ডাক্তার প্রতিদিন

Published:
2020-05-30 16:53:57 BdST

করোনায় ৬৭ কোটি ভারতীয় আক্রান্ত হবে, নিমহ্যান্সের বক্তব্যে ভিন্নমত


 

ডেস্ক
_____________________


প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে ৬৭ কোটি ভারতীয় আক্রান্ত হবেন ,Nimhans এর এই বক্তব্যে ভারত জুড়ে তোলপাড় চলছে। ভিন্ন মত জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভারতবর্ষের প্রখ্যাত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরোসায়েন্সেস (Nimhans)-এর ডাক্তাররা বলছেন, লকডাউন ৪ উঠে গেলেই ভারতে করোনা সংক্রমণ পুনরায় বাড়বে। সেইসঙ্গে গোষ্ঠী সংক্রমণের পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। নিমহ্যান্সের ধারণা, ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক করোনার শিকার হবে। বছর শেষে প্রাণঘাতী ভাইরাসে ৬৭ কোটি ভারতীয় আক্রান্ত হবেন।

আরও একটা কথাও বলছে নিমহ্যান্সের চিকিত্‍‌সকেরা। এই ৬৭ কোটি ভারতীয়ের মধ্যে ৯০ শতাংশই জানতে পারবেন না তাঁরা করোনা পজিটিভ। কারণ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সংক্রমণের বাহ্যিক কোনও লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা যাবে না। মাত্র ৫ শতাংশের অবস্থা সংকটজনক হবে। তাঁদেরই হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। হিসেব অনুযায়ী, ৬৭ কোটির ৫ শতাংশ যদি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, তা হলেও সংখ্যাটা গিয়ে পৌঁছবে প্রায় তিন কোটিতে।

এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মত জানিয়েছেন কলকাতার প্রখ্যাত লোকসেবী চিকিৎসক, লেখক ,লোকনেতা অধ্যাপক ডা. রেজাউল করীম। তিনি বলেন ,

কোভিড ভাইরাস ডিজিজের মারন ক্ষমতা যে এবোলা, সার্স ও মার্স থেকে কম তা অনেক ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন। দিল্লিতে একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে যে উপসর্গহীন করোনা পজিটিভ শতকরা প্রায় 80%। কিন্তু,প্যানিকের গরু এখন গাছের মগডালে উঠে পড়েছে।তার প্রমাণ NIMHANS নিউরো বিশেষজ্ঞদের মত। এদেশে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের আকাল নেই। তবে, তারা সেনসেশনাল নিউজ তৈরী করতে অভ্যস্ত নন, মাটির কাছাকাছি তাদের অবস্থান। তারা জানেন, অকারণে ভয়ের আবহ তৈরি করে লাভ নেই, কোন বাঁধাধরা নিয়মে অতিমারিকে বাঁধা যায় না। বুঝতে সময় লাগে, বুঝে পরিকল্পনা রূপায়ণে আরো সময় লাগে।

এই প্রসঙ্গে মনে রাখা ভালো যে, আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত কেস ফ্যাটালিটির গড় হার তিন শতাংশের কাছাকাছি। এবোলার ক্ষেত্রে এই হার 56% ও মার্সের ক্ষেত্রে 36%।

জন হপকিন্সের দুজন বিশেষজ্ঞ সম্প্রতি মন্তব্য করেছে যে সার্স কোভ 2র মারণ ক্ষমতা ফ্লুর চেয়ে দশগুণ বেশি। এই যুক্তি মানা যাচ্ছে না। তারা নিজেরাই জানিয়েছে যে, নিউইয়র্কে এখন পর্যন্ত 21% লোকের শরীরে করোনা এন্টিবডি আছে, অথচ শরীরে সংক্রমণের কোন চিহ্ন কখনো পাওয়া যায় নি, যা তাদের "ভয়ানক মারাত্মক" তত্ত্বকে দুর্বল করে দেয়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই নিয়ে গবেষণা করছেন ও অনেকে মনে করেন যে ভারতে এই রোগের প্রকোপ কম হতে পারে UIPপ্রোগ্রামে আমাদের সাফল্যের জন্য।

সারা পৃথিবী জুড়ে করোনা রাজনৈতিক অস্ত্র হয়ে উঠছে। রুপানী যেমন বলেছেন, আহমেদাবাদে করোনা ছড়িয়েছে দিল্লির তবলীগের মাধ্যমে। কেন্দ্রীয় সরকার করোনার শুরুতে যে তাবলীগ ক্লাস্টার দেখাচ্ছিলেন, এখন আর দেখাচ্ছে না। এটা দেখালে বোঝা যেত যে রূপানীর কথায় কোন যুক্তি আছে কিনা। এক সঙ্গে সরকারের উচিত "নমস্তে ট্রাম্প ক্লাস্টার" ও উত্তরপ্রদেশ "গো-সৎকার", দক্ষিণ ভারতে "পুজো ক্লাস্টার" ও দেখানো।

