Ameen Qudir

Published:
2020-04-12 21:05:33 BdST

"অব্যবস্থাপনার পাহাড় ঢাকতে ছয় ডাক্তারকে বরখাস্ত করাটা ক্যাসিনো উইনিং!!"


 

ডেস্ক
_________________

কুয়েত মেত্রী হাসপাতাল থেকে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত ছয় চিকিৎসককে বরখাস্ত নিয়ে পেশাজীবি মহলে তোলপাড় চলছে। পেশাজীবিরা বলছেন, " অব্যবস্থাপনার পাহাড় ঢাকতে ছয় ডাক্তারকে বরখাস্ত করাটা ক্যাসিনো উইনিং"। সারা বিশ্বে চলছে ডাক্তার স্বাস্থ্যকর্মীদের মর্যাদা দান প্রক্রিয়া। আর বাংলাদেশ যেন চলছে , উদ্ভট উটের পিঠে। এখানে ডাক্তার স্বাস্থ্যকর্মীদের সিনেমা স্টাইলে গনশত্রু বানানো হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মত হল , এতে মুখ থুবড়ে পড়বে করোনা লড়াইয়ে শামিল স্বাস্থ্য সেক্টরের । বিদেশ ফেরেশতা ডেকে এনেও মওতের কাফেলা থামানো যাবে না। মধোবী চিকিৎসক ডা. অভিষেক ভট্টাচার্য বলেন, ভেংগে পড়া দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার দিকে যখন মিডিয়াসহ সকলে নজর দিয়েছে তখন ফজলুল হক এর মত ডাক্তারকে বরখাস্ত করাটা ক্যাসিনো উইনিং।

বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বেলায়েত হোসেন ঢালী বলেন, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের RP Medicine ডা.ফজলুল হক
দ্ব্যর্থহীন ভাবে বলেছেন, উনি কাজের প্রতি কোন অনীহা দেখান নাই। ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন এ আছেন এবং সেটাও আছেন কতৃপক্ষের নির্দেশিত হোটেলেই।
ডা.হীরম্ম চন্দ্র নাথ, জুনি.কনসালটেন্ট এনেসথেসিয়া , তিনি দুর্ঘটনায় পা ভেঙ্গে চিকিৎসাধীন আছেন তা তিনি লিখিতভাবে কতৃপক্ষকে অবহিত করেছেন।
ডা.ফারহানা হাসনাত,এমও- তিনি চাকরি হতে ইস্তফা দিয়েছেন।

মৈত্রী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক চিঠি ইস্যু করা হয়েছে ৯ তারিখ বৃহস্পতিবার,মাঝখানে ছিলো শুক্রবার ছুটির দিন,আর গতকাল শনিবারেই বহিষ্কার!!

কেনো এতো তড়িঘড়ি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ৬ জন চিকিৎসককে বহিষ্কার করলো?

অভিযুক্ত চিকিৎসকদেরকে কোন প্রকার কারণ দর্শানো নোটিশ ব্যতিরেকে কেন বহিষ্কার আদেশ দিলো?

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসককে বহিষ্কার করার কোনো ক্ষমতা আছে কি??

কাদের খুশি করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
চিকিৎসকদের 'বলির পাঠা' বানালো??


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক
রাশেদা রওনক খান জানতে চান, ছয় চিকিৎসককে বরখাস্ত করে কি প্রমাণ করলো স্বাস্থ্য প্রশাসন?
ফেসবুক স্টাটাসে তিনি বলেন,

ছয় জন চিকিৎসককে বরখাস্ত করে আসলে কি প্রমাণ করলো স্বাস্থ্য প্রশাসন? এই যে আপনারা দিনের পর দিন বলে গেলেন সব প্রস্তুতি আছে, অথচ কিছুই প্রস্তুতি নেই, জেলা শহরগুলোতে ঠিক মত একটা ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা নেই, করোনা রোগীকে চিকিৎসা দেবার জন্য পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই, জেলা-উপজেলায় টেস্ট করানোর কিট নেই, সিলেটে একজন ডাক্তার ভেন্টিলেটরের অভাবে নিজ ব্যবস্থায় এম্বুল্যান্সে করে ঢাকায় আসেন চিকিৎসা নিতে, একটা এম্বুল্যান্স পর্যন্ত দিতে পারেনা, এসবের জন্য স্বাস্থ্য প্রশাসনের কাউকে কি দায়ী করা হয়েছে, বরখাস্ত তো পরের বিষয়! সারাবছর যে পরিমাণ হাসপাতাল সামগ্রী কেনার নামে টেন্ডারবাজি হল, আফজালের মতো কর্মচারী অস্ট্রেলিয়াতে ছেলে মেয়ে পড়ায় নিজ খরচে আর ঢাকা শহরে ১২টি বিল্ডিং এর মালিক, তাঁকে কি চাকুরী হতে বরখাস্ত করা হয়েছিলো?

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সাংবাদিক পেটানোর জন্য বরখাস্ত হয়নি, প্রশাসনের একজন বৃদ্ধ মানুষদের কান ধরে ছবি তোলার জন্য বরখাস্ত হয়নি, একজন উপসচিবের জন্য ফেরি আটকে রাখার ফলে তিতাস নামের ছেলেটি মারা যাবার পরও দায়ী ব্যক্তির বরখাস্ত হয়নি, কিন্তু জাতির এই ক্রান্তি লগ্নে করোনা চিকিৎসার সময় চিকিৎসকদের বরখাস্ত করে কি প্রমাণ করা হল? নিজেদের দৈন্যতা?

 
এইযে প্রতিদিন পত্রিকায় পড়ছি, ত্রাণচুরি করছেন নেতাদের কেউ কেউ, তাদের কি কাউকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে?
এতো অমানবিক চিন্তা আসে কোথা হতে? হতে পারে তারা মানসিকভাবে দুর্বল, হতে পারে ট্রমার মাঝে আছেন, হতে পারে কারো সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি সেসময় যেতে পারেনি, হতে পারে পরিবারের একমাত্র সন্তান বলে মা তাঁকে যেতে দেয়নি...

এই ধরণের ঘটনা বিদেশে হরহামেশা আমরা দেখছি, পড়ছি| বিদেশে দুই/একজন ডাক্তার আত্মহত্যাও করেছে মানসিক চাপ নিতে না পেরে| এসব ক্ষেত্রে বাইরের দেশে তাদেরকে ছুটিতে যেতে বলা হচ্ছে কিছুদিনের জন্য| ডাক্তার হলেই যে মানুষ খুব মানসিকভাবে শক্ত হবেন, এমন তো নয়| তাদের কাছে কি কারণ জানতে চাওয়া হয়েছিলো? মানবাধিকার বলে তো একটা কিছু আছে, নাকি? তাদেরকে প্রয়োজনে অন্য কোথাও বদলী করে দেয়া যেতো, তাদেরকে দুই সপ্তাহের বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া যেতো| এভাবে দুর্বলের উপর রাষ্ট্রের নিপীড়ন করার চিত্র ভালো কিছু বয়ে আনবেনা| ঝিকে মেরে বউকে শেখাতে গিয়ে শেষে বউকে হারিয়ে ফেললে কিন্তু এই মুহূর্তে দেশ বিপদে পড়বে! এসব নির্বুদ্ধিতা থেকে জাতি মুক্ত হউক! মানবিক হউক রাষ্ট্র, মানবিক হউক নীতিনির্ধারকেরা। 

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়