Dr.Liakat Ali

Published:
2021-08-06 19:08:50 BdST

অতিমারীতে চলে গেলেন সকলের প্রিয় ডাক্তার ফরিদা ইয়াসমিন, এক মর্মস্পর্শী শোকগাঁথা


 


ডেস্ক
_____________


অতিমারীতে চলে গেলেন ময়মনসিংহ কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ (সিবিএমসিবি) র চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ডা. ফরিদা ইয়াসমিন। হাজারো রোগী সহ সকলের প্রিয় ডাক্তার ছিলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার ৫ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

সদা হাসিখুশি প্রাণময়ী ডা ফরিদা ইয়াসমিনের প্রয়াণে গভীর শোক ও সহমর্মিতা জানিয়েছেন ডাক্তার প্রতিদিন সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগের প্রফেসর ডা সুলতানা আলগিন।
তিনি বলেন, অকালেই সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন তিনি। শিক্ষার্থীদের প্রিয় ছিলেন তিনি। রোগীদের কাছে ছিলেন স্বজনসম। স্বজনদের কাছে ছিলেন ভরসার নাম।
তাঁর প্রয়াণে একজন মানবিক চক্ষু চিকিৎসক হারালো বাংলাদেশ।

ডা. ইয়াসমিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এ অবস্থায় গতকাল তাঁর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সিবিএমসিবির চক্ষুবিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

 

ডা. ফরিদা ইয়াসমিনের মৃত্যুতে কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করে শোক প্রকাশ করেছেন।

সিবিএমসিবির শিক্ষার্থী মো. তরিকুল ইসলাম এক ফেসবুক পোস্টে লিখেন, আমার দেখা অত্যন্ত ভালো মানুষ ও ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল একজন শিক্ষক ছিলেন। উনার আত্নার মাগফেরাত কামনা করছি।
শিক্ষার্থী সিয়াম শাহনুর লিখেছেন, ‘এই তো কয়েক সপ্তাহ আগেও ম্যাডামের ক্লাস করলাম, ম্যাম কতো যত্ন করে আমাদের পড়ালেন। বলতেন, করোনার মধ্যে বেশি বাসার বাইরে যেও না। ভ্যাকসিন দেয়া হয়ে গেলে কলেজ খুলে দেবে। তোমাদের সাথে আবার সরাসরি ক্লাসে দেখা হবে। আরো কত কিছু। অথচ আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই। তিনি আমার খুব প্রিয় একজন শিক্ষক ছিলেন। ম্যাডামের এই মৃত্যুতে আমাদের অপূরনীয় ক্ষতি হয়ে গেল।’

 

