ডেস্ক

Published:
2021-06-30 16:28:15 BdST

প্রতিশ্রুত সংক্রমন ব্যাধি ঝুঁকি ভাতা এখনো পান নি ডাক্তার ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা


ডা. আজাদ হাসান

_____________________

"সংক্রমন ব্যাধি ঝুঁকি ভাতা"।।

করোনা সংক্রমনের এক বছর পার হলেও চিকিৎসক এবং নার্সসহ স্বাস্থ্য কর্মীরা এখনো তাদের প্রতিশ্রুত "ঝুঁকি ভাতা" পান নি!

কোভিড অতিমারীতে চিকিৎসক এবং নার্সসহ সকল স্বাস্থ্য কর্মীদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে সরকার বিভিন্ন সেক্টরে "প্রণেদনা" প্রদানের সিদ্ধান্ত নেন এবং ঘোষণা দেন। সেই মোতাবেক চিকিৎসক এবং নার্সসহ সকল স্বাস্থ্য কর্মীদেরকেও এর আওতাভুক্ত করা হয়। যদিও বিষয়টি "প্রণোদনা" বলার চেয়ে "ইনফেকশাস ডিজিজ রিস্ক এলাউন্স" বা " সংক্রামক ব্যাধি ঝুঁকি ভাতা" বলাই অধিকতর যুক্তিযুক্ত বলে আমি মনে করি।

কিছুদিন পূর্বে সরকারের উচ্চ মহল অর্থাৎ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে “কোভিড-১৯ চিকিৎসায় যারা সরাসরি জড়িত” তাদের নামের তালিকা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এই “সরাসরি জড়িত” বলতে সরকার কি বোঝাতে চেয়েছে তা এখনো সুস্পষ্ট নয়। তাই বিষয়টি ব্যাখা বা আলোচনার অবকাশ রাখে।

অনেকে “কোভিড-১৯ চিকিৎসায় যারা সরাসরি জড়িত” বলতে কেবল মাত্র “কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতাল”-এ কর্মরত চিকিৎসক এবং নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীদের বুঝিয়েছে বলে ব্যাখ্যা করছেন। কিন্তু সেটা করলে স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরাট একটি অংশ বর্তমান কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধের ফ্রন্ট লাইন যোদ্ধারা এই "ঝুঁকি ভাতা" পাওয়ার সুবিধা হতে বঞ্চিত হবে। সুতরাং বিষয়গুলো আরো সূক্ষ্ম ভাবে বিবেচণা করতে হবে।

স্বাস্থ্যসেবা একটি "টীম ওয়ার্ক" বা "দলগত কাজ"। উপজেলা পর্যায়ে ইউএইচএফপিও-র নেতৃত্বে এবং জেলা পর্যায় সিভিল সার্জন সাহেবদের নেতৃত্বে মাঠ পর্যায়ের চিকিৎসক এবং ক্ষেত্র বিশেষে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে, এমন কি কোথাও কোথাও ল্যাবরেটরী টেকনি - শিয়ানদের মাধ্যমে সন্দেহভাজন ব্যক্তির এবং করোনা রোগীর কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এই যে করোনা রোগী সনাক্তকরণের জন্য "সাসপেক্টেড" বা "সন্দেহ ভাজন ব্যক্তি"র কাছ থেকে "থ্রট শোয়াব কালেকশান" বা "নমুনা সংগ্রহের কাজ" এটাও স্বাস্থ্য - ঝুঁকিপূর্ণ। আর একটি বিষয় লক্ষণীয় সেটা হলো, করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের বাহিরেও কর্মরত অনেক চিকিৎসক তাঁদের স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করতে যেয়ে নিজেরাও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, এমন কি তাঁদের দ্বারা তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও সংক্রামিত হয়েছেন।
সুতরাং এই সব স্বাস্থ্যকর্মীরাও প্রণোদনা প্রাপ্য।

