ডাক্তার প্রতিদিন
Published:2020-05-10 17:11:48 BdST
সচিব বাবাকে নিয়ে ডাক্তারকন্যা যেভাবে হাসপাতালগুলোয় সেবা ভিক্ষা করে ফিরেছিলেন
ডেস্ক
______________________
সচিব বাবাকে নিয়ে ডাক্তারকন্যা যেভাবে ঢাকার
বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় সেবা ভিক্ষা করে ফিরেছিলেন,
আহমেদ জহুর লিখেছেন সেই মর্মস্পর্শী বিবরণ।
মেয়ে চিকিৎসক, বাবা অতিরিক্ত সচিব। অসুস্থ বাবাকে নিয়ে রাজধানীর বড় বড় হাসপাতালে ঘুরেছেন কন্যা। কোথাও বাবার চিকিৎসা হয়নি। শেষ পর্যন্ত বাঁচাতে পারেননি বাবাকে চিকিৎসক কন্যা সুস্মিতা আইচ! শনিবার বেলা ১২টার দিকে তার বাবা গৌতম আইচের মৃত্যু হয় বলে তিনি মিডিয়াকে জানিয়েছেন!
---
ডা. সুস্মিতা আইচ ৩৩৩ হটলাইন নম্বর থেকে সরকার যে স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছে, সেখানকারই চিকিৎসক।
তিনি বলেন, “বাবার আইসিইউ সাপোর্টটা খুবই দরকার ছিল, কিন্তু তা কোথাও পাওয়া যায়নি। বাবার চিকিৎসাই হল না, তিনি মারা গেলেন। আমি ডাক্তার হয়েও কিছু করতে পারলাম না।”
করোনা ছাড়াও অন্য রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হতে যে ভোগান্তিতে পড়তে হয়, অতিরিক্ত সচিব গৌতম আইচের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
সুস্মিতা আইচ বলেন, “বাবার কিডনির সমস্যা ছিল, নিয়মিত ডায়ালাইসিসের সময় প্রায়ই হঠাৎ করে প্রেসার বেড়ে যেত, শ্বাসকষ্ট হত, লাংসে পানি চলে আসত। তখন আইসিইউ সাপোর্ট হলে ঠিকও হয়ে যেত।”
---
বৃহস্পতিবার ল্যাবএইড হাসপাতালে অতিরিক্ত সচিব গৌতমের ডায়ালাইসিসের সময় প্রেসার বাড়ার পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট শুরু হলে ল্যাবএইডের ইমার্জেন্সি থেকে চিকিৎসক সুস্মিতা আইচকে ফোন করা হয়। সুস্মিতা বলেন, “আমি বাবাকে ল্যাবএইডে ভর্তি করাতে বলি। তখন তারা বলে, তাদের কনসালটেন্ট নেই, ভর্তি রাখতে পারবে না। তারা জানায়, ল্যাবএইডে তারা আইসিইউ সাপোর্ট দিতে পারবে না। তাই প্রেসার কমানোর ওষুধ দিয়ে বাসায় নিয়ে যেতে বলে। ল্যাবএইডে তিনি নিয়মিত যে ডাক্তারকে দেখান তিনিও সেদিন ছুটিতে ছিলেন। তখন আমার মনে হয়েছে বাসায় আনা ঠিক হবে না, এই মুহূর্তে অক্সিজেন দরকার। বিকাল ৪টায় ডায়ালাইসিস শেষ হয়। এরপর আমরা বাবাকে নিয়ে বিকাল ৫টার দিকে ইউনাইটেড হাসপাতালে যাই। তাদের কথা, শ্বাসকষ্ট যেহেতু হচ্ছে, কোভিড-১৯ কি না? অথচ তার কোনো জ্বর ছিল না। আমি নিজে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে সব কিছু বুঝিয়ে বললাম। তখন তারা বলল, কোনো রেফারেন্স ছাড়া তারা ভর্তি নিতে পারবে না। সেখানে আমরা কোভিড-১৯ টেস্ট করাতে চাইলে তারা আইইডিসিআরের কথা বলে। কিন্তু আইইডিসিআরতো টেস্ট বন্ধ করে দিয়েছে!”
