Ameen Qudir

Published:
2020-02-25 06:26:00 BdST

অধ্যাপনা বনাম ইউএইচএফপিও


ডা. সাঈদ এনাম
____________________

অনলাইনে সাম্প্রতিক একটা পোস্ট দেখে আমি দোটানায় ; কোথায় যাবো, কার পক্ষ ধরবো বুঝতে পারছিনা।

