SAHA ANTAR

Published:
2020-12-03 00:19:03 BdST

নিজ সন্তানকে ৩০ বছর ফ্ল্যাটে ‘বন্দী’ রাখলেন মানসিক রোগী মা!


এই সেই আটকে রাখা মা এর বাড়ি



ডেস্ক

নিজের ছেলেকে প্রায় ত্রিশ বছর ধরে ফ্ল্যাটে বন্দী করে রেখেছিল এমন সন্দেহে সুইডেনের পুলিশ এক মাকে গ্রেফতার করেছে। মানসিক রোগের শিকার এই মা জোরজবরদস্তি করেই আটকে রেখেছিল সন্তানকে: সবার অগোচরে এমন ভয়ঙ্কর কান্ড কেমন করে ঘটল , তা ভেবে নাকাল সুইডিশ পুলিশ।
রাজধানী স্টকহোমের উপকণ্ঠে এ ঘটনা ঘটেছে।

যে ছেলেকে প্রায় তিরিশ বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছিল , তার বয়স এখন ৪০।

তাকে ফ্ল্যাটের মধ্যে খুবই নোংরা পরিবেশে আহত অবস্থায় পাওয়া যায়।
লোকটির মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল। তখন রবিবার ঘটনাচক্রে ফ্ল্যাটে যাওয়া একজন আত্মীয়া ছেলেটিকে সেখানে দেখে ফেলে। তাকে এখন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

ছেলেটির বয়স যখন ১১ বা ১২ তখন থেকে তাকে স্কুলের খাতা থেকে নাম কেটে ঘরে নিয়ে আসা হয়েছিল। গত রবিবার এই নারী ফ্ল্যাটের দরোজা খুলে এক আত্মীয় দেখেন এটি একেবারে অন্ধকার, ধুলায় ঢাকা। এবং সেখান থেকে মুত্র, ময়লা-আবর্জনার পঁচা গন্ধ বেরুচ্ছে।

যখন তিনি হ্যালো বলে ডাক দেন, তার জবাবে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না।

এরপর তাকে স্তুপ হয়ে থাকা জিনিসপত্রের মাঝ দিয়ে ঘরে ঢুকতে হয়। রান্নাঘরে শব্দ শুনতে পেয়ে তিনি দেখেন অন্ধকারে এক কোনায় একটা লোক বসা। বাইরে থেকে রাস্তার সড়ক বাতির আলোয় তাকে দেখা যাচ্ছিল। তার পা থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঘা হয়ে গেছে।
এই নারী সুইডেনের একটি সংবাদপত্রকে জানিয়েছেন, লোকটি যখন তাকে দেখেন, তিনি উঠে দাঁড়ান এবং তার নাম ধরে বার বার ডাকতে থাকেন। লোকটির প্রায় সব দাঁত পড়ে গেছে এবং তার কথা ছিল অস্পষ্ট।

তিনি বলেন, যে কোনভাবেই হোক, এত বছর পরেও লোকটি তাকে চিনতে পেরেছে এবং তাকে দেখে ভয় পাচ্ছিল না। লোকটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তাররা বিষয়টি পুলিশকে জানায় এবং এরপর তার মাকে আটক করা হয়।


যে নারী এই লোকটিকে ফ্ল্যাটে গিয়ে খুঁজে পান, তিনি সুইডেনের পাবলিক টেলিভিশন নেটওয়ার্ককে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, লোকটির মা এর আগে তার আরেকটি সন্তান হারিয়েছিলেন। সেটি নিয়ে তিনি মুষড়ে পড়েছিলেন। তারপর মানসিক রোগের শিকার হন। দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের পর তিনি তার নাম রাখেন আগের সন্তানের নামে।

একজন আত্মীয়াকে উদ্ধৃত করে সেখানে আরও জানানো হয়, তিনি তার মৃত সন্তানকে ফিরে পেতে চাইছিলেন এবং নতুন সন্তানকে খুব বেশি আগলে রাখতে চাইতেন।

________________________________________________________

 

এই মাকে যথাসময়ে মানসিক রোগের চিকিৎসা

দেয়া হলে এই বিরল অমানবিক ঘটনা ঘটত না

---ডা. সুলতানা আলগিন

 

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় , ঢাকার

সহযোগী অধ্যাপক মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ
কনসালটেন্ট ওসিডি ক্লিনিক ও জেরিয়াট্রিক ক্লিনিক ,ডা. সুলতানা আলগিন বলেন,

 

বিষয়টি খুবই দু:খজনক। খোদ ইউরোপে এমন ঘটনা আমাদের এই বার্তাই দেয়, শুধু বাংলাদেশই নয়, উন্নত বিশ্বেও ক্ষেত্রবিশেষে মানসিক রোগীরা চিকিৎসার বাইরে থেকে যায়।
এই মাকে যথাসময়ে মানসিক রোগের চিকিৎসা দেয়া হলে এই বিরল অমানবিক ঘটনা ঘটত না।
আমাদের সামাজিক সমস্যা হল, আমরা মানসিক রোগকে গুরুত্বই দেই না। নানা কিসিমের মানসিক রোগী চিকিৎসা ছাড়াই থেকে যায়। ফলে কখনও এরকম ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটলে আমরা চমকে যাই। মানসিক রোগী মা যখন নিজের সন্তানকে কতল করে ; মানসিক রোগী বাপ যখন নিজের সন্তানকে "কুরবানী" করে ( ময়মনসিংহের এক ঘটনায় মানসিক রোগী পিতা পুত্রকে জবাই করে এমন দাবি করেছিল ), তখন আমরা হাহুতাশ করি। কিন্তু মানসিক রোগীদের নিয়ে অবহেলার শেষ হয় না। ঘরে মানসিক রোগী থাকলেও দেখি না কি হয়, কিংবা পীর ফকির হুজুর তান্ত্রিকদের কাছে নিয়ে পানি পড়া খাওয়াই , কিন্তু মানসিক রোগের ডাক্তারদের দেখানো হয় না। ফলে এইসব কল্পনার অতীত ঘটনা ঘটিয়ে মানসিক রোগীরা সমাজকে জানান দেয়, তারা চিকিৎসার বাইরে ছিল। ঠিক সময়ে চিকিৎসা দেয়া হলে মানসিক রোগী বাপ বা মা সন্তানকে কতল করত না। মাও সন্তানকে ৩০ বছর আটকে রাখত না।

__________________________________________________________

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়