SAHA ANTAR

Published:
2020-11-20 19:58:33 BdST

মৃত নারী ও পশুপাখিকে 'ধর্ষণ': প্যারাফাইলিক ডিজঅর্ডার : যে মানসিক রোগ সকলের অজানা



ডা. সুলতানা এলগিন


সহযোগী অধ্যাপক
মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ
কনসালটেন্ট , ওসিডি ক্লিনিক ও জেরিয়াট্রিক ক্লিনিক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় , ঢাকা
____________________________________

পত্রিকায় বিশাল আলোড়ন সৃষ্টিকারী শিরোনাম: মৃত নারীর লাশকে ধর্ষণ করেছে ডোম মুন্না ভগত :
আগেও শিরনাম দেখেছেন নিশ্চয়ই:
গরু, ছাগলের সঙ্গে সঙ্গম করেছে যুবক, কিশোর , বা বয়স্ক পুরুষ ।

এমনকি এক বৃটেনবাসী পাকিস্তানী যুবক রেহান বেগ বিচিত্র উপায়ে মুরগীর সঙ্গে যৌনতা করতে গিয়ে ধরা পড়ে সারা দুনিয়ার মিডিয়ায় হাসির খোরাক হয়েছে। ওয়েস্টার্ন মিডিয়া পর্যন্ত পাকিস্তানী যুবককে চরম বর্বরতার নজির বানিয়েছে। বাংলাদেশেও মানসুব আলী নামে এক লোক মুরগীর সঙ্গে যৌনবিকৃতি করতে গিয়ে ধরা পড়ে।


আজ সংবাদ মিডিয়ায় শিরোনাম হয়েছে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের এক ডোম মুন্না । সে মৃত নারীদেহের সঙ্গে যৌনবিকৃতি করত। লাখ লাখ শেয়ার হচ্ছে এই খবরগুলো। বাংলাদেশী মিডিয়া পুলিশের বরাত দিয়ে আরেক কাঠি সরেস শিরোনাম করেছে : "মৃত নারীকে ধর্ষণকারী " ডোম।
বোঝাই যায়, ধর্ষণ শব্দটি ব্যবহার করলে খবরের লাখো শেয়ার ও কাটতি হবে। সেই লোভেই এই বিকৃতিকে ধর্ষণ বলা।
 গরু ছাগল পশুর সঙ্গে সঙ্গম কারী কিশোর যুবকদের নিয়মিত গ্রেপ্তার করে ব্যপক সরস আলোচনার জন্ম দেয় বিভিন্ন দেশের পুলিশ। যথারীতি " মৃতদেহধর্ষক"কেও
গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অবশ্যই এই পুলিশি আটককে সঠিক ও অতি প্রয়োজনীয় বলে মনে করি। যেমন মনে করি , " ভায়োলেন্ট মাদকাসক্ত , ভায়োলেন্ট মানসিক রোগী , ভায়োলেন্ট ইয়াবাসেবী" দেরও সংশ্লিষ্ট পরিবার পুলিশ দ্বারা আটক করিয়ে মানসিক চিকিৎসালয়ে নিয়ে আসতে পারেন। তাহলে ভায়োলেন্ট চরম ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের চিকিৎসা দিতে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের পক্ষে অনেক সুবিধা হয়। জবাবদিহিতে সুবিধা হয়। মৃত্যু, কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে পুলিশভাইরাও সাক্ষ্য দেবেন কোন অবস্থায় কি ঘটেছে। তারাও ঘটনায় দায়বদ্ধ থাকবেন। তারাও নিয়মিত দেখে দেখে জেনে যাবেন , এসব ভায়োলেন্টদের ইনজেকশন পুশ করা ছাড়া কোন উপায় নেই সামলানোতে।

