ডাক্তার প্রতিদিন

Published:
2020-06-06 20:23:42 BdST

'করোনা,বাবার মৃত্যু ও কিছু অভিজ্ঞতা'



ডেস্ক
____________________

একজন করোনা সাসপেক্টেড,পরবর্তীতে পজিটিভ রোগীর; যিনি তার পিতা: তার এটেনডেন্ট হিসেবে শফিউদ্দিন কবির আবিদ হাসপাতালে থেকে দেখেছেন বাস্তব চিত্র ও ভয়ঙ্কর সত্য। সেসব লিপিবদ্ধ করেছেন " করোনা,বাবার মৃত্যু ও কিছু অভিজ্ঞতা " শিরনামে । তার লেখা বৃহত্তর মানব কল্যাণে প্রকাশ হল।
শফিউদ্দিন কবির আবিদ লিখেছেন,
আমার বাবা চট্টগ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ আইনজীবি এডভোকেট মোঃ কবির চৌধুরী(৮৬) গত ২ জুন কোভিডে আক্রান্ত হয়ে জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুবরণ করেছেন। একজন করোনা সাসপেক্টেড,পরবর্তীতে পজিটিভ রোগীর এটেনডেন্ট হিসেবে থাকতে গিয়ে রোগী, রোগ, করণীয় ও আমাদের ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থা সম্পর্কে আমার বেশ কিছু প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা হয়েছে। বর্তমানের সংকটকালীন সময়ে মনে করছি, এ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সবার সাথে শেয়ার করা দরকার, যাতে অভিজ্ঞতাটার সামাজিকীকরণ ঘটানো যায়। হয়তো অনেকের কাজেও লাগতে পারে।

বাবার গায়ে ব্যথা শুরু হয় ঈদের রাত থেকে।পরদিন থেকে জ্বর, হালকা কাশি। বিকালের দিকে তাঁর হঠাৎ খারাপ লাগা শুরু হয়। চোখে অন্ধকার দেখলেন, মনে হল মাথা ঘুরে পড়ে যাবেন। প্রেশার ও বেশি। আগের দিন থেকেই মানসিকভাবে তিনি খুব আপসেট ছিলেন ঘনিষ্ঠজন এডভোকেট আবদুস সালামের মৃত্যুর সংবাদে। প্রতি ঈদের সকালে তিনি আসেন, এবার অপেক্ষা করেও না আসায় বাবা খবর নিয়ে কারো কাছে শুনলেন,তিনি রাতেই করোনায় মারা গিয়েছেন। আফসোস করছিলেন, তাঁর জানাযায় দাঁড়াতে পারলেন না, জানাযার লোক হয়েছে কি না। কদিন থেকে বলছিলেন, করোনার যে পরিস্থিতি, বাঁচবেন কি না। আমাকে বলেছিলেন - তিনি অন্ততঃ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাঁচতে চান । জীবনের সব আকাঙ্খা ও কর্তব্য তিনি সম্পাদন করেছেন, শুধু একটা ইচ্ছে পূরণ বাকি,তা শেষ করে যেতে চান। ক্যান্সার ও হার্টের রোগীদের চিকিৎসার খরচ নির্বাহের জন্য নিজ গ্রামে একটা দাতব্য ফাউন্ডেশন করতে চান।
সেদিন বাবার শারীরিক অবস্থা দেখে স্বভাবতই বুকটা থম মেরে গেল। উপসর্গগুলো ভাল ঠেকছিল না। টেলিমেডিসিন সেবার জন্য ডাক্তার Rajat Biswasএর সাথে কথা বলে ওষুধ নিই। রাতে জ্বর ১০২ ডিগ্রীর উপর। দুলাভাই Mahbubur Rahman Shibly ও ঢাকায় অবস্থানরত আমার ভাই Fakhruddin Kabir Atik(তাঁর স্ত্রী Nayeema Khaled Monika করোনা পজিটিভ,আর নিজের রিপোর্ট তখনও না আসায় চট্টগ্রাম আসতে পারেননি)এর পরামর্শে পরদিন একটা অক্সিমিটার নিয়ে এলাম ৩০০০ টাকায়, আগে যার দাম ছিল ২০০০-২২০০ টাকা। অক্সিমিটারে প্রথমদিকে অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৬-৯৫, পরে ৯২-৯১ এমন রিডিং পেলাম। ৯২ এর নীচ গেলে রোগীকে অক্সিজেন দিতে হবে। আরেকজন ডাক্তার পরামর্শ দিলেন, রোগীর বয়স যেহেতু ৮৬, পুরনো টিবি রোগী, তাই এমনিতেই ঝুঁকিতে আছেন। হাসপাতালের সিট যেন আগে থেকে কনফার্ম করে রাখি। যদি স্যাচুরেশন কমে যায়, আইসিইউ লাগবে।
শুরু হলো হাসপাতালে যোগাযোগ।ভর্তির জন্য চট্টগ্রামের প্রায় সমস্ত বেসরকারি ক্লিনিকগুলোর সাথে যোগাযোগ করা হয় আমাদের পরিবারের পক্ষ হতে, বাবার শুভানুধ্যায়ীদের মাধ্যমে। জ্বর আছে, ফলে করোনা সাসপেক্টেড। করোনা পরীক্ষা ছাড়া কেউ রোগী ভর্তি করবে না। ম্যাক্স, ন্যাশনাল, মেট্রোপলিটন, ইম্পেরিয়াল, পার্কভিউ যাদের আইসিইউ সাপোর্ট আছে, সবার এক কথা। এদিকে বাবার অক্সিজেনের স্যাচুরেশন ৯০ এর নীচে। করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ আছে মাত্র ১০ টি, সরকারি জেনারেল হাসপাতালে। ঠিক করা হয়, পরদিন জেনারেল হাসপাতালে বাবার করোনা টেস্ট করা হবে। নানা চেষ্টাচরিত্রের পর তাঁর বয়স বিবেচনায় আলাদা রুমে স্পেশাল টেস্টের একটা ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেল।
বাবার কাছে মোবাইল থাকায় এর মধ্যেই একজন আইনজীবীর কাছ থেকে খবর পেয়েছেন, এডভোকেট আবুল কাসেম চৌধুরী শ্বাসকষ্ট নিয়ে ঘুরেছেন ক্লিনিকের দ্বারে। শেষ পর্যন্ত সিট পেয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেলের একটি ওয়ার্ডের ফ্লোরে। শ্বাসকষ্টেই সেখানে সেদিন মারা যান। সেদিন রাতে বাবা ঘুমোতে পারেননি। এক একবার অক্সিমিটার দিয়ে স্যাচুরেশন মাপি, বাবা জিজ্ঞেস করেন, কত পাওয়া গেল। দাঁতমুখ চেপে বাড়িয়ে বলি, স্বাভাবিক আছে, আপনি ঘুমান। তিনি বলেন, ঘুম আসে না, বারবার স্বপ্ন দেখছেন - রোগীরা হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছে, সিট পাচ্ছে না। কোথাও ভর্তি নিচ্ছে না। ভাবছিলাম, বাবা আইনপেশায় চসিকের একুশে পদক পাওয়া আইনজীবী, চট্টগ্রাম বারের সাবেক সভাপতি, বার কাউন্সিলের মেম্বার ছিলেন, তাঁর অসংখ্য শুভানুধ্যায়ী-তাঁর জন্য অনেকে চেষ্টা করছেন, তার ক্ষেত্রে এ অবস্থা হলে, অন্যান্য সাধারণ রোগীদের কি পরিস্থিতি?