তাছাড়া কমিউনিটি স্প্রেডের কারণে উপজেলা হাসপাতাল এবং জেলা হাসপাতালে অশনাক্তকৃত রোগী এবং লক্ষণ বা উপসর্গ বিহীন রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেক চিকিৎসক, নার্স, ল্যাব টেকনিশিয়ানসহ অনেক স্বাস্থ্য কর্মীরাও আক্রান্ত হয়েছেন।

তাছাড়া বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং জেলা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগ, মেডিসিন, সার্জারী, গাইনী এন্ড অবস্, আইসিইউ, রেডিওলজি বিভাগে ডিউটি করতে গিয়েও অনেক চিকিৎসক এবং নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীরা সরাসরি করোনা আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে আসায় করোনা সংক্রমনের শিকার হয়েছেন।

সুতরাং চিকিৎসক কিংবা স্বাস্থ্য কর্মীদের ঝুঁকি ভাতার বিষয়টি কেবল মাত্র "করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে" কর্মরত চিকিৎসক এবং নার্সসহ সকল স্বাস্থ্য কর্মীদের মাঝে কনফাইন্ড বা সীমাবদ্ধ রাখা কোনক্রমেই যুক্তি যুক্ত নয় এবং সেটা কাম্য নয়।

সুতরাং করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের বাহিরেও করেনা রোগীর চিকিৎসা দিতে যেয়ে বা স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করতে যেয়ে কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন সুতরাং এ জন্য ওনারা সবাই "ইফেশাস ঝুঁকি ভাতা" প্রাপ্য বলে আমি মনে করি।

সুতরাং স্বাস্থ্য খাতে করোনার জন্য "ঝুঁকি ভাতা" দেয়ার জন্য কেবল মাত্র কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালই নয় বরং সমগ্র স্বাস্থ্য খাতের সকল চিকিৎসক এবং নার্স ও টেকনিশিয়ানসহ সকল স্বাস্থ্য কর্মীদের এর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।।

তবে এক্ষেত্রে সরকার একটি কাজ করতে পারেন, আর সেটা হলো যার যার জবের ধরণ অনুযায়ী ক্যাটাগরিক্যালি ঝুঁকি ভাতার হার নির্ধারণ করে দিতে পারেন। যেমন
(১) হাই রিস্ক গ্রুপঃ যারা রোগীর চিকিৎসার সাথে সরাসরি জড়িত।
~ আইসিইউতে কর্মরত চিকিৎসক (মেডিসিন স্পেশালিষ্ট, এনেস্থিসিয়া স্পেশালিষ্ট, ইন্টার্নাল মেডিসিন স্পেশালিষ্ট, রেসিডেন্স ফিজিশিয়ান, সার্জিক্যাল এবং গাইনী-অবস স্পেশালিষ্ট), নার্স, অন্যান্য স্টাফ। ওনাদের রিস্ক এলাউন্স স্ব স্ব বেসিক স্যালারীর ১০০% হওয়া উচিৎ।
(২) মিডিয়াম রিস্ক গ্রুপঃ যারা উপরের গ্রুপের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিতে আছেন।
~ প্যাথলজি/মাইক্রোবায়লজি স্পেশালিষ্ট, রেডিওলজিস্ট এবং সনোলজিস্ট, রেডিওগ্রাফার ইত্যাদি। ওনাদের ক্ষেত্রে রিস্ক এলাউন্স স্ব স্ব বেসিক স্যালারীর ৮০% হওয়া উচিৎ।
(৩) লো রিস্ক গ্রুপঃ উপরে উল্লেখিত গ্রুপের বাহিরে কর্মরত সকল ক্লিনিক্যাল স্টাফ। ওনাদের ক্ষেত্রে রিস্ক এলাউন্স স্ব স্ব বেসিক সেলারির ৬০% হওয়া উচিৎ, বলে আমি মনে করি।

আর একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো করোনা প্যান্ডেমিক পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক -কে স্ব স্ব বেতন স্কেল এবং কর্ম ক্ষেত্রের ঝুঁকির উপর নির্ভর করে মাসিক বেতনের সাথে আনুপাতিক হারে এই "ঝুঁকি ভাতা" প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

ডা. আজাদ হাসান
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ-২১তম ব্যাচ

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়