তবে, তারচেয়ে অনেক ভালো রাজনৈতিক কথা না বলে বৈজ্ঞানিক ভাবে ক্লাস্টার বিশ্লেষণ- তার প্রাথমিক শর্ত হল, অসুখ থেকে ধর্ম বিযুক্ত করা। আমেরিকা , ইজরায়েল ও ভারত- এই তিন দেশের যে ধর্মগুরুরা বুক চাপড়ে বলেছিলেন যে তাদের করোনা হবে না, তাদের সকলের হয়েছে। ইজরায়েলের যে ধর্মগুরু বলেছিলেন যে করোনা হল সমকামিতার পাপের ফল, তিনি নিজেই আক্রান্ত হয়েছেন। "নাজদ_কারনি_আস_সয়তান"*দের ধারনা ছিল তাদের করোনা হবে না, তাদের দল বেঁধে করোনা হয়েছে। মুসলমানদের বদনামের জন্য ও তারা দায়ী।

করোনা রাজনীতির ঘোলা জলে শিকারী জেলের মত প্রস্তুত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দিলীপ ঘোষরা। না করোনা পাশবালিশের জন্য বলছি না। এদেশের রাজনীতিকরা জানেন যে তারা যত উল্টোপাল্টা বলবে তত তাদের নিয়ে আলোচনা হবে। দিলীপ ঘোষ তো বলেই দিয়েছে খবরে থাকতে হবে। গাছ কাটা, পা ধুইয়ে দেওয়া, বাজারে গোল্লা কাটা এসব হল প্রচারের রাজনীতি। করোনা পাশবালিশ ভেবে চিন্তে বলা একটা প্রচার কৌশল- এক ঢিলে দু পাখি Propaganda and trivialization- প্রচার কে প্রচার হল আবার ছোট ঘটনার তত্ত্ব ও খাড়া করা গেল।

আমাদের দুর্ভাগ্য হল, যে এদেশে রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার কথা কেউ ভাবেন না। একজন যদি দায়বদ্ধতার কথা বলেন তো তিনজন বলবে, কারো দায়বদ্ধতা নেই, শুধু মমতা বা মোদির দোষ ধরলে হবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ ডিগ্রিধারীদের মধ্যে এই trivialization র ঝোঁক বেশি। আমাদের একটা বড় সংখ্যক যেহেতু ব্যক্তিগত ত্রুটিমুক্ত নই, তাই এইসব ত্রুটি নিজের অজান্তেই আমাদের ডিফেন্সিভ করে তোলে। যদিও তার কোন যাথার্থ নেই। একজন আম জনতার সাথে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ফারাক তৈরী করতেই হবে। মমতার মতো চালাক রাজনৈতিক নেতারা জানেন যে বাঙালীর সূক্ষ্ম মূল্যবোধ এখনো অন্যদের থেকে বেশি। তাই, প্রশাসনিক সভাতেও সহজ ব্যক্তিগত কথা বলেন। বোঝাতে চান, যে তিনি কত সাধারণ, কত উচ্চমানের তার মূল্যবোধ, সামাজিক দায়বদ্ধতা। দিলীপ ঘোষ তাই টি শার্ট পরে গাছ কাটতে নেমে পড়ে। আর যে লোকটা কোন ভনিতা না করে যেটুকু জোগাড় করতে পেরেছে তাই নিয়ে অশক্ত শরীরে ত্রাণকাজে নেমে পড়ে তাকে খুনের আসামী বলে বিদ্রুপ করে।
যাইহোক, মমতা-মোদি দের বোঝার জন্য খুব কসরত করার দরকার নেই। ম্যাকিয়াভিলি তাদের কথা লিখে গিয়েছেন। একটু পড়ে নিন- "(পৃঃ62-63) প্রজাদের জন্য খুব বেশি উদার হয়ে নিজেকে দরিদ্র করে ফেলার যুক্তি নেই--কিছুদিনের মধ্যে সবাই তাকে উদার ভাবতে শুরু করবে। উদারতার অসুবিধা হল রাজকোষে বিপুল ঘাটতি হবে, লড়াইয়ের রসদ শেষ হয়ে যায়।ভবিষ্যতে শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য রসদ সংগ্রহ করে রাখতে হবে।" এই সব বাঁধানো রাস্তা ধরে আমাদের শাসকরা চলে। ওদের নিয়ে যত মেমে তৈরী করুন, যত আলোচনা করুন, তারা খুব আনন্দ সহকারে রাতের বেলা ওগুলো পড়ে প্রবল অট্টহাস্যে ফেটে পড়বে- নিজেদের পিঠ চাপড়ে নয়, আমাদের মূর্খামির উদ্দেশ্যে সেই অট্টহাসি।

(*নাজদের শয়তানের শিং কথাটি হজরত মহম্মদের। নজদ এর আক্ষরিক অর্থ যদিও উঁচু স্থান, আধুনিক পৃথিবীতে নজদ বলতে সৌদি আরবের নজদের কথা বোঝায়। এই নজদে সালাফি মতবাদের জন্মদাতা আব্দুল ওয়াহাবের জন্মভূমি)।

AD..

 

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়