SAHA ANTAR

Published:
2021-10-04 20:24:15 BdST

জন্মের ৪৩২ ঘণ্টা পর শ্বাস নিল শিশু, বাঁচালেন চিকিৎসকরা


 


অভিরূপ দাস:সংবাদ প্রতিদিন
______________________

জন্মাবধি বুক ভরে দম নেওয়া হয়নি। ফুসফুসটাই যে অকেজো। পূর্ব মেদিনীপুরের (East Midnapore) বাজকুলের ১৮ দিনের শিশুকে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতাল ঘুরছিল পরিবার। কিন্তু সমাধান মিটছিল না। বেসরকারি হাসপাতালে এ অস্ত্রোপচার হাতে গোনা। অসুখটাই যে অত্যন্ত বিরল। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, প্রতি ৩০ হাজারে একজন মাত্র শিশু এহেন ত্রুটিযুক্ত ফুসফুস নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়। যে অসুখে ফুসফুসে হাওয়া ঢোকে। কিন্তু তা আর বেরোতে পারে না। মারণ এ অসুখের নাম, কনজিনিটাল লোবার এমফিসেমা।

 

 

বেসরকারি হাসপাতালে এই অস্ত্রোপচারের খরচ বিপুল। নিম্নবিত্ত ওই পরিবারের পক্ষে তা সামলানো সম্ভব ছিল না। বিধানচন্দ্র রায় (BC Roy Hospital) শিশু হাসপাতালে অবশেষে শাপমুক্তি। ফুসফুসের মিডল লোব বাদ দিয়ে শিশুকে নতুন জীবন দিল বি সি রায় শিশু হাসপাতালের বিশেষজ্ঞদের টিম। সম্পূর্ণ অস্ত্রোপচারে সময় লেগেছে দেড় ঘণ্টা। বিধানচন্দ্র রায় শিশু হাসপাতালের শিশু শল্য বিভাগের চিকিৎসক ডা. সুজয় পাল জানিয়েছেন, ফুসফুসের মূলত তিনটি লোব। ডানদিকে থাকে একটি, বাঁ দিকে থাকে দু’টি লোব। আপার লোব, লোয়ার লোব, মিডল লোবের কোনও একটির কাজ ব্যাহত হলেই ফুসফুসের স্বাভাবিক কাজ বন্ধ হয়ে যায়।


পূর্ব মেদিনীপুরের এই শিশুটির ডানদিকের মাঝখানের অংশটিতে হাওয়া ঢুকছিল। কিন্তু বেরোতে পারছিল না। যার ফলে বেলুনের মতো শুধু ফুলতেই থাকছিল ফুসফুসটি। ডানদিকের অংশটি ক্রমশ বড় হতে হতে বাঁ দিকের অংশটিকে চেপে দিয়েছিল। বেঢপ ফুসফুসের চাপে স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়েছিল হৃদপিণ্ডও। বি সি রায় শিশু হাসপাতালে আনার পর প্রথমে বুকের এক্স রে করা হয়। নিশ্চিত হতে সিটি স্ক্যানও করেন চিকিৎসকরা। প্রয়োজন ছিল দ্রুত অস্ত্রোপচারের।

বিসি রায় হাসপাতালের অস্ত্রোপচার টিমে ছিলেন প্রফেসর বিদ্যুৎ দেবনাথ, শিশু শল্য চিকিৎসক ডা. সুজয় পাল, ডা. এস হালদার, অ্যানাস্থেটিস্ট ডা. ডি মিত্র, ডা. পি বরাই। চিকিৎসাশাস্ত্র বলছে, এ অসুখে বাঁচার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। এমন ত্রুটি নিয়ে জন্মালে একশো জনের মধ্যে পঁচানব্বই শিশুরই মৃত্যু হয়। কিন্তু এখানে মৃত্যুর মাঝে দেওয়াল তুললেন চিকিৎসকরা। বি সি রায় শিশু হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. দিলীপ পাল জানিয়েছেন, “পূর্ব মেদিনীপুরের দরিদ্র ঘরের এই শিশুর পরিবারের পক্ষে বেসরকারি হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব ছিল না। প্রথম যখন শিশুটিকে নিয়ে ওই পরিবার হাসপাতালে আসে, শিশুটির শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সঙ্গীন ছিল। কিন্তু আমরা ঠিক করেছিলাম, যে করেই হোক ওকে নতুন জীবন দেব। সরকারি পরিকাঠামোয় এখন জটিলতর অস্ত্রোপচার হচ্ছে।”

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়