SAHA ANTAR

Published:
2020-12-23 14:02:29 BdST

ইনফেকশনের পর ডা মুরাদ খুব দুশ্চিন্তা করতেন, তাঁর সন্তানদের কি হবে!


আমি কাঁদতে চাইনা তবুও আমার কেন এত কান্না আসে? কারন মুরাদ ভাইয়ের মাঝে আমি নিজেকে দেখতে পাই। না দেখে না শুনেও যে ভালবাসা যায় আজ হাতেনাতে তার প্রমাণ পেলাম। শোক এপিটাফ লিখেছেন ডা আরাদ উর রহমান 

________________

 

শোকগাঁথা
========
ডাঃ মোহাম্মদ হাসান মুরাদ। ৩৫ তম ব‍্যাচ , চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ। আমার স্ত্রীর সহকর্মী, চট্টগ্রাম মেডিকেল আর টি পিসিআর ল‍্যাবে কাজ করতেন। স্ত্রীর মুখে অনেক নাম শুনেছি। দুটো সন্তান, ছোট। প্রায়শই বাচ্চাদের কথা বলতেন, ওনাকে ছাড়া থাকতে চায়না, খেতে চায়না। নিজেই বাচ্চাদের সব কিছু ম‍্যানেজ করতেন। সহধর্মিণীর রাতে ভাল ঘুম হত না বলে সকালে বাচ্চাদের তৈরি করে স্কুলে দিয়ে নিজেই কাজে চলে আসতেন। অত‍্যন্ত সহজ সরল, বন্ধু সুলভ অমায়িক মানুষ। উষ্ণ শরীরে দেখা হয়নি। আজ দেখা করতে এলাম শীতল মুরাদ ভাইয়ের সাথে। কথা বলতে চাইলাম কিন্তু তিনি নারাজ। গত দুই সপ্তাহ ধরে কোভিডের সাথে যুদ্ধ করে এইচ ডি ইউ এর ধকল আর নিতে চাইলেন না। হাল ছেড়ে দিলেন। ইনফেকশনের পর রাতে ঘুমাতে পারতেন না, উঠে উঠে বসে থাকতেন বাচ্চাদের কী হবে চিন্তায় চিন্তায়। আজ সেই সন্তান ছেড়ে কতইনা নিশ্চিত।

আমারও দুটো সন্তান ছোট, ৫ বছর,২ বছর। গত ৭ মাস ধরে দূরে ঠেলে রেখেছি বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা মার কাছে। ছোটটা তখনো দুধ ছাড়েনি ১ বছর ৬মাস। আসে পাশের আত্মীয় স্বজন সবাই বলে তোরা কত পাষান! হ‍্যাঁ ভাই আমরা পাষান বলেই আপনারা সন্তান বুকে নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমান। আজ বড় পাষান চলে গেলেন সন্তানদের চিরজীবনের জন্য দূরে ঠেলে দিয়ে। যাদের চিন্তায় ঘুম হত না তাদের দুই সপ্তাহ না দেখেই চলে গেলেন। ভয় হয় না জানি  স্রষ্টার  কী ইচ্ছে। সেই ইচ্ছেতে আত্মসমর্পণ করে আবারও ডিউটিতে যাব।

বন্ধু মহলে কেউ কেউ বলে শালারা কোভিড ডিউটি কি এমনি এমনি কর? টেকা পাওনা? সেই টাকার আশায় কয়েকজন নিজ খরচে হোটেলে থেকে লাখ টাকা পকেট থেকে দিয়ে এসেছে। ডাক্তারদের মধ্যে করোনায় মৃত্যু বরনকারী একজন মাত্র সরকার ঘোষিত প্রণোদনা পেয়েছেন। আর যে গণপ্রণোদনার কথা শুনেছি তা প্রথম ঢেউ থেকে দ্বিতীয় ঢেউতে ঠেকেছে এরপর কোন ঢেউয়ে যাবে কে জানে? আমরা টাকা চাই না, কারন যেকয় টাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার থেকে অধিক অর্থের মাস্ক আমার কেনা হয়ে গেছে। দয়া করে কি দিবেন না দিবেন বারবার তার পরিপত্র জারি করে জাতির সামনে আমাদের ছোট করবেন না। আর যারা বিভিন্ন সভায় বলে বেড়াচ্ছেন ডাক্তাররা ভয় পেয়েছিল ,ভয় আপনারা পেয়েছেন পাছে আপনাদের আপ‍্যায়ন বিল বন্ধ হয়ে যায়। দোষ আমাদের যারা এ‍্যাডমিনিস্ট্রেশনে আছেন। তারা চেয়ার আকড়ে ধরার জন্যে অধীনস্তদের বঞ্চিত করে সরকারকে অতিরিক্ত খুশী করতে চায়। কিন্তু এভাবে যে চেয়ার ধরে রাখা যায়না তার প্রমাণ আমাদের সামনেই আছে। যাদের জন্য চেয়ার তাদের জন্য কাজ করেন, চেয়ার আপনাকে ধরে রাখবে।
কিছুদিন আগে একটি প্রতিষ্ঠান রাষ্টীয় কোষাগারে বিদেশ যাত্রীদের কোভিড টেষ্টের কোটি কোটি টাকা জমা করেছেন বলে সরকারের সুনজরে আসার চেষ্টা করছেন। কিন্তু যেই মুরাদ ভাইয়ের কাঁধে ভর করে কোটি টাকা জমা করেছেন। তার জন্য কী করেছেন প্রশ্ন করতে পারি কি? উত্তর আমাদের দিতে হবে না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে উত্তর দিন। এখন আপনারা যাই করেন শোকসভা করেন, ব‍্যানার টানান ,আর্থিক সহায়তা করেন কিন্তু ছোট্ট দুই শিশুর বাবাকে তো আর ফিরিয়ে দিতে পারবেননা। মুরাদ ভাই আমার কেউ হয়না তবুও কেন আমার এত আপন লাগে? আমি কাঁদতে চাইনা তবুও আমার কেন এত কান্না আসে? কারন মুরাদ ভাইয়ের মাঝে আমি নিজেকে দেখতে পাই। না দেখে না শুনেও যে ভালবাসা যায় আজ হাতেনাতে তার প্রমাণ পেলাম।


লিখনেঃDr. Arad Ur Rahman

SOMCH (2006-07)

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়