা দেশের মধ্যে সেন্টার অফ এক্সেলেন্স। দেশের তাবৎ এলাকা থেকে মানুষ আসেন চিকিৎসা করাতে।

মণি ঘরাই যখন হাসপাতালে আসেন, কথা বলতে পারছিলেন না। ঝুলন্ত গলা থেকে ফিনকি দিয়ে ছুটছিল রক্ত। টানা চার ঘন্টার অস্ত্রোপচারে কাটা গলা জুড়ে গেল হুবহু। অভাবনীয় এ অস্ত্রোপচার যাঁর তত্ত্বাবধানে সম্ভব হল, তিনি ডা. অরুণাভ সেনগুপ্ত। ইনস্টিটিউট অফ অটো রাইনো ল্যারিঙ্গোলজি অ্যান্ড হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি বিভাগের ডিরেক্টর। গুরুতর আহত রোগিনীকে দ্রুত অস্ত্রোপচারের টিমে ছিলেন ডা. দেবাশিস বর্মন, ডা. সায়ন হাজরা এবং ডা. সৌত্রিক কুমার।

কতটা গুরুতর ছিল মহিলার গলার আঘাত? ডা. সৌত্রিক কুমার জানিয়েছেন, খাওয়া তো দূরঅস্ত। কথা বলতে গেলেই পিচকিরির মতো রক্ত ছুটছিল। গলায় ফুটো করে ট্র‌্যাকিওস্টমি করা হয়েছিল। সেখান থেকেই শ্বাস নিচ্ছিলেন। আর খাওয়াদাওয়া? তার জন্য নাকে নল দিয়ে রাইলস টিউব ঢোকানো হয়েছিল। তার সাহায্যে তরল খাবার প্রবেশ করানো হয়। অস্ত্রোপচার করে শ্বাসনালী-খাদ্যনালী জোড়া লাগানো হয়। আহতের থুতনির সঙ্গে বুক সেলাই করে দেওয়া হয়েছিল, যাতে মুখটা তুলতে না পারেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, লতানো গাছের ডালের মতো ঝুলছিল গলাটা। মাথা উপরে তুললেই ছিঁড়ে যেত শ্বাসনালী।


তারপর দেড়মাস মণি ঘরাই ওভাবেই শুয়ে ছিলেন এসএসকেএম হাসপাতালে। এরই মধ্যে একবার ব্রঙ্কোস্কপি করে দেখা যায় ক্ষত সাড়ছে শ্বাসনালীর। ধীরে ধীরে ট্র‌্যাকিওস্টমি খুলে দেওয়া হয়। আস্তে আস্তে কথা বলতে শুরু করেন রোগী। খাদ্যনালী জুড়তে একটু সময় লাগে। এই মুহূর্তে মুখ দিয়ে খাবার খেতে পারছেন রোগী। এত কাণ্ডের কারণ জানিয়েছে মনির পরিবার। পারিবারিক অশান্তি ছিল দীর্ঘদিন। স্বামী দীর্ঘদিন ধরেই স্ত্রীর উপর অত্যাচার করত। তার প্রতিবাদ করতেন বাড়ির লোকেরা। কিন্তু ঝোঁকের বশে যে স্বামী খুন করতে যাবেন এমনটা ভাবেনি কেউই। এক রাত্রে মায়ের গলার এই অবস্থা দেখে হতচকিত হয়ে পড়েন মেয়ে। তিনিই এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসেন মাকে। পুলিশ সূত্রে খবর, দোষ কবুল করেছেন স্বামী। তিনি আপাতত জেলে।

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়