Dr. Aminul Islam

Published:
2021-01-19 02:10:40 BdST

করোনার টিকা শুরু : পশ্চিম বাংলায় যে সব বিচিত্র রসময় কান্ড ঘটছে


 

ডেস্ক / সংবাদ সংস্থা
________________________

করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে ওপার বাংলা পশ্চিম বাংলায় । সেখানে টিকা দেয়া নেয়া নিয়ে নানারকম রসময় কান্ড ঘটছে ।
করোনার টিকা প্রাপকদের প্রথম একশো জনের তালিকা তৈরি করতে গিয়ে কার্যত নাকানিচোবানি খেতে হয়েছে জেলার সব হাসপাতালের সুপার ও বিএমওএইচদের। শেষ পর্যন্ত তালিকা তৈরি করা গেলেও টিকা নেওয়ার জন্য দেখা মেলেনি অনেকেরই। ফলে টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও পূরণ সম্ভব হয়নি নদিয়ায়।

শনিবার ১০টি কেন্দ্রে ১০০ জন করে মোট ১০০০ জনকে টিকা দেওয়ার কথা ছিল নদিয়ায়। কিন্তু নিয়েছেন মাত্র ৪৯৩ জন। অর্থাৎ টিকা নেওয়ার হার সাকূল্যে ৪৯ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি প্রাপক ছিলেন করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখানে ৮০ জন টিকা নিয়েছেন। আর বিষ্ণুপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সবচেয়ে কম মাত্র ১৯ জন টিকা নিলেন।

সরকারি নির্দেশ ছিল, যাঁরা স্বেচ্ছায় টিকা নিতে চাইবেন একমাত্র তাঁদেরই দিতে হবে। কাউকে জোর করা যাবে না। শেষ পর্যন্ত এত কম সংখ্যক লোক টিকা নেওয়ায় কার্যত হতাশ স্বাস্থ্যকর্তারা। তাঁরা জানিয়েছেন, শুক্রবার ভ্যাকসিন প্রক্রিয়ায় জন্য নির্দিষ্ট কোউইন ওয়েবসাইটে ভ্যাকসিন প্রাপকদের নাম আপলোড করতে সমস্যা হচ্ছিল। তা ঠিক করতে অনেক সময় নষ্ট হয়। তার পর অনেকেই ভয় ও আশঙ্কায় পিছিয়ে যান। অনেকেরই মনোভাব ছিল, আগে অন্যদের কোনও প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা দেখে তবে তাঁরা টিকা নেবেন। ফলে প্রথম দফায় লোক কম হয়।

মুর্শিদাবাদে যা ঘটল
___________________________

শনিবার মুর্শিদাবাদের এক হাজার জনের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী প্রতিষেধক নিয়েছেন। রবিবার তাঁদের শরীরে কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি বলেই দাবি মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের অধক্ষ্য শর্মিলা মল্লিকের। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জেলার মহকুমা ও ব্লক হাসপাতাল সহ মোট ১৩টি কেন্দ্র থেকে ১১৯৪ জনকে করোনা প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু ১৩০০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রথমদিন করোনা প্রতিষেধক দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে দাবি করা হয় শারীরিক অসুস্থতা ও ব্যক্তিগত কারণে প্রতিষেধক নিতে পারেননি ১০৬জন। যদিও সমন্বয়ের অভাবেই প্রথম দিনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায় নি বলে দাবি চিকিৎসক সংগঠন আইএমএর। সংগঠনের বহরমপুর শাখার সম্পাদক রঞ্জন ভট্টাচার্য এদিন বলেন, ‘‘সরাসরি আমাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা হয়নি। শনিবার চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মী জেলায় কম থাকেন। তাঁদের মধ্যে বর্ষীয়ান চিকিৎসকও আছেন। যাঁরা প্রতিষেধক না পেয়ে উৎকন্ঠায় ভুগছেন। সে কথা চিকিৎসক আধিকারিকদের জানা উচিত ছিল।” তবে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘কয়েক জনের ড্রাগ অ্যালার্জি ছিল, দুএক জনের ঠান্ডা লেগেছিল। আর বাকিরা কেন আসেননি তা আমাদের জানাননি।’’ যাঁরা আসেননি তাঁদের নাম স্বাস্থ্য ভবন থেকে ফের পাঠানো হলে তারা প্রতিষেধক নেওয়ার সুযোগ পাবেন বলে জানান ওই আধিকারিক।

