Dr.Liakat Ali

Published:
2021-07-26 20:04:15 BdST

গ্রামে গঞ্জে পাড়ায় মহল্লায় হঠাৎ করে বহু লোক মারা যাচ্ছে অজ্ঞাত কারণে ( এই অজ্ঞাত কারণটি হলো অতিমারী)


 

ডাঃ সুকুমার সুর রায়
______________________


★দোরগোড়ায় করোনা আমাদের করনীয়।★
_____________________________________
গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট গুটি গুটি পায়ে সীমান্ত অতিক্রম করে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঢুকে পড়লো। এরপর তা রাজশাহীতে তান্ডব শুরু করে নাটোর হয়ে চলনবিল অতিক্রম করে বেশ কয়েকদিন হলো সিরাজগঞ্জের আনাচে কানাচে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
প্রায় বাড়িতেই মানুষ সামান্য সর্দি, জ্বর, মাথা ব্যাথায় আক্রান্ত হচ্ছে।
কেউই এটাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না কিংবা প্রকাশ করছে না কিংবা চেপে যাচ্ছে। পল্লী চিকিৎসক কিংবা ফার্মাসি থেকে নিজে নিজে ওষুধ কিনে খাচ্ছে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়ানো আন অথারাইজড প্রেস্ক্রিপশন দেখে অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছে। প্রকৃত কথা হলো, এটাই কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে করোনা বা কোভিড-১৯ সংক্রমণ।
মানুষ এটা নানাবিধ কারনে প্রকাশ না করে চেপে যাচ্ছে এবং টেস্ট করতে অনীহা দেখাচ্ছে।

এর ফলে যা হচ্ছে তা হলো দুর্ভাগ্যজনক ভাবে
অতি সম্প্রতি গ্রামে গঞ্জে পাড়ায় মহল্লায় হঠাৎ করে বহু লোক মারা যাচ্ছে অজ্ঞাত কারণে।( এই অজ্ঞাত কারণটি হলো কোভিড)।

এছাড়াও যারা মনে করছে যে এটা কোভিড সংক্রমণ তারাও হাসপাতালে যাচ্ছে শেষ মুহুর্তে এবং চিকিৎসা শুরুর আগেই মারা যাচ্ছে।

বর্তমান এই পরিস্থিতিতে আমাদের করনীয় নির্ধারনে কিছু কথা না বললেই নয়।

আমরা সবাই মোটাদাগে কোভিড ইনফেকশনের লক্ষন গুলি সম্পর্কে জানি।
এগুলি হলো -
জ্বর, সর্দি, কাশি,গলা ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, গায়ে ব্যাথা, অরুচি, নাকের গন্ধ না পাওয়া, দুর্বলতা, পাতলা পায়খানা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি।
এইসব লক্ষনের সবগুলি একসাথে থাকতে হবে এমন নয়।আবার কোন লক্ষন নাও থাকতে পারে।
এই সব লক্ষনের সাথে কোন কো-মর্বিডিটি আছে কিনা তা জানা থাকতে হবে।
( কো-মর্বিডিটিগুলি হলো হাইপ্রেশার,হার্টের অসুখ, ডায়াবেটিস, কিডনির অসুখ, এজমা,ক্যান্সার ইত্যাদি)
কোন কো-মর্বিডিটি থাকলে তা কন্ট্রোলে আছে নাকি আনকন্ট্রোলড তা জানতে হবে।
রোগি যদি মহিলা হয় তাহলে তিনি গর্ভবতী কিনা তা জানা বিশেষ দরকার।

লক্ষন গুলির গুরুত্ব অনুযায়ী আমরা কোভিড ইনফেকশনকে ৩টি শ্রেণিতে ভাগ করে ফেলবো।

১। মাইল্ড বা সামান্য মাত্রার ইনফেকশন।
২। মডারেট বা মাঝারি মাত্রার ইনফেকশন।
৩। সিভিয়ার বা মারাত্মক মাত্রার ইনফেকশন।