করোনা টেস্ট
২৯ মে টেস্টের জন্য বাবাকে নিয়ে জেনারেল হাসপাতালে এলাম। একতলায় কয়েকশত মানুষের ভীড়। প্রস্থে ৮-১০ ফুট একটি লম্বা প্যাসেজের মধ্যে একটি রুমের সামনে লাইন, একজনের গায়ের উপর আরেকজন। কেউ হাঁচি দিচ্ছে, কেউ কাশছে, কেউ দুই প্যাসেজের মাঝখানের ছোট খোলা জায়গাটাতে থুতু ফেলছে। আরেকজনের গা বাঁচিয়ে হাঁটার রাস্তা নেই। সে রুমে প্রথমে স্ক্রিনিং হবে, কার পরীক্ষা দরকার। জ্বর, কাশি, সর্দি না থাকলে, পরীক্ষা করা হবে না। আরেকটি রুমে যাদের টেস্ট করা হবে, তাদের ফর্ম জমা নেয়া হচ্ছে, সেখানেও একই চিত্র। দোতলায় স্পেশাল টেস্ট হবে, সেখানে ভীড় কম, প্রধানতঃ পুলিশ সদস্য ও প্রশাসনের লোকজনের জন্য। সেখানে ঘন্টা তিনেক অপেক্ষা করার পরও ডাক এলো না। এদিকে দোতলায় স্পেশাল যে টেস্ট চলছিল পুলিশদের, তাও শেষ। জিজ্ঞেস করাতে বললো, নীচতলাতেই সবার সাথে টেস্ট করাতে হবে। সংশ্লিষ্টদের অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলাম, বাবার যে বয়স, আলাদা টেস্ট করা যায় কি না। লাভ হলো না। ওদেরও দোষ দিই কিভাবে, অল্প কয়েকজন মানুষ উচ্চ ঝুঁকি নিয়ে এতগুলো মানুষের টেস্ট করছে, কতদিকে খেয়াল রাখবে। শেষ পর্যন্ত সেই ভীড়েই আমি ও আমার বড় ভাই বাবাকে নিয়ে গিয়ে টেস্টটা করালাম। তখনই ভাবছিলাম, আজকের টেস্টে যদি নেগেটিভ আসেও, পরবর্তী টেস্টে অবশ্যই পজেটিভ আসবে। নমুনা সংগ্রহের জন্য দুইটা সেফটি বুথ দেখলাম। সেগুলো অব্যবহৃত পড়ে আছে। যারা নমুনা সংগ্রহ করছে, তারা ঝুঁকি নিয়েই সংগ্রহ করছে। এরা যদি আক্রান্ত হয়, তাহলে হয়তো নমুনা সংগ্রহই বন্ধ হয়ে যাবে।

