Ameen Qudir

Published:
2020-03-31 14:40:26 BdST

করোনা প্রতিরোধে আমাদের করণীয় : জানালেন বাংলাদেশের শীর্ষ মনোচিকিৎসক


লেখকের ছবি

অধ্যাপক ডা. ঝুনু শামসুন নাহার
বাংলাদেশের প্রথিতযশ
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ
প্রাক্তন চেয়ারপারসন , মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা
_____________________________

আজ সারা বিশ্ব এক সংকটময় ক্রান্তিকাল পার করছে। এই কঠিন বিপদের সময় কি কি করা যেতে পারে? সংক্ষেপে আলোচনা করতে পারি।

১। জনসচেতনতা বৃদ্ধি যেমন
• সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা
• বার বার হাত ধোয়া
• নাক, মুখ, চোখে হাত না দেয়া
• সুষম খাদ্য বিশেষ করে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাওয়া
• কমপক্ষে ২১ দিন ঘরে থাকা (এ সময় সামর্থ্য অনুযায়ী সকলেই যেন খেটে খাওয়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশে দাড়ায়)

২। আইসোলেশন/কোয়ারিন্টিনে থাকা
• বিদেশ থেকে যারা এসেছেন তাদেরকে কমপক্ষে ১৪ দিন কোয়ারিন্টিনে থাকা বাধ্যতামূলক করা
• রোগীর সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদের ক্ষেত্রেও ১৪ দিন কোয়ারিন্টিনে থাকা বাধ্যতামূলক করা
• বয়স্কদের শিশু/কিশোর/যুবকদের কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখা। কারন তাঁরাই স্বাস্হগত ভাবে সবচেয়ে বেশী ঝুকিতে।

৩। ভাইরাসে আক্রান্ত সনাক্তকরন ও রোগ নির্নয়
• সামর্থ্য অনুযায়ী যতবশী সম্ভব ভাইরাসে আক্রান্ত সনাক্তকরন
• ভাইরাস পজেটিভ হলেই তাদের আইশোলেনে রাখা যদি সে সুস্হ (ক্যারিয়ার) ব্যক্তিও হয়। ১৪ দিন কোনো উপসর্গ দেখা না দিলে ডিসচার্জ করা যাবে ইউনিট থেকে
• যাদের মধ্যে মৃদু উপসর্গ আছে তাদের যথাযথ চিকিৎসা প্রয়োজন
• গুরুতর উপসর্গ হলে ভেন্টিলেটর আবশ্যক
• করোনার সাথে অন্যান্য অসুখ থাকলে তারও চিকিৎসা দিতে হবে করোনা ইউনিটেই
• পর্যাপ্ত টেস্টিং কিট প্রয়োজন এক্ষেত্রে। উল্লেখ্য যে কোভিড-১৯ রোগ পরীক্ষার সহজ ও স্বল্পমূল্যের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র। যুক্তরাষ্ট্রে এফডিএ (FDA) মাত্র ৪৫ মিনিটে সনাক্ত করা যায় এমন কিট অনুমোদন করেছে।

৪। সুরক্ষা সরন্জাম
• করোনা ইউনিটে যারাই কাজ করবেন সবারই সুরক্ষা সরন্জাম প্রয়োজন;যেমন ডাক্তার, নার্স, ক্লিনার ইত্যাদি
• যারা নমুনা সংগ্রহ করছেন
• যারা মৃতদেহের সৎকার করছেন
• অনেক প্রতিষ্ঠান স্হানীয়ভাবে PPE তৈরী করছেন তাদেরকে সাধুবাদ। তবে যেন WHO গাইডলাইন মেনে সেগুলো তৈরী করেন।পুনরায় ব্যাবহারযোগ্য PPE যেন যথাযথ ভাবে জীবানুমুক্ত (STERILISATION) করা হয়। তা না হলে স্বাস্হ্যকর্মীদের জন্য ঝুকিপূর্ন হবে

৫। চিকিৎসা ব্যাবস্হা
• সঠিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা করতে পারলে অনেক রোগীকে বাঁচানো সম্ভব। চিকিৎসা সরন্জামের অপ্রতুলতার কথা সারা বিশ্বই বলছে
• সকল করোনা ইউনিটে ভেন্টিলেটর প্রয়োজন; উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ সহ সব ইউনিটে
• নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন প্রয়োজন হলে মাস্ক দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করে করা যায়। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এ ব্যাবস্হা হয়তো শীঘ্রই করা সম্ভব সব করোনা ইউনিটে
• উল্লেখ করছি যুক্তরাজ্যের DYSON কম্পানি দশ দিনের মধ্যে পনেরো হাজার ভেন্টিলেটর সাপ্লাই করবে CoVent নামে to “address the specific needs”। এ কম্পানিটি VACUUM CLEANER AND HAND DRYER তৈরী করে
• আমরা এখন দেশে গাড়ী এসেম্বেল করছি, জাহাজ শিল্পে অনেক এগিয়ে রয়েছি। এসব কম্পানি কি এসময়ে specific needs address করবার জন্য এগিয়ে আসবে ভেন্টিলেটর তৈরীতে। এ বিষয়ে যথাযথ কতৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি আকর্ষন করছি

৬। গবেষনা
এ সংকটময় মুহুর্তে মনে হচ্ছে বিনোদনে আমরা যত ব্যায় করি গবেষনা/স্বাস্হ্য/শিক্ষা খাতে সে তুলনায় অর্থ বরাদ্দ অপ্রতুল। এদিকে বিশেষ ভাবে নজর দেয়া একান্ত প্রয়োজন। সেইসাথে গবেষক ও বিজ্ঞানীদের যথাযথ সন্মান প্রদর্শন করে হাইলাইট করা দরকার

৭। প্রতিষেধক বা VACCINE
• এ নিয়ে পৃথিবীর অনেক দেশে গবেষনা হচ্ছে। আশা করি শীগগীরই সুফল পাবো

আমি করোনা বিশেষজ্ঞ নই। তবুও এ ক্রান্তিকালে আমার দ্বায়িত্ববোধ থেকেই এ লেখা।
ঘরে থেকেই হালকা ব্যায়াম করুন, সুষম খাদ্য গ্রহন করুন, সুস্হ বিনোদনের মাধ্যমে নিজেকে কিছূটা হলেও ভারমুক্ত রাখুন। বই পড়ুন, মুভি দেখুন, পরিবারের সবার সাথে QUALITY TIME কাটান। সেই সাথে নিয়মিত রিলাক্সেশন এক্সারসাইজ করুন।
শেষে মনোচিকিৎসক হিসেবে বলি অতিরিক্ত আতংকিত না হয়ে বরং আমরা সতর্ক হই। ক্রনিক স্ট্রেস আমাদের ইমিউনিটির (প্রতিরোধ ক্ষমতা) ওপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আর আমরা জানি করোনা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের ওপরেই চেপে বসে বেশী। সেজন্য মনোবল সমুন্নত রেখে লড়াই-এর ময়দানে নামি। সৃষ্টিকর্তার অপার অনুগ্রহে আমরা জয়ী হবো।
WE SHALL OVERCOME।

##

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়