ব্যারাকপুর পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান

প্রতিষেধকে অগ্রাধিকার করোনা যোদ্ধাদের। ন’মাস ধরে যাঁরা করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, প্রথমে তাঁদেরই দেওয়া হবে বলে ঘোষণা হয়েছিল। অতএব প্রথম তালিকায় জনপ্রতিনিধির নাম থাকার কথা নয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছিল, ঘোষণার তোয়াক্কা না করে প্রথম দিনেই রাজ্য জুড়ে বেশ কয়েক জন জনপ্রতিনিধি প্রতিষেধক নিয়েছেন। 

এ বার সেই তালিকায় নাম উঠে এসেছে ব্যারাকপুর পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান উত্তম দাসের। শনিবার ব্যারাকপুর বিএন বসু হাসপাতালে গিয়ে প্রতিষেধক নিয়েছেন তিনি। এই নিয়ে যেমন বিরোধীরা কটাক্ষ করেছেন, তেমনই ক্ষুব্ধ প্রথম সারির করোনা যোদ্ধাদের অনেকে। উত্তমবাবুর দাবি, জনপ্রতিনিধি বলে তাঁদের নাম তালিকায় রয়েছে। তাঁর দাবি, চিঠি দিয়ে তাঁকে প্রতিষেধক নিতে ডাকা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সরকারি নির্দেশ মেনে রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য হিসেবে তাঁর নাম রাখা হয়েছে। যদিও এতে বিতর্ক থামছে না। 

শনিবার প্রথম দফায় কেবল চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতিষেধক নেওয়ার কথা জানিয়েছিল কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। যে কয়েক জন জনপ্রতিনিধি শনিবার প্রতিষেধক নিয়েছেন উত্তমবাবু তাঁদেরই এক জন। ওই দিন দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে তিনি প্রতিষেধক নেন। তার ভিডিয়ো ফুটেজ রবিবার সামনে আসতেই উত্তমবাবু প্রতিষেধক নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, শনিবার প্রতিষেধক নিয়েছেন তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া বিধায়ক শীলভদ্র দত্তও। এ নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য হিসেবে  আমার নাম রয়েছে। তাই প্রতিষেধক নিয়েছি।

 

যা ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদে

করোনার টিকা দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু হল সরকারি হাসপাতালের এক কর্মীর। ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদে। যদিও মৃত্যুর সঙ্গে টিকাকরণের কোনও সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছে মোরাবাদাবাদ জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

শনিবার দুপুরে করোনার টিকা নিয়েছিলেন হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়, বছর ছেচল্লিশের মহীপাল সিংহ। তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার আচমকাই বুকে চাপ এবং শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন তিনি। আগে থেকে মহীপাল নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন বলেও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। এর পর তাঁর মৃত্যু হয়। মোরাদাবাদের চিফ মেডিক্যাল অফিসার এমসি গর্গ বলেন, ‘‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। তবে দেখে মনে হচ্ছে, টিকাকরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মৃত্যু হয়নি। মহীপাল শনিবার নাইট ডিউটি করেছেন। তখন তাঁর কোনও সমস্যা ছিল না।’’

ময়নাতদন্ত রিপোর্টে জানা গিয়েছে, মৃত্যুর প্রাথমিক কারণ, কার্ডিওজেনিক শক বা সেপ্টিসেমিক শক। মহীপালের ছেলে বিশাল বলেন, ‘‘আমার বাবার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। আগে থেকেই তিনি নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন। সর্দিও হয়েছিল। এর পর করোনা টিকা নেন তিনি। বাড়ি ফেরার পরেই তাঁর অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে।’’

সংবাদ তথ্য ও ছবির সৌজন্য আনন্দবাজার পত্রিকা

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়