I Can't Breathe
সেদিন বাবার জ্বর বাড়ল। অক্সিজেন স্যাচুরেশন অনেক কমে গেল। দ্রুত অক্সিজেন দিতে হবে। একটা অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে আনা হলো সাড়ে ১৮ হাজার টাকায়। একদিন আগে দাম করে গিয়েছিলাম ১৪ হাজার টাকায়। দোকানদার বলল, দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। সিলিন্ডারের মুখে লাগানোর যে সেটের দাম ছিল ৩হাজার টাকা, তার দাম হয়ে গিয়েছে ৭ হাজার টাকা। এখন নাকি সে সিলিন্ডার ২২-২৩ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে।
সকালে উনার শ্বাসকষ্ট বাড়লো। কিন্ত কোথাও সিট নেই, আইসিইউ নেই। ভেঙ্গে পড়িনি, মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম। পুরো ব্যবস্থা যখন নড়বড়ে, আপনিও তার তলায় চাপা পড়বেন, ঘরে দুয়ার দিয়ে একা ভালো থাকা যায় না।।রাষ্ট্র যদি জনগণের স্বাস্থ্যের দায়িত্ব না নেয়,মৃত্যুর মিছিলে আপনি আমি সবাইকেই দাঁড়াতে হবে। ফলে আজ যখন সে রাতে বাবার শ্বাসকষ্ট চোখের সামনে দেখছি, প্রতীকী মিল খুঁজে পেলাম। আমেরিকার নিপীড়ক বর্ণবাদী ব্যবস্থা যখন জর্জ ফ্লয়েডের গলা চেপে ধরেছে, জর্জ ফ্লয়েড বলছিলেন, সাথে পুরো আমেরিকার নিপীড়িত সাধারণ মানুষ - I can't breathe। আমার বাবার মতো ঘরে ঘরে অসংখ্য রোগীর গলায় এ অমানবিক, ভঙ্গুর ব্যবস্থা পা দিয়ে পিষছে, আর আমাদের বাবা-মায়েরা, ভাই-বোন-সন্তানেরা অস্ফুট স্বরে বলছে - I can't breathe। পুরো বাংলাদেশ যেন আর্তনাদ করছে-I Can’t Breath.বাসায় কতক্ষণ অক্সিজেন দিতে পারবো? কয়টা সিলিন্ডার কিনবো? এ অবস্থায় একমাত্র উপায় -হাসপাতালে ভর্তি। ২৯ তারিখ সারাদিন চেষ্টা করা হয়েছে।ডাঃ আসিফের পরামর্শে ৩০ মে সকালে জেনারেল হাসপাতালের ইমার্জেন্সির সামনে গিয়ে বসেছিলাম, যাতে খালি হলেই সিট হাতছাড়া না হয়। এদিকে আমরা নানাদিকে চেষ্টা করছি, একটা সিটের জন্য। একটা সময় হঠাৎ করে ইমার্জেন্সি থেকে হাঁক দিলো, একটা সিট খালি হয়েছে, কেউ আছেন কি না? আমি হ্যাঁ বলে এমন চেঁচালাম, আশেপাশের মানুষগুলো চমকে উঠল।