যাই হোক , এবার মৃতাধর্ষক প্রসঙ্গে বলি।
এই ডোম সহ, পাকিস্তানী মুর্গী যৌনসংসর্গকারী , গরুছাগলের সঙ্গে জেনাকারীরা সম্ভাব্য মানসিক রোগী ।
তারা পারভারসনে ভুগছেন। এই পারভারসন মানসিক রোগের অধীন। এদের দরকার মানসিকচিকিৎসা।
এরা চিকিৎসা পায় না। এরা হাস্যরসের শিকার হয়। ওয়েস্টার্ন সংবাদকর্মীদের আমরা সবজান্তা সর্বজ্ঞানী ভাবি। তারাও এই প্যারাফাইলিক ডিজঅর্ডারের শিকার মানুষগুলোকে নিয়ে বিশ্বব্যপী হাসির ফোয়ারার জন্ম দেন।
এই রোগের নাম আন স্পেসিফাইড প্যারাফাইলিক ডিজঅর্ডার । এই রোগে র রোগীরা তাদের যৌনতা মৃতদেহ, পশু, পাখির সঙ্গে সাধন করে। এমনকি অনেকে জেনে অবাক হবেন , তারা পায়খানা পেশাবের সঙ্গে যৌনাকাঙ্খা মিটায়। এজন্য তারা আত্মগ্লানিতে ভোগে।তাদের সামাজিক , পেশাগত, পারিবারিক জীবন চরম ভাবে ব্যহত হয়। বিয়ে হয় না। হলেও নানা হুজ্জতি হয়।  নানা নেশায় ও অপরাধে জড়িয়ে যায়।

তারপরও তারা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের চিকিৎসা না পাওয়ায় এই প্রবৃত্তি গোপণে , সকলের চোখের আড়ালে চালিয়ে যায়। কখনও ধরা পড়ে সামাজিক , ফোজদারি শাস্তির শিকার হয়। তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপন নরকে পরিনত হয়। সকলে তাদের নরকের কীট, জাহান্নুমের শয়তান বলে সমাজ থেকে বিতাড়ণ করে।
অথচ তারা সঠিক চিকিৎসা পেলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারত। কিন্তু সমাজ, পরিবার তাদের সঠিক চিকিৎসা না দিয়ে হাস্য পরিহাস, ঘৃণা , আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘৃন্য প্রাণী হিসেবে সাব্যস্ত করে নিজেরাও বিকৃত আনন্দ ভোগ করে।

একটি সর্বাধিক আলোচিত টপ চার্ট শিরোনাম ও বিবরণ

"মৃত নারীদের ধর্ষণ করতো ছেলেটি!"

বাংলাট্রিবিউন থেকে নেয়া
___________________

ছেলেটির বয়স মাত্র ২০। মামার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে মর্গে কাজ করতো সে। নাম মুন্না ভগত। কিন্তু জঘন্যতম একটি অপরাধের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ—মর্গে থাকা মৃত নারীদের ধর্ষণ করতো সে। সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন স্থান থেকে যেসব লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে নেওয়া হতো, সেসব লাশের মধ্য থেকে মৃত নারীদের ধর্ষণ করতো মুন্না।

সিআইডির অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক সৈয়দ রেজাউল হায়দার বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই ন্যক্কারজনক। শুক্রবার (২০ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।’

সিআইডি ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রেফতার হওয়া মুন্না ভগত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে ডোম জতন কুমার লালের সহযোগী হিসেবে কাজ করতো। দুই-তিন বছর ধরে সে মর্গে থাকা মৃত নারীদের ধর্ষণ করে আসছিল। সম্প্রতি এরকম একটি অভিযোগ পেয়ে মুন্নার বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে সিআইডি। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় মুন্নাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মুন্না মৃত নারীদের ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে।

সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, মৃত নারীদের ধর্ষণ করা পৃথিবীর জঘন্যতম একটি কাজ। সুস্থ ও স্বাভাবিক কেউ এমন জঘন্যতম কাজ করতে পারে না। গ্রেফতার হওয়া মুন্না বিকৃত মানসিকতার। তা না হলে এমন কাজ তার করার কথা নয়।

 

 

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়