SAHA ANTAR

Published:
2021-10-11 16:14:50 BdST

হাসপাতালে ওম শান্তি!


 

 

ডা. তারিক আলম অনি
রেজিস্ট্রার, জেনারেল সার্জারী
রকহ্যাম্পটন হসপিটাল, সেন্ট্রাল কুইন্সল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া
———————————

 

আরও দুটো গল্প। গল্পের পর অনুসিদ্ধান্ত যা আপনারা টাইটেল এ দেখছেন।

গল্প ১:
——————-

ওয়ার্ডে এক রোগীর ক্যানুলা চেন্জ করতে হবে। তার ফ্লুইড- এন্টিবায়োটিক লাগবে, কিন্তু ক্যানুলা টা নষ্ট হয়ে গেছে। ইন্টার্ণ -রেসিডেন্ট মিলে কয়েকবার গুতোগুতি করে ব্যর্থ মনোরথে ফিরে এসেছে। তারা আল্ট্রাসাউন্ড মেশিন দিয়েও চেষ্টা করেছে। এবার আমার পালা।

আমি শ্রাগ করলাম। অন কলে রোগী দেখে আর থিয়েটার করেই যেখানে কুল পাইনা সেখানে ক্যানুলা করে সময় নষ্ট করার প্রশ্ন ই ওঠে না। এটা আমার প্রায়োরিটি লিস্টে সবচেয়ে কম প্রায়োরিটির কাজ। তার উপর সার্জারীতে কাজ করে আমার ক্যানুলা করার দক্ষতা প্রায় শূণ্যের কোঠায় নেমে এসেছে। আগে যখন ইমার্জেন্সী রেজিস্ট্রার ছিলাম তখন sharp shooter ছিলাম, ভালো ক্যানুলা করতে পারতাম। কিন্তু, বিগত দুই বছরে আমি কোন ক্যানুলা করেছি এটা মনেই করতে পারলাম না !
আর এটা তো ডিফিকাল্ট ক্যানুলা !!

আমি ইন্টার্ণ কে বললাম, “ আমাকে কেন জানাচ্ছো ?! আইসিইউ কে ফোন দাও, তোমরা না পারলে, নেক্সট স্টেপ তো তারা।”

ইন্টার্ণ বিরস মুখে জানালো, আইসিইউ বলেছে, ইন্টার্ণ -রেসিডেন্ট ফেইল করার পর রেজিস্ট্রার কেও চেষ্টা করতে। অর্থাৎ, যদি আমি ফেল করি তাহলে তারা আসবে।

আমি ১ মিনিটে রোগীর কাছে গেলাম, নিজের পরিচয় দিয়ে বললাম, " হাসপাতালের স্টুপিড প্রটোকলের কারণে তোমার হাতে আমাকে সুই ফোটাতে হচ্ছে। আমি খুবই দূ:খিত! " এই বলে আমি রোগীর হাতে সুই ফোটালাম( ক্যানুলা করার চেষ্টা ও করলাম না) এবং বের করে নিলাম, ওখানে ছোট্ট টেপ লাগিয়ে দিলাম।

২ মিনিটের মাথায় রুমে ফিরে হাসিহাসি মুখে ইন্টার্ণ কে বললাম, “ আমি ও ক্যানুলা করতে পারিনি। কিন্তু আমি যে চেষ্টা করেছি তার প্রমাণ ও আছে, রোগীর হাতে টেপ লাগানো! এবার আইসিইউ রেজিস্ট্রার কে এসে ক্যানুলা করতে বল!


গল্প ২:
———————

থিয়েটারে কনসালটেন্টের সাথে কম্পিউটারে স্ক্যান দেখছি, একটু পরেই অপারেশন শুরু হবে। এমন সময় ইমার্জেন্সী থেকে রোগী রেফার করল।

আমি ফোনে দুলাইন শুনেই বললাম, “সিটি স্ক্যান লাগবে, স্ক্যান টা করে ফেল। আমি বসের সাথে কেস এ দাড়াচ্ছি। কেস শেষ করেই এসে দেখছি। ”

ইমার্জেন্সী রোজিস্ট্রার, “তুমি আগে নিজে এসে রোগী দেখ তারপর লাগলে সিটি স্ক্যান কর।”

আমি, “ও তাই নাকি! কোন সমস্যা নেই। আসছি।”

আমি বস কে বলে কম্পিউটারের কাজ থামিয়ে চারতলা থেকে লিফ্টে চেপে ১ মিনিটের মধ্যে গ্রাউন্ড ফ্লোরের ইমার্জেন্সী তে গেলাম।

রোগীর দিকে ১০ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকলাম।

তারপর গম্ভীর ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে বললাম, “হুম… রোগীর অবস্থা খারাপ, সিটি স্ক্যান লাগবে, সিটি স্ক্যান কর। স্ক্যান হয়ে গেলে জানিও। যাই ! ”

অনুসিদ্ধান্ত: কখন ও তর্ক করবে না। ওম শান্তি :

 

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়