মর্মস্পর্শী শোকগাথা
_______

এ এন এম সোবহান এক লেখায় লিখেছেন,

বিদায় ডা ফরিদা ইয়াসমিন রুনু। করোনার সাথে যুদ্ধ করে পরাস্ত হয়ে তুমিও চলে গেলে আমাদের অশ্রু সিক্ত করে।
সেই ১৯৬৯ সালের দিকে ফরিদপুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি উন্নয়ন সংস্থা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে পরিচয় হয় সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মিসেস রাবেয়া আহমেদ এর সাথে। ১৯৭৫ সালে সাহিত্য ও সংস্কৃতি উন্নয়ন সংস্থার তৃতীয় দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । সেবারই প্রথম আলাওল পুরস্কার প্রদান করা হয়।সে সময় প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অফিস ভবন ছিল না।তোমাদের পুরো পরিবারই ছিল আমাদের সাথে। তোমার মা, আমাদের সকলের খামাম্মা হয়ে গেলেন।প্রথমে তোমাদের ছোট্ট বাসায় সম্মেলন উপলক্ষে প্রতিদিন বিকেলে সঙ্গীতের রিহার্সাল হত।তোমাদের ভাইবোনদের কাজ ছিল চা নাস্তার আয়োজন ও অন্যান্য সাহায্য সহযোগিতা করা।তোমরা হাসি মুখে সবই করতে।অবসর প্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেতাবউদ্দিন আহমেদ নীরবে বসে মহড়া দেখতেন।তুমিও ভালো গান গাইতে পারতে। তোমার গানের চরণ আমি বিস্মৃত হয়েছি।সাধারণত অনেক পুরনো কথা মনে থাকলেও এই গান টি আমি মনে করতে পারিনি।শুধু কানে রণিত হয়েছে ফুল ও বনতল।এই গানটি আর কোনদিন কোথাও আমি শুনিনি।কিন্তু সুরটি আজও আমার কানে বাজে। সুদীর্ঘ বছর পরে ২০১৭ সালে নিউইয়র্কে এসে ফেসবুকে একবারে লিখে গান পোস্ট দেই।
একদিন ভেসে এলো তোমার গাওয়া সেই দেশাত্মবোধক গান টির সুর। কথাও তো বিস্মৃতির আড়ালে। মনে এসেও এলোনা। এভাবেই স্মৃতিও বিস্মৃতে একাকার হয়ে যায়।মহাকালের বুকে কি বা থাকে?
ফুল আর বনতল অনেক ক্ষণ রণিত হল মনে। এক সময় লিখে ফেলি একটি চরণ।
ফুলে ফুলে ভরে গেছে ফুল বন
মৌমাছি এসে করে গুঞ্জরন।
গানটি ফেসবুকে পড়ে পছন্দ করে কলকাতার শিল্পী ও সুরকার সোমা দাস।আমার সাথে যোগাযোগ করে অনুমতি চায় গানটির সুরারোপ করে গাওয়ার জন্য।
এ ভাবে এই গান টির জন্ম ও গীত।
ফুল বন ফুলে ভরে গেলে আনন্দে মন উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠে যদি প্রিয়জন পাশে থাকে।
সেই রিহার্সালে আসত সেদিনের তরুণ চিকিৎসক ডা আমোয়ার হোসেন। তোমার মতো মেধাবী ও সংস্কৃতি মনা মেয়েকে সে ভালো বেসে ফেলছিল।ভালো বাসবারই কথা।তুমি আদর্শ পরিবারের মেয়ে --
আমার আর একটি গান আছে।
আবার সকাল হবে, ফুল ফুটবে, আমি শুধু থাকব না।
এ গান তোমার আমার সকলের জন্যই মহাসত্য।ডা আনোয়ার হোসেন একা হয়ে গেল।
ডা আনোয়ার হোসেনের সাথে তোমাদের বাসায় পরিচয়। আজও সে আমার অন্তরঙ্গ একজন। ইতিমধ্যে তোমার করোনায় আক্রান্ত হবার আগে দুবার আমার সাথে ম্যাসেঞ্জারে কথা বলে।এই তো কদিন আগে তোমার বোন রূপা ফোন করে তোমার জন্য দোয়া চাইল।কথা হল রূপার স্বামী আজাদ খানের সাথে।
রুনু তুমি সংসার পেতেছিলে বরিশালে । যক্ষা নিরোধ সমিতির সম্মেলনে গিয়েছিলাম আমরা কয়েকজন ফরিদপুর থেকে প্রতিনিধি হয়ে। এ কে এম আবদুল হাকিম ভাই আমাকে নিয়ে গেলেন তোমাদের বাসায়। এক দুপুরের খাবার খেতেই হল তোমার হাতের রান্না।
কর্মবীর কেতাব উদ্দিন নেই।তোমার মা একাত্তরের শহীদ সন্তান ইঞ্জিনি য়ারিং ইউনিভার্সিটির মেধাবী ছাত্র বুলবুলের জন প্রায় পাগল হয়ে গিয়ে ছিলেন।খালাম্মা প্রায়ই আমার ঝিল টুলির বাসায় আসতেন আর মনের বেদনা প্রকাশ করে অশ্রসিক্ত হতেন।অত্যন্ত স্নেহ করতেন আমাকে ও আমার স্ত্রী ফিরোজাকে। আজ খালাম্মাও নেই।

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়