Ameen Qudir

Published:
2020-04-08 16:11:01 BdST

পিপিই দাবি করার জেরে ঢাকায় তিন চিকিৎসককে বরখাস্তের অভিযোগ



রিপোর্ট : ওবায়দুর মাসুম, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
_______________________

নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার উপকরণ (পিপিই) দাবি করা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তিনজন চিকিৎসককে চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এক মাস আগে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার ঢাকার যে দুটি বেসরকারি হাসপাতালে অতি সংক্রামক এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে, তার একটি ধানমণ্ডির এই হাসপাতাল।

‘চাকরিচ্যুত’ চিকিৎসকরা বলছেন, ওই রোগীর মৃত্যুর আগেই তাদের এখানে আসা কয়েকজন রোগীর মধ্যে ‘নভেল করোনাভাইরাসের উপসর্গ’ দেখতে পান তারা। কনসালট্যান্টরাও তাদের বিষয়ে একই অভিমত দেন। তখন থেকেই পিপিই চাওয়া হলেও তা দেওয়া হয়নি।

এরপর গত মাসের শেষ দিকে হাসপাতালের আইসিইউতে একজন করোনাভাইরাস রোগীর মৃত্যুর পর চিকিৎসকদের জোরাল দাবির মুখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সুরক্ষা উপকরণ দিলেও তা জুনিয়র চিকিৎসকরা পাচ্ছিলেন না।

করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ‘চেপে যেতে বললে’ তা না মানা ও পিপিই নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ানোয় পাঁচজন চিকিৎসককে চাকরিচ্যুত করা হয় বলে অভিযোগ তাদের। পরে আবার দুইজন চিকিৎসককে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের পরিচালক (মেডিকেল সার্ভিসেস) ডা. এনায়েত মুন্সী প্রথমে বলেন, তাদের হাসপাতালে এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি।

পিপিইর দাবি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে চিকৎসকদের চাকরিচ্যুত করার বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, চিকিৎসকরা নিজেরাই আসে না।

“তো এখন আবার জয়েন করতেছে আস্তে আস্তে। হাসপাতালের সব ডিপার্টমেন্ট এখন খোলা। আইসিইউতে একজন রোগী মারা গিয়েছিল। সেজন্য আইসিইউর স্টাফগুলোকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছিল। তবে আজ আইসিইউ খুলেছি।”

তার এই বক্তব্য খারিজ করে ওই হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে অভিযোগ করেছেন, নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে এই হাসপাতালের চিকিৎসকরা কর্তৃপক্ষের কাছে সুরক্ষা সরঞ্জাম বাড়ানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু তাদের সেই অনুরোধে পাত্তা দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

একজন চিকিৎসক বলেন, “আমরা ইমার্জেন্সিতে কয়েকজন এমন রোগী পেয়েছি। কনসালট্যান্টদের দেখালে তারা বলেছেন, এটা করোনাভাইরাস রোগী শতভাগ শিওর। ওই মুহূর্তে আমাদের কারও একজনেও গ্লাভসও ছিল না। আমরা অনুরোধ করেছি পিপিই না দিলেও অন্তত মাস্ক, গ্লাভস ও স্যানিটাইজার দেন। কিন্তু স্যানিটাইজারও দিতে পারত না।

“এ অবস্থায়ও আমাদেরকে বলা হল, কোনো রোগী রেফার্ড করা যাবে না। দেখতে হবে, ভর্তি দিতে হবে।”


এ অবস্থায় গত ২২ মার্চ এই হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নভেল করোনাভাইরাস আক্রান্ত একজন রোগী মারা যায়। তারপর দ্বন্দ্ব আরও বাড়ে বলে জানান চিকিৎসকরা।

তারা জানান, ওই ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। ২৪ মার্চ নমুনার ফল পজিটিভ এলে পরদিন হাসপাতালের আইসিইউ বন্ধ করে দেওয়া হয়। চিকিৎসক-কর্মচারীদের একটা বড় অংশ হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। ২৬ মার্চও জরুরি বিভাগ ছাড়া হাসপাতালের সব বিভাগ বন্ধ থাকে।

কোয়ারেন্টিনে চলে যান আইসিইউ’র সব চিকিৎসাকর্মী। এছাড়া ইনডোরের ১০ জন চিকিৎসক, জরুরি বিভাগের তিনজন চিকিৎসক, একজন নার্স এবং একজন ওয়ার্ডবয়ও কোয়ারেন্টিনে চলে যান।

হাসপাতালের আরেকজন চিকিৎসক বলেন, “করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে কয়েকজন রোগী’ ভর্তির বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চিকিৎসকদের একাংশের বিরোধ চলছিল। আমাদের আশঙ্কা ছিল পিপিই না থাকলে আমরা সবাই ঝুঁকিতে পড়ে যাব। আমাদের থেকে এটা আরও অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে।

“তারা কখনোই সেটার ব্যবস্থা করেনি। উল্টো করোনাভাইরাসে রোগী মারা যাওয়ার বিষয়টি গোপন করার চেষ্টা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনা প্রকাশ না করতে সবাইকে বলে দেয় তারা।”

ওই রোগীর মৃত্যুর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করে। পিপিই সরবরাহের নিশ্চয়তা দেয়। এছাড়া লকডাউন চলার সময় সবার যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হবে বলেও আশ্বাস দেয়। কোনো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না বলেও আশ্বাস দিয়েছিল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।

এরপর পিপিই এলেও তা জুনিয়র চিকিৎসকদের ঠিকমতো সরবরাহ করা

হত না বলে অভিযোগ করেন একজন চিকিৎসক।

তিনি বলেন, “কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ানো এবং আইসিইউতে রোগীর মৃত্যু নিয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দেওয়ায় ৪ এপ্রিল পাঁচজন চিকিৎসককে বরখাস্ত করা হয়। পরে দুজনকে আবার পুনর্বহাল করা হয়।

“মিটিং ডেকে আমাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়। এভাবেই কাজ করতে হবে, নইলে চলে যেতে হবে।”

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়