SAHA ANTAR

Published:
2021-03-17 01:51:35 BdST

টিকা নেয়ার পরও করোনায় আক্রান্ত??!  নেপথ্যের রহস্য 


ফাইল প্রতীক ছবি 

 

ডা মাসুদ আহমেদ 
-----------------------------
ইদানিং প্রায়ই গণমাধ্যমে খবর আসছে যে - "জনাব 'অমুক' টিকা নেবার কয়েকদিন পরই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন"। এর পেছনের কার্যকারণ সম্পর্কে বিজ্ঞ সাংবাদিক ভাইয়েরা সেখানে কিছুই উল্লেখ করেন না। তার ফলে সাধারণ মানুষের কাছে যে বার্তাটা পৌঁছায়, সেটা হচ্ছে - "করোনার টিকা কোনো কাজ করে না"। তাই - শুধু শুধু টিকা নিয়ে কেন 'ঝামেলা' ডেকে আনবো? এভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করে পুরো জাতির স্বাস্থ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলা আমার মতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। টিকা দেবার পরও কোনো ব্যক্তি ঠিক কি কি কারণে কোভিড ১৯ রোগে আক্রান্ত হতে পারে সেটা সাধারণ মানুষকে জানানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব........

বাংলাদেশের মানুষ Oxford-AstraZeneca (বৃটিশ+সুইডিশ) কোম্পানির আবিস্কৃত কোভিড ১৯ এর ভ্যাক্সিন 'কোভিশিল্ড' টিকা হিসেবে নিচ্ছে - যা তৈরি হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভ্যাক্সিন তৈরিকারি প্রতিষ্ঠান ভারতের পুনে- র 'সিরাম ইন্সটিটিউটে'। উৎপাদনের তারিখ থেকে ছয় মাস আয়ুসম্পন্ন এই ভ্যাক্সিন অন্যান্য ভ্যাক্সিনের তুলনায় বেশ মূল্য সাশ্রয়ী এবং এটা ২°- ৮° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সংরক্ষণ/পরিবহন করতে হয়। এই ভ্যাক্সিন নতুন ইউ,কে স্ট্রেইনের উপর একই রকম কার্যকরী আর সাউথ আফ্রিকান এবং ব্রাজিলিয়ান স্ট্রেইনের উপর এর কার্যকরীতা কতটুকু সেটা নিয়ে গবেষণা চলমান।

কোভিশিল্ড ভ্যাক্সিনের দুটি ডোজ। প্রথম ডোজ দেবার সর্বোচ্চ তিন সপ্তাহ পরে টিকা গ্রহনকারি ৭৬% মানুষের মধ্যে প্রয়োজনীয় এন্টিবডি (ইম্যুনিটি) তৈরি হয়। অর্থাৎ টিকা নেবার পর প্রথম তিন সপ্তাহে যে কেউ এবং তিন সপ্তাহ পর (১০০-৭৬)= ২৪% ব্যক্তি কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত হতে পারেন।

এখন পর্যন্ত করা অধিকাংশ গবেষণা বলছে ১২ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া উত্তম। বাংলাদেশেও সম্ভবত এই পদ্ধতি গ্রহন করা হবে। ১২ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেবার আরো ০৪ সপ্তাহ পর - সর্বোচ্চ এক বছরের (?) জন্য আরো শক্তিশালী ইম্যুনিটি তৈরি হয় ৮২.৪% মানুষের মধ্যে। অর্থাৎ পূর্ণ ডোজ নেবার পরও (১০০-৮২)=১৮% মানুষ কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত হতে পারেন।
তাহলে কি এই ভ্যাক্সিন ভালো না?
আমেরিকান FDA এর হিসেবে - যে ভ্যাক্সিন কমপক্ষে ৫০% মানুষকে ইম্যুনিটি দেবে সেটাই কার্যকরী ভ্যাক্সিন এবং ইউ,এস,এ - তে ব্যাবহার উপযোগী।
তাহলে এই ১৮% মানুষ কি কখনোই নিরাপদ নয়? - নিরাপদ। কারণ ৮২% মানুষের ইম্যুনিটি তৈরি হলে সেটা হয়ে যাবে হার্ড (herd) ইম্যুনিটি যা করোনা সংক্রমণের চেইন ভেঙে দেবে এবং করোনাকে নির্বংশ করবে। অন্যথায় সম্ভবত এক বছর পর আমাদের আবার এই টিকা নিতে হবে।

করোনার দুই ডোজ টিকা নেবার পর মাস্ক কেন পরবো? - কারণ আপনি ১৮% এর একজন হতে পারেন - যাদের শরীরে টিকা দেবার পরও ইম্যুনিটি তৈরি হয়নি। যদি হয়ও তবু মাস্ক পরতে হবে - কারণ আপনার শরীরে ইম্যুনিটির জন্য করোনা সুবিধা করতে না পেরে কিছুদিন দূর্বল হয়ে চুপচাপ ঘুমিয়ে থাকতে পারে, যে সময়ে আপনার থেকে ইম্যুনিটিবিহীন কারো শরীরে তা প্রবেশ করতে পারে।

তাতে আপনার কি ক্ষতি? - সেই মানুষটা আপনার কাছের কেউ হতে পারে। আর করোনা এভাবে ছড়ানোর সুযোগ পেলে অথবা জামাই আদর পেলে 'শ্বশুর বাড়ি' (পৃথিবী) ছেড়ে আর যাবেনা। কোভিড ১৯ এর ঢেউয়ের পর ঢেউ চলতেই থাকবে। প্রতি বছর আমাকে, আপনাকে এই ভ্যাক্সিন নিতে হবে। ছেলেমেয়েদের স্কুল/কলেজ খুলবে না। দেশবিদেশে বউ বাচ্চা নিয়ে ঘুরতে যেতে পারবো না। কব্জি ডুবিয়ে কেউই বিয়ে বাড়িতে কাচ্চি বিরিয়ানী খেতে পারবো না....

তাই টিকার উপর আস্থা রাখুন এবং ধৈর্য ধরুন। নিজে টিকা নিন, অন্যকে টিকা নিতে উৎসাহিত করুন এবং পৃথিবী থেকে করোনার পরিপূর্ণ বিদায়ের আগে বা টার্গেট জনগোষ্ঠীর (৮০-৯০%) ইম্যুনিটি অর্জন না করা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। সেটাই এখন পর্যন্ত আমাদের সামনে একমাত্র আশার আলো.......
Courtesy: Masud Ahmed

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়