আইসোলেশন ওয়ার্ডে রোগীর সাথে

জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য ১২০টি সিট। বাবাকে নিয়ে আসা হল অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ। ডিউটিরত ডাক্তার বললেন, আমাদের এখানে পূর্বে করোনা সাসপেক্টেড ও করোনা পজিটিভ - দুইধরণের রোগীর জন্য আলাদা ব্যবস্থা ছিল। এখন আর আলাদা নেই, সব একসাথে। আপনার বাবা করোনা সাসপেক্টেড, করোনা রোগীদের সাথে এক ওয়ার্ডে ভর্তি করবেন কি না? কঠিন সিদ্ধান্ত। উপায় নেই। কারণ জানি, রিপোর্ট কবে পাবো ঠিক নেই। এখানে রিস্ক সত্ত্বেও ভর্তি হয়ে থাকলে, অন্ততঃ আইসিইউতে বেড খালি হলে, একটা সুযোগ আছে। বললাম, ভর্তি করাবো।
১০ নম্বর ওয়ার্ড দোতলায়, ১১ নম্বর ওয়ার্ড আন্ডারগ্রাউন্ডে। ডাক্তার, নার্সদের রুম ১০ নম্বর ওয়ার্ডে, আন্ডারগ্রাউন্ডে তাদের আলাদা রুম নেই। যে সিট দেওয়া হলো, বেড ভেজা। নানাজনকে বলে কোন ব্যবস্থা করতে না পেরে, আরেকটা খালি সিটে ব্যবস্থা করলাম। কিছুক্ষণ থেকে বুঝলাম, করোনা ওয়ার্ড বলে এখানে নার্সরা সারাদিনে দুইবারই আসেন। এখানে সব কিছু নিজেকে করতে হবে। কিন্তু বাবার শরীরে কোন ব্যালেন্স নেই, নিজে উঠতে বসতে পারছেন না। এ রোগীকে খাইয়ে দেওয়া হতে শুরু করে বিছানায় বাথরুম করানো, সব করাতে হবে। যে ক’জন ওয়ার্ড বয় আছে, তারা বলে দিল,তাদের পক্ষে কোন রোগীকে আলাদা করে খেয়াল রাখা বাস্তব নয়। করোনা ওয়ার্ড হলেও, আমাদেরই তা করতে হবে। আতিক ভাই ফোনে বললেন, ডাক্তারকে অনুরোধ কর, রোগীর সাথে রিস্ক সত্ত্বেও নিজ দায়িত্বে আমরা একজন থাকতে চাই। ওয়ার্ড বয়দের যা যা কাজ, ডাক্তাররা যা যা বলবেন, সব আমরা করবো। ডাক্তারকে অনুরোধটা জানানোর পর তিনি বললেন, অফিসিয়ালি ওয়ার্ডে এরকম বাইরের ভলান্টিয়ার নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। চাইলে আনঅফিসিয়ালি আমরা কেউ পিপিই পরে মাঝে মাঝে ওয়ার্ডে গিয়ে বাবার দেখাশোনা করতে পারি।

১১ নম্বর ওয়ার্ড
চট্টগ্রামের নানা প্রান্ত থেকে এখানে রোগী এসেছে। শহরেরই বেশি। সব মিলিয়ে ৫০ এর মতো রোগী। নানা পেশার, নানা বয়সের পুরুষ-মহিলা উভয়েই আছেন। পুলিশ সদস্যদের সংখ্যাটাই বেশি। রোগীদের কেউ ২০ দিন, কেউ ১৫ দিন ধরে আছেন। রোগীদের একটা অংশ আছে, আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে এরা করোনাকে তেমন গুরুত্ব দেননি, কিছু হবে না মনে করেছেন। আরেক অংশ আতঙ্ক থেকে কিছু নিয়ম মানার চেষ্টা করেছেন, আবার ব্যবসা-নানা কাজে নিয়মিত বের হতে হয়েছে। তৃতীয় অংশ যতটুকু সম্ভব মানার চেষ্টা করেছেন, ঘরে থেকেছেন, কিন্তু কোন না কোনভাবে আক্রান্ত হয়েছেন। এ তিন অংশের রোগীই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর বুঝতে পারছেন, আসলে কত ভয়ন্কর পরিস্থিতিতে তারা পড়েছেন। প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজন সবাই আতঙ্কিত। সামাজিকভাবেও অনেকে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কারও কারও পরিবার ভর্তি হওয়ার পর আর যোগাযোগ রাখছে না। অনেকের পরিবারের পক্ষ হতে বাইরে প্রয়োজনীয় জিনিস রেখে যায়, বের হয়ে তা নিয়ে আসতে হয়।নিরাপত্তা কর্মী,গেইটকিপার না থাকায় কেউ কেউ দেখলাম,ওষুধ লাগলে নিজে বের হয়ে হাসপাতালের বাইরে হাজারীগলি থেকে কিনে আনছে।সংক্রমণ কি মাত্রায় তাদের মাধ্যমে ছড়াচ্ছে,ভাবতেই আতঙ্ক হয়! চিকিৎসা ও দ্রুত আরোগ্যের বিষয়ে রোগীরা সবাই আমাকে তাদের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু পরামর্শ দিলেন। ওষুধের পাশাপাশি এর মধ্যে প্রধান হলো একটা ওয়াটার কেটলিতে পানি গরম করে মাথা গামছা দিয়ে ঢেকে গরম পানি বা মসলা মিশ্রিত গরম পানি ভাপ নেওয়া-নাক দিয়ে বুক ভরে নিয়ে মুখ দিয়ে ছাড়া কয়েকবার করে। এ থেরাপি দিনে ৪-৫ বার চালানো। দুই নম্বর-গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে দিনে ২-৩ বার খাওয়া। তিন নম্বর-সহনীয় মাত্রার গরম লবণ পানিতে কয়েকবার গার্গল করা। চার-মসলা(আদা,এলাচ,লবঙ্গ,দারচিনি) চা বা মসলা মিশ্রিত গরম পানি কয়েকবার খাওয়া। পাঁচ-ঠান্ডা পানি বা নরমাল পানি না খাওয়া, সবসময় কুসুম গরম পানি খাওয়া। হাত ধোঁয়া ঘন ঘন, নিজের জামাকাপড়, প্লেট-গ্লাস সব নিজে পরিষ্কার করা, আশেপাশে জীবানুনাশক স্প্রে করা ইত্যাদি তো আছেই। রোগীরা আরেকটি বিষয়কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বললেন - রিপোর্ট পজিটিভ আসলো না নেগেটিভ আসলো, তা নিয়ে চিন্তা করে কোন লাভ নেই। প্রথমে নেগেটিভ আসলেও আবার পজিটিভ আসতে পারে। ১৪ দিন পর দুইবার টেস্টে নেগেটিভ আসলে তখনই সুস্থ ধরা যাবে। তাই মনোবল শক্ত রাখা, যা হবার হবে-আমাকে সব নিয়ম সাধনার মতো করে মানতে হবে, নিজেকে নিজেই রক্ষা করতে হবে।