---
এরপর বাবাকে নিয়ে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান ডা. সুস্মিতা।
তিনি বলেন, “তারাও টেস্ট করানোর কথা বলে স্কয়ারে নেওয়ার পরামর্শ দেন। সেখান থেকে আনোয়ার খান মডার্ণ হাসপাতালে নিয়ে আসি, কিন্তু তারা পেশেন্টকে দেখেইনি, চেকও করেনি। তারা বলে, ভর্তি নিতে পারবে না। যেহেতু আমি এই হাসপাতালে কাজ করেছি, আমি অতিরিক্ত পরিচালকের সঙ্গে কথা বলি। তিনি চেস্ট এক্সরে করিয়ে আনতে বলেন। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছিল বাবা স্ট্রোক করেছে। কারণ তার কথা বলা বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর তিনি কোভিড-১৯ টেস্ট করানোর কথা বলেন। ওখানে আইসিইউ সাপোর্ট দিতে পারবে না বলে জানানোয় এরপর বাবাকে স্কয়ারে নিয়ে যাই। স্কয়ার বলে, আমাদের পক্ষে ভর্তি নেওয়া সম্ভব নয়, আমরা টেস্ট বন্ধ করে দিয়েছি। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে যাই। তারা বলে, পেশেন্টকে কার্ডিয়াক সাপোর্ট দেওয়া দরকার, কিডনির পেশেন্ট যেহেতু। আমাদের এই সাপোর্ট শুরু হয়নি, আমরা পারব না। সেখান থেকে সোহরাওয়ার্দী কার্ডিয়াকে যাই। তারা রাখতে পারবে না বলে জানায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কথা বলি, তারাও বলে, এই মুহূর্তে ভর্তি নেওয়া সম্ভব না। আমি মিরপুরের রিজেন্ট হাসপাতালেও গিয়েছি। কী আর বলবো, আমাদের আশপাশে এমন কোনো হাসাপাতাল নেই যেখানে ভর্তি করানোর চেষ্টা করিনি। পরে সাড়ে ৯টার পর যখন আর কিছু করার ছিল না তখন আমরা বাসায় এসে বসে থাকি।"
---
সব হাসপাতালে ঘুরেও ভর্তি করাতে ব্যর্থ হয়ে মৃত্যুপথযাত্রী বাবাকে নিয়ে যখন বাসায় বসে আছেন, তখন তাদের এক আত্মীয় অনেক চেষ্টার পর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একটা ‘সিট ম্যানেজ’ হওয়ার খবর জানান। ডা. সুস্মিতা বলেন, “রাত ১০টার দিকে আমাদের একজন রিলেটিভ একটা রেফারেন্সে কুর্মিটোলায় একটা জেনারেল বেডের অ্যারেঞ্জ করেন। বাবার অক্সিজেনের খুব বেশি দরকার হওয়ায় তার কোভিড-১৯ এর কোনো উপসর্গ না থাকলেও তাকে ওই হাসপাতালে নিযে যাই। বাবাকে আলাদা কেবিনে রাখা হয়। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে বাবার অক্সিজেন ফল করতে শুরু করল। যে বেডে তাকে রাখা হয়েছিলসেখানে কোনো সরকারি ডাক্তার যায়নি। তারা আমাকে ওষুধ বুঝিয়ে দেয়, আমিই ওষুধ খাওয়াচ্ছি, আমার ভাই অক্সিজেন দিচ্ছে। আমি ডাক্তার হিসেবে মনে করি, বাবার করোনার কোনো উপসর্গ ছিল না। ডায়ালাইসিসের সময় তার আগেও এমন হয়েছে। এই অবস্থায় হাসপাতালগুলো চাইলেই তাকে ভর্তি নিতে পারতো। করোনা সন্দেহ হলে তাকে প্রয়োজনে আইসোলেশনে রাখতে পারতো, কিন্তু কেউ সেটা করেনি। আমাব বাবা প্রোপার টিটমেন্ট এর অভাবেই মারা গেলেন!”
---
কী যে মন্তব্য করবো ভেবে পাচ্ছি না। শুধু এটুকুই বলবো, এই যদি হয় একজন অতিরিক্ত সচিবের চিকিৎসা ব্যবস্থা, তখন সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে কী যে হচ্ছে বা হতে পারে, তা ভাবতেই গা শিউরে উঠছে! মহান স্রষ্টা সহায়....
[email protected]
০৯ মে, ২০২০
----------------------------------------------------------
#তথ্য : bdnews24.com. ছবি : গুগল....
AD..
আপনার মতামত দিন: