Dr. Aminul Islam

Published:
2020-12-07 03:10:56 BdST

"কোভিড ও রোগী নিয়ে আমার ব্যক্তিগত কিছু পর্যবেক্ষণ(একান্ত নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি) "


 


ডা. মোশাররফ হোসেন পলাশ লিখেছেন ,  


___________________________

বেশকিছু কোভিড আক্রান্ত রুগী দেখা ও বেশ কিছু রুগীর খুব কাছাকাছি থাকার পর,কোভিড নিয়ে আমার ব্যক্তিগত কিছু পর্যবেক্ষণ(একান্ত নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি) তৈরি হয়েছে। সেগুলো একটু বলার চেষ্টা করি:
১.
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও ওবেসিটি,এই দুটা কোভিড এর ক্ষেত্রে অত্যন্ত হাইরিস্ক কোমর্বিড ফ্যাক্টর।দেখা যাচ্ছে,এই দুটোর যেকোন একটা যাদের আছে,তারা কোভিড এ আক্রান্ত হলে দ্রুত খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী,অনেক বেশি বয়স্ক রোগী তারা তো হাইরিস্ক জোনে আছেন‌ই।
মহিলা ও শিশু দের কোভিড আক্রান্তের হার তুলনা মূলক কম এবং তারা আক্রান্ত হলেও খারাপ হয়ে যাওয়ার হারও কম। আইসিইউ তে বেশ কিছু মহিলা পেশেন্ট দেখেছি যারা অনেকগুলো কোমর্বিডি থাকার পরেও সুন্দরভাবে ফাইট ব্যাক করে ফিরে এসেছে।
২.
বয়স্ক রোগীরা কোভিডে আক্রান্ত হলে একটু ভিন্নভাবে প্রেজেন্ট করছেন। অধিকাংশ সময় তাদের নিউরো প্রেসেন্টেশান টা আগে আসছে,
যেমন,
হটাৎ আবোল তাবোল
বকা।
ডিস‌অরিয়েন্টাশান।
হটাৎ অস্থিরতা বা প্রচন্ড মানসিক অবসাদ।
সজ্ঞনতার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে
যাওয়া।
কখনোবা স্ট্রোক দিয়েই শুরু হচ্ছে।
তাদের প্রেসেন্টেশান এর ক্রম করতে হলে এরপর আসবে GIT সিম্পটম যেমন ডায়রিয়া।
বয়স্কদের ক্ষেত্রে,টিপিক্যাল জ্বর বা কাশির হিস্ট্রির দিয়ে শুরু হ‌ওয়া অনেক ক্ষেত্রেই তেমন দেখিনি।আরেকটি কারন‌ও হতে পারে,কোভিডে হ‌ওয়া হালকা জ্বরটাকে তারা শুরুতে বুঝতে পারছেনা। আবার বয়স্কদের গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে post COVID complications. আইসিইউ তে প্রচুর বয়স্ক পেশেন্ট আসছে যারা অলরেডি দশ পনেরো দিন আগে RT-PCR নেগেটিভ হয়েছেন।
৩.
এই শীতকালে হঠাৎ করে কোভিড রোগী বেড়ে যাওয়াটাকে কখনোই আমার সেকেন্ড ওয়েভ মনে হয়নি।আমরা নিজেদের সার্বিক পরিস্থিতির জন্য কোভিড এর প্রতি অনেক বেশি গা ছাড়া ভাব দেখাতে শুরু করেছি,হয়তো কিছুটা বাধ্য হয়েই এটা করতে হয়েছে সবাইকে। আর সেই গা ছাড়া ভাবের ফল হলো কোভিড সংক্রামনের হার হটাৎ আশংকাজনকভাবে বেড়ে যাওয়া।তবে ফার্স্ট বা সেকেন্ড ওয়েভ যাই হোক না কেন,এখনকার এই ভাইরাসটার ভিরুলেন্ছ আগের একটু বেশি মনে হচ্ছে।এখন যেমন ছড়াচ্ছেও দ্রুত আবার এখনকার পেশেন্টগুলোর মাঝে খারাপ হ‌য়ে যাওয়ার টেনডেন্সি ও একটু বেশি বলে মনে হচ্ছে।
৪.
যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড এর চিকিৎসায় রেমডিসিভির এর কার্যকারিতা একেবারেই নেই বলে ঘোষণা দিয়েছে,কিন্তু আমার সামনে যতগুলো পেশেন্ট রেমডেসিভির পেয়েছে,অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের সিম্পটম রিলিভে ড্রামাটিক রেসপন্স হতে দেখেছি। তবে দামি এ ‌ঔষুধ স্টার্ট করতে টাইমিং ও ক্লিনিক্যাল এসেসমেন্ট টা খুব জরুরি।
আর হাইপের চূড়ায় থাকা প্লাজমা থেরাপি ও টসিলুজুমাব কে আমার বুমেরাং ছাড়া অন্য কিছু মনে হয়নি। সিভিয়ার সিম্পটমের ইয়াং পেশেন্টের ক্ষেত্রে টসিলুজুমাব কখনো আশীর্বাদ হয়ে আসলেও বয়স্ক ও কোমর্বিডযুক্ত পেশেন্টদের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় টসিলিজুমাব একটা মৃত্যুফাঁদ।
৫.
অনেক মন্দের মধ্যে দেখা ভালো একটি দিক যেটা এসেছে,সেটা হচ্ছে কোভিড নিয়ে মানুষের ভিতরের স্টিগমা অনেকটা কমেছে।আগে যেখানে পরিবারের কেউ আফেক্টেড হলে পরিবারের অন্য সদস্যরা ফেলে পালাতো,এখন সেটা নেই বললেই চলে।মানবতা এখনো মরে যায়নি।
৬.
যেসব পেশেন্ট খারাপ হয়ে যাচ্ছে বা যাবে,একটু খেয়াল করলেই দেখা যাচ্ছে তারা অধিকাংশ শুরুই করছে সিভিয়ার সিম্পটম দিয়ে,যেমন টানা উচ্চমাত্রার জ্বর,টানা ডায়রিয়া, হটাৎ জ্ঞানের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়া।আরো খেয়াল করলে দেখা যাচ্ছে, অসুখের শুরুর দিক থেকেই তাদের ইনফ্লামাটরি মার্কারগুলো যেমন
CRP,ESR,Ferritin,D-dimer etc.আশংকাজনকভাবে বেশি থাকছে এবং absolute Lymphocyte Count খুবই কম থাকছে।
৭.
কোভিড ভালো হয়ে যাওয়ার অনেক দিন পর‌ও এর রেশ আমাদের শরীরে থাকছে।শরীর ঝিমঝিম বা ম্যাঝম্যাঝে ভাব,প্রচন্ড দুর্বলতা বোধ হ‌ওয়া,মানসিক অবসাদ এ ভোগা এসব কয়েক মাস পর্যন্ত থাকছে।
৭.
এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত কোভিডের মূল চিকিৎসা মাত্র তিনটি। অন্যান্য সব সাপোর্টিভ।
*অক্সিজেন সরবরাহ
*লো মলেকুলার ওয়েটা হেপারিন/হেপারিন
*স্টেরয়েড এর ব্যবহার।
একদম শুরুতে চায়না,ইউরোপ বা আমেরিকাতে এতো বেশি হারে মৃত্যুর একটি বড় কারন ছিল হয়তো তখন পর্যন্ত কোভিডে হেপারিন ও স্টেরয়েড এর ব্যবহার প্রতিষ্ঠিত না হ‌ওয়া। কোভিড এ লো মলেকুলার ওয়েট হেপারিনের ব্যবহার নি‌ঃসন্দেহে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে।
___________________________

ডা. মোশাররফ হোসেন পলাশ

Life Member , Swadhinata Chikitsak Parishad-Swachip
Publications and Public Relations Secretary, Bangladesh Medical Association,Naogaon branch.
MD resident anaesthesiology , Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University-BSMMU

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়