অক্সিজেন এবং “পারলে ভেগে যাই”

৩০ তারিখ দুপুর থেকে ২ জুন দুপুর পর্যন্ত জেনারেল হাসপাতালে ছিলাম।করোনা মহামারী মোকাবেলায় চট্টগ্রামের প্রধান বিশেষায়িত হাসপাতালের আসল চিত্র, সরকারের প্রস্তুতির লেজেগোবরে অবস্থা সব স্বচক্ষে দেখলাম। আশ্চর্য হইনি। এমনইতো হবে-ধারণা ছিল। ১২০ জন রোগীর জন্য তিনজন ডাক্তার পালা করে ডিউটি করছে দিনের পর দিন। নার্স প্রতি পালায় ৩-৪ জন। ওয়ার্ড বয় দুইজন, আয়া দুইজন। লোকবল নেই। যারা আছে, এরা ক্লান্তির শেষ সীমায়। আবার আতঙ্কও আছে আক্রান্ত হওয়ার।এ বিবেচনার পরও রোগীকে যতটুকু দেখতে পারতেন,ডাক্তার-নার্সদের সে দায়িত্ব পালনে অনীহা, আতঙ্ক দেখেছি। ৩০ তারিখ ভর্তি হওয়ার পর কোন ডাক্তার দেখতে আসেননি।রাতে রোগীর খারাপ লাগায়,ডাক্তারকে ডেকেও আনতে পারিনি। আর প্রধাণ হয়ে আছে অক্সিজেন সংকট। কোভিড রোগীদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন হাই ফ্লো অক্সিজেন সরবরাহ দরকার। এজন্য সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ সিস্টেম ছাড়া কোভিড হাসপাতাল হলো নিধিরাম সর্দার। জেনারেল হাসপাতালে সে ব্যবস্থা নেই। অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে, খুব অপ্রতুল।
সেদিন রাতেই টের পেলাম, কি ভয়াবহ পরিস্থিতি। রাত থেকে বাবার অক্সিজেন স্যাচুরেশন উঠানামা করছে। টানা অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। সিলিন্ডারে অক্সিজেন শেষের দিকে হলেই, উনার স্যাচুরেশন কমতে থাকে। আরেকটা সিলিন্ডারের জন্য উপরে ছুটে গিয়ে ব্যবস্থা করা সময়সাপেক্ষ। সেটা আবার টেনে নীচ তলায় নামিয়ে রোগীকে ফিট করা, সব নিজেকেই করতে হচ্ছে। কারণ ২ জন ওয়ার্ডবয় আর কতদিক সামলাবে। রোগীরা উপরে এসে নিজেই সিলিন্ডার নীচে নামাচ্ছে। রাতেই হাসপাতালে সিলিন্ডার সংকট দেখা দিল। কি করবো? কোনমতে বড় দু'ভাই অনেক খুঁজে বাইরে থেকে একটা সিলিন্ডার ব্যবস্থা করল। আগে একটা অর্ধেক ছিল। আয়া একজনের সাথে তার সুখদুঃখের আলাপ করেছিলাম। উনি আমার বাবার শোচনীয় অবস্থা থেকে কোথা থেকে আরেকটা সিলিন্ডার ম্যানেজ করলেন। বললেন আগামীকাল ১০টার আগে আর সিলিন্ডার আসবে না। আমার বাবার একটা সিলিন্ডারে ৩-৪ ঘন্টার বেশি যাচ্ছে না। ভোরে কি হবে?
ছুটে গেলাম দোতলায় ডিউটিরত ডাক্তারের কাছে। দেখলাম আরো কিছু রোগী তাদের শ্বাসকষ্ট আছে, তারাও ডাক্তারের কাছে কাকুতি মিনতি করছে একটা সিলিন্ডারের জন্য। কেউ যেন মন্তব্য করলো, সিলিন্ডার আছে, ইচ্ছা করে দিচ্ছে না। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত, বিরক্ত ডাক্তারটির চোখেমুখে ভেঙ্গে পড়ার সব লক্ষ্মণ স্পষ্ট। বললেন, ভাইয়া, আর কোন সিলিন্ডার নেই। সকাল ১০ টা-১১ টার আগে আর আসবে না। বাইরে থেকে কোনভাবে ম্যানেজ করেন। থাকলে আমরা কেন দেব না? অনেকে মনে করছে, ইচ্ছে করে দিচ্ছি না। বললাম, রাতে সিলিন্ডার কোথায় পাবো? রোগীতো অক্সিজেনের অভাবেই মারা যাবে। উনি বললেন, "ঠিক তো। চোখের সামনে অক্সিজেনের অভাবে মরতে দেখত হচ্ছে। এখানে দরকার হাই ফ্লো অক্সিজেন, সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম তো প্রাথমিক শর্ত। অথচ নেই। কতক্ষণ আপনি সিলিন্ডার দিয়ে অক্সিজেন দিতে পারবেন? উপর থেকে বলছে, সব আছে। অথচ আমরা দেখছি, শুধু নেই। এখন ডাক্তার, নার্সদের পক্ষে সম্ভব অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা? সেটা তো উপরে যারা আছে তাদের কাজ। আমরা শুধু বলতে পারি। এখন আমাদেরকে রোগীদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে”। এরপর ডাক্তার তরুণটি যে কথাটি বললেন, সেটাই কোভিড হাসপাতারের বর্তমান বাস্তব চিত্র - “এ অবস্থায় তিনমাস ডিউটি করছি। আমাদের ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয়দের অবস্থা, পারলে ভেগে যাই।”

দুঃসহ রাত ও ‘মানুষ’

সকালের আগে অক্সিজেন পাবো না। বাইরে থেকে আনলেও সকালের আগে সম্ভব নয়। কি হবে? শেষ রাতের মধ্যে দুটো সিলিন্ডার শেষ! বাকি অর্ধেক সিলিন্ডারটা। মিটারের কাটা ধীরে ধীর লাল দাগের দিকে এগুচ্ছে। দিনের আলো ফুটছে। কিন্তু ১৪ নম্বর বেডে নিকষ কালো যেন ঘিরে ধরছে! স্যাচুরেশন কমছে ...৭০...৬৫ ... বাবার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, ঘামছে, শরীর ঠান্ডা। হঠাৎ মিটারের কাটাটি থেমে গেল লাল দাগে। স্যাচুরেশন মাপলাম-৫২!! কি করবো! ওয়ার্ডে রোগীরা ঘুমোচ্ছে, বেডে বেডে ঘুরলাম। সিলিন্ডার নেই, যেগুলো আছে সেগুলো রোগীদের অক্সিজেন চলছে। এক ডাক্তার রোগী তাঁর সাথে পূর্বে আলাপ হয়েছিল। শ্বাসকষ্টের রোগী। তিনি জেগেছেন। তাঁর কাছে গিয়ে অবস্থাটা জানালাম, কি করবো? তিনি বললেন,তাঁর সিলিনডারটা ইনট্যাক্ট। সেটা নিয়ে গিয়ে যেন দ্রুত লাগাই। পরে সিলিন্ডার আসলে তাকে একটা দিলে হবে। দ্রুত তা নিয়ে অক্সিজেন লেবেল ১০ এর উপর বাড়িয়ে দিলাম। ধীরে ধীরে তাঁর শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক হলো। ঝুঁকি জেনেও নিজের অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে এক শ্বাসকষ্টের রোগী বাঁচালেন আরেক রোগীকে। এর নামই মানুষ।
করোনা ওয়ার্ডে এসে দেখেছি অমানুষকেও। দেখেছি, এ ওয়ার্ডে বৃদ্ধা মা পড়ে আছে, ছেলে ওয়ার্ডে দিয়ে পালিয়েছে, আর ভয়ে আসেনি। খোঁজও নেয়নি। শুনলাম, বাবা মারা গিয়েছে, পরিবারের কেউ লাশ নিতে আসেনি। এগুলোই আমাদের মনকে নাড়া দেয়, আমরা মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারাই, ধীরে ধীরে নিজেরাও অমানুষ হয়ে উঠি। অথচ এত কিছুর ভীড়ে মানুষের দেখাও আমি পেয়েছি এ ক'দিনে। ৫৫-৬০ বছরের এক আন্কেলের সাথে পরিচয় হলো। তাঁর স্ত্রী ডায়াবেটিক। ভদ্রলোক রাত দিন হাসপাতাল চত্বরে আছেন। পিপিই পরে ওয়ার্ডে গিয়ে স্ত্রীর দেখাশোনা করছেন। হাসপাতাল চত্বরেই ঘুম, খাওয়াদাওয়া। এ এক কঠিন বিষয়। ছোট হাসপাতাল চত্বরে বিরতি দিয়ে লাশবাহী গাড়ি, সাদা পিপিই পড়া স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা আসে। এককোণায় লাশ গোসল করানো হয়। থমথমে, দমবন্ধ করা পরিবেশ। মৃতের পরিবারের পক্ষ হতে একজন দুজন আসে।এ পরিবেশে ভদ্রলোক আছেন টানা। জিজ্ঞেস করলাম, মৃত্যুর ভয় হয় না? রাতদিন স্ত্রীর জন্য এ বয়সে যা করছেন, তরুণ বয়সেও তা কঠিন। আন্কেল দুঃখভরা স্বরে বললেন, উনি যদি মারা যান, আমি বেঁচে থেকে আর কি লাভ? তাই আর মরার ভয় পাই না! মরলে মরবো! থমকে গেলাম! এধরণের মানুষেরা আছেন বলেই মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারাতে নেই, মানুষের প্রতি ভালোবাসা আজও হারায়নি!

হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ার অপেক্ষায়

সকাল গড়িয়ে দুপুর গেল, অক্সিজেন এলো না। শ্বাসকষ্ট যাদের আছে, তাদের চোখেমুখে আতঙ্ক। বাবার অবস্হাও ভালো না। আইসিইউ খালি নেই। যেভাবেই হোক সিলিন্ডার আনতে হবে বাইরে থেকে। কোথাও সিলিন্ডার ভাড়া দিচ্ছে না, সুযোগ পেয়ে চড়া দামে বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। শুনলাম, দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে সিলিন্ডার সরবরাহ না করায়, এক ডাক্তার উর্ধ্বতনদের সাথে হইচই করে রাগ করে চলে গেছেন। সারাদিন সেদিন ৬-৭ জনের লাশ বের করতে দেখেছি। ১১টার দিকে আরেক দিদিকে অনুরোধ করে তাঁর সিলিন্ডার নিয়ে এসে বাবাকে দিলাম। আমার মেঝো ভাই Irfan uddin Kabir Arif আসকারদীঘির পাড়ের এক দোকান থেকে অবশেষে ৫টি সিলিন্ডার ভাড়া করতে পারলো, দোকানদার ভদ্রলোক সহৃদয়। রোগীর অবস্থা শুনে নিয়ে যেতে বললেন।
এর মধ্যে জেনারেল হাসপাতালের যেখানে টেস্ট হয়,সেখানের এক আয়া মারা গিয়েছেন। সে খালা ক্লিনিংয়ের চাকরি করতেন,গত তিনমাস ধরে বেতন পাননি।কোথায় বাড়তি বোনাস,ঝুঁকি ভাতা,সম্মান?!কি খেয়েছেন,কিভাবে বেঁচে ছিলেন?মরে গিয়ে হয়ত চিরদিনের জন্য বেঁচে গেলেন‼৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা এসেছে মৃত সহকর্মীকে বিদায় দিতে।একদিকে মৃত্যুর ভয়,অন্যদিকে পেটের টান।অনেকের শরীর খারাপ,আর শরীরে কুলোচ্ছেনা।
এই হচ্ছে চট্টগ্রামের প্রধান কোভিড হাসপাতালের করুণ চিত্র।অথচ চট্টগ্রামের লক্ষ লক্ষ মানুষের এটি ও বাকি দুইটি ছাড়া আর যাওয়ার জায়গা নেই।দ্রুত চিকিৎসা সুবিধা বাড়ানো না হলে,স্পষ্ট বুঝতে পারছি,রোগী বাড়লে আর সামাল দেওয়া সম্ভব হবেনা।যতটুকু চিকিৎসার ব্যবস্থা ভালমন্দ আছে,তাও মনে হয় হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়তে পারে।শুধু দিন গণনার অপেক্ষা! করোনা মোকাবেলায় শক্তিশালী,ভাল প্রস্তুতির দেশের চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালেই এ অবস্থা।দ্রুত কিছু করুন!