১।। মাইল্ড কোভিড ইনফেকশন ঃ (৮০%)
___________________________________
এই ক্ষেত্রে জ্বর কাশি ব্যাথা যাই থাকুক না কেন শ্বাস কষ্ট থাকবে না।
★ শ্বাসকষ্ট নাই তা কীভাবে বোঝা যাবে?
ক) পুর্ন বয়স্ক লোকের বেলায় শ্বাস প্রশ্বাসের গতি মিনিটে ১৮ বারের নীচে থাকবে।
খ) ঘরের ভিতরে ৫ মিনিট হাঁটাহাঁটি করলেও হাঁপিয়ে যাবে না।
গ) পালস অক্সিমিটার দিয়ে মাপলে রক্তের অক্সিজেনের মাত্রা ৯৪ % এর বেশি পাওয়া যাবে৷

২। মডারেট কোভিড ইনফেকশনঃ ( ১৫%)
__________________________________
★ সামান্য শ্বাসকষ্ট থাকবে। ★ পুর্ন বয়স্ক লোকের ক্ষেত্রে শ্বাসের গতি মিনিটে ১৮ বারের বেশি হবে।
★ ঘরের ভিতরে ৫ মিনিট হাঁটলেই হাঁপিয়ে যাবে।
★ পালস অক্সিমিটারে অক্সিজেনের মাত্রা ৯০ থেকে ৯৩% এর মধ্যে থাকবে।

৩। সিভিয়ার কোভিড ইনফেকশনঃ ( ৫%)
_________________________________
★ তীব্র শ্বাসকষ্ট।
★শ্বাসের গতি মিনিটে ৩০ বারের অধিক।
★ পালস অক্সিমিটারে অক্সিজেনের মাত্রা ৯০% এর নীচে নেমে যাবে।

কাদের দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে?
______________________________
১। মডারেট কোভিড ইনফেকশন যাদের।
২। সিভিয়ার কোভিড ইনফেকশন যাদের।
৩। মাইল্ড কোভিড সাথে আনকন্ট্রোল্ড কো- মর্বিডিটি আছে।
৪। মাইল্ড কোভিড কিন্তু গর্ভবতী মহিলা।

বাড়িতে থাকবে কারা?
__________________
যাদের মাইল্ড ইনফেকশন এবং শ্বাস কষ্টের কোন লক্ষন নাই।
★ বাড়িতে আইসোলেশনে থাকতে হবে।
★ চিকিৎসা ঃ লক্ষন অনুযায়ী ওষুধ চলবে - যেমন জ্বর, ব্যাথা, থাকলে প্যারাসিটামল, সর্দি কাশি থাকলে এন্টিহিস্টামিন ইত্যাদি । কিন্তু কোন এন্টিবায়োটিক এবং একগাদা অপ্রয়োজনীয় ওষুধের প্রয়োজন নাই।
★ শ্বাসকষ্ট ও অন্য কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা তা মনিটর করতে হবে।
★ পুষ্টিকর খাবার ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে।
★ বাড়িতে একটি পালস অক্সিমিটার থাকলে ভালো হয়।
★ কোভিড টেস্ট করতে হবে এবং নিকটবর্তী উপজেলা স্বাস্থ্য কম্পলেক্সের ডাক্তারের পরামর্শ মতো চলতে হবে।

প্রতিরোধের উপায় ঃ
__________________
★ লকডাউন মেনে বাড়িতে থাকতে হবে।
★ খুব প্রয়োজনে বাইরে যাওয়া লাগলে যথাযথ ভাবে মাস্ক পরতে হবে।
★ মনে রাখবেন - করোনা ভাইরাস নিশ্বাসের সাথে নাক মুখ দিয়ে সরাসরি ফুসফুসে প্রবেশ করে। তাই নাকের নীচে থুতনিতে মাস্ক ঝুলিয়ে কোন লাভ নাই।
★ ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলুন।
★ কাশেম বিলে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
★ যেকোন ধরনের সমাবেশ পরিহার করুন।
★ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব টিকা নিন।

সবাই সচেতন ও সতর্ক থাকলে আগামী এক মাসের মধ্যে মহামারির বর্তমান উর্ধমুখি ঢেউ অনেকটা কমে আসবে বলে আশা করা যায়।

সবাই সুস্থ থাকুন, নিরাপদ থাকুন।।

ডাঃ সুকুমার সুর রায়।।

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়