ডেস্ক

Published:
2021-04-18 13:58:35 BdST

অধ্যাপক ডা আবু আহমেদ আশরাফ আলী নেই


ডা. আহমেদ আশরাফ আলী। ছবি অধ্যাপক ডা মোজাহেরুল হকের সৌজন্যে পাওয়া 

 


ডেস্ক
-----------------

অধ্যাপক  ডা আবু আহমেদ আশরাফ আলী নেই।
অধ্যাপক ডা মোজাহেরুল হক জানান, অধ্যাপক আশরাফ আলী আমার ব্যক্তিগত অনুজ সম বন্ধুবর চিকিৎসক ছিলেন। আমি মর্মাহত বিমূঢ় । রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ১৯৯০ এ একসাথে কাজ করেছি । কোভিড তাকে কেড়ে নিল।

ডাক্তার প্রতিদিন সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগের প্রফেসর ডা সুলতানা আলগিন এক শোক এপিটাফ এ জানান, অধ্যাপক
আশরাফ আলী খুব অমায়িক বন্ধুবৎসল মানুষ ছিলেন। লোক সেবী চিকিৎসক হিসেবে ছিলেন অনন্য অসাধারণ। এই মহাপ্রাণ ব্যাক্তির মৃত্যুতে আমরা শোকাভিভূত। বাংলাদেশ একজন সময়ের সেরা মানুষকে হারাল। রোগী সেবায় গভীর শূন্যতা সৃষ্টি হল।

ডা মাহবুবা রহমান লিখেছেন, প্রফেসর আবু আহমেদ আশরাফ আলী। সার্জারী জগতের এই লিজেন্ড মানুষটা দীর্ঘদিন ঢাকা মেডিকেলের সার্জারী বিভাগের অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন। রিটায়ারমেন্টের পর জয়েন করেছিলেন ঢাকার আদ্ব-দীন মেডিকেল কলেজে। দ্বায়িত্ব নেন কলেজের প্রিন্সিপাল এবং সার্জারী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে৷ একদম নতুন এই মেডিকেল কলেজটাকে নিজের সন্তানের মত তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন এই অসাধারন মানুষটা। চলনে বলনে ছিলেন একজন পুরোদস্তুর "Fatherly figure." তাইতো ওনাকে আমি আর Taskeen Sadia বলতাম, আমাদের "আব্বু স্যার"!

আমাদের সেই আব্বু স্যারের হাতে জাদু ছিল। আমার মনে আছে ইন্টার্নশিপের সময় আমি সবচেয়ে বেশি ভয় পেতাম স্যারের সাথে কোন ওটিতে দাঁড়াতে। কারন এই নিখুঁত কাজের মানুষটার সামনে যদি কোন ভুল হয়ে যায়!

রাশভারী এই মানুষটা ছিলেন খুবই আনপ্রেডিক্টেবল। মনে আছে, একবার একটা লাম্পে ইন্সিশন দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, 'নাও এইবার এটা বের করবা তুমি। আজকে এটা তোমার ওটি!' এবং সত্যি সত্যিই স্যার ওই ওটি থেকে বের হয়ে পাশের ওটিতে চলে গেলেন। আমি লাম্প বের করলাম, ইন্সিশন দেয়া শুরু করলাম। ওদিকে আমাকে এসিস্ট করতে থাকা সিস্টার চরম বিরক্ত হচ্ছিলেন। কারন ইন্সিশন দিতে আমার অনেক সময় লাগছিল। কিন্তু স্যার একবারো এসে আমার কাজে দখল দেননি। বরং এক দুইবার এসে উকি দিয়ে হেসে বলে গেছেন, " কি অবস্থা? কতদূর??"

কাজপাগল স্যার কখনো লম্বা সময়ের জন্য ছুটি নিতে দেখিনি। ছুটি নিলেও একদিন পরেই হয়ত চলে আসতেন, এসে বলতেন " ভাল্লাগেনা। আমি সার্জারী ছাড়া থাকতে পারিনা..."

আমাদের সেই স্যার, আমাদের বটবৃক্ষ, আমাদের ছেড়ে আজ চলে গেছেন। আমি খবরটা পেয়েছিলাম রাত দশটার পর। নিউজফিড জুড়ে কলেজের সবার স্ট্যাটাস। আমি আস্তে করে ফেসবুকটা বন্ধ করে ঘুমিয়ে যাই। আমি চাইনি এই খবরটা বিশ্বাস করতে কিংবা আমি চাইনি আমার হাতে স্যারের মৃত্যুর খবর লিখতে..

নিজেকে খুব স্বার্থপর মনে হচ্ছিল। কলেজ ছেড়েছি আরো ৫ বছর আগে। এই ৫ বছরে কি একবারো স্যারের খোজ নিয়েছি? যে যার জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। স্যার নাকি হজকিন্স লিম্ফোমায় ভুগছিলেন৷ আমি সেটাও জানতাম না। দীর্ঘদিন হজকিন্স ভুগে আজ চলে গেলেন কোভিড কম্পলিকেশনে...

আমি খুব শক্ত মনের মেয়ে৷ সহজে কান্না আসেনা। জীবনে যাই ঘটে 'বাস্তবতা' বলে মেনে নেই। কিন্তু আজ আমি কেদেছি। বারবার শুধু মনে হচ্ছিল ৫ বছর আগে যখন স্যারের পাশে দাঁড়িয়ে ওটি এসিস্ট করেছি, একবারো কি ভেবেছিলাম আজ থেকে ৫ বছর পর আর এই মানুষটা থাকবেন না?? যদি জানতাম, তবে সত্যিই স্যারকে বলে আসতাম, "স্যার আমাদের ছেড়ে যাবেন না। আপনাকে অনেক ভালবাসি স্যার! আমরা হয়ত আপনার আশেপাশে আর থাকব না কিছুদিন পর, কিন্তু আপনি তো আজীবন আমাদের স্যার হয়ে থাকবেন, পৃথিবীর যেখানেই থাকেন না কেন! "

 

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়