আইসিইউ

বাবাকে ৩১ তারিখ রাতে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।বেড পেয়ে গেলাম,কারণ সেদিনই বেশ কয়েকজন রোগী মারা গিয়েছে।সেসময় হাসপাতালের ওয়ার্ডে বাবার পাশে বড় ভাই Sharafuddin Kabir Anis ছিলেন।বিকালে ডিউটি করেছে ভাগ্নে Ishfaque Hassan.বাবাকে হুইলচেয়ার সহ নীচ থেকে দোতলায় তুলতে হবে,এরপর আইসিইউতে ঢোকাতে হবে।একজন আয়া আছে।বড় ভাইকে বলা হলো,আপনাদের আরেকজনকে ডেকে রোগী নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।এরকম ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আমাকে আবার বাসা থেকে ছুটে আসতে হলো।বড় ভাই ও আমি, আয়া মিলে দোতলায় তুলে আইসিইউতে ঢুকে বিছানায় তুলে দিতে হলো।বাবা দুই রাত আইসিইউতে ছিলেন।প্রথমদিন তাঁর অবস্থা স্টেবল ছিল।ডাক্তার বললেন,বাবার একটা হার্ট ফেইলিউর হয়েছে।শ্বাসকষ্ট হচ্ছে,কনটিনিউয়াস হাই ফ্লো অক্সিজেন দিতে হচ্ছে।ফলে হার্ট ফেইলিউর ও কোভিড দুই চিকিৎসাই চলছে।রোগীর বয়স যেহেতু ৮৬ ও পুরনো টিবি রোগী,কনডিশন ক্রিটিক্যাল।১ তারিখ রাত থেকেই বাবার অবস্থার অবনতি হয়।ভোররাতে স্যাচুরেশন ৩২ এ নেমে আসে।মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে বাবা মারা গেলেন ২ জুন,সকাল ১১ টায়।আমরা তাঁকে বাঁচাতে পারলামনা।আত্মীয়স্বজন,পুরো চট্টগ্রাম বারের আইনজীবী,বাবার শুভানুধ্যায়ী, আমাদের রাজনৈতিক বন্ধুমহল সবাই চেষ্টা করেছেন সহযোগিতা,সাহস দিয়েছেন।ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাইনা।চট্টগ্রাম বারের সেক্রেটারি এড Ahm Zia Uddinএসময়টাতে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন।তাঁর সহযোগিতায় কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন বাবার লাশ ধোঁয়ানো,কাফনের কাপড় পড়ানোর কাজটা করে।আর গাউসিয়া কমিটির সহযোগিতায় গ্রামের বাড়িতে জানাযা,দাফনের পর মায়ের পাশে কবরে তাঁকে রেখে এলাম!

আমার এ লেখা পড়ে কেউ মনোবল হারাবেন না।বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে ধারণা না থাকলেই বরং বিপদে মনোবল হারাবেন।এ পরিস্থিতিতে দরকার কঠিন,কঠোর মনোবল-সবাইকে নিয়ে বাঁচার জন্য!লড়াইয়ের জন্য!!

কি করতে পারি
সারাদেশের বিশেষ করে চট্টগ্রামের পরিস্থিতি শোচনীয়।প্রতিদিনই পরিচিতদের মৃত্যুর সংবাদ শুনছি।চিকিৎসা না পেয়ে মরছে মানুষ!তাই চিৎকার করে বলুন-I Can't Breath! মরার আগে আওয়াজ তুলে যান।তাতে অন্ততঃ আপনার পরিবারের বাকিরা বাঁচার সম্ভাবনা তৈরি হবে।আওয়াজ তুলুন
★কোভিড হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা চাই।(সরকার চাইলে এক সপ্তাহের ভেতর করতে পারে)
★জরুরী ভিত্তিতে পর্যাপ্ত ডাক্তার-নার্স-৩য়,৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ দাও।তাঁদের ঝুঁকি ভাতা,প্রণোদনা,বীমা নিশ্চত কর।★সমস্ত বেসরকারী হাসপাতাল অধিগ্রহণ করে সমন্বিত পরিকল্পনার অধীনে কোভিড ও অন্যান্য চিকিৎসা নিশ্চিত কর।
★করোনা সাসপেক্টেডদের জন্য হাজার হাজার বেডের আলাদা আইসোলেশন কেন্দ্র চালু কর।

_____________________

শফিউদ্দিন কবির আবিদ
Works at বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন
Studied L.L.B at LL.B at Chittagong Law College,Ctg.
Studied at Chittagong University

______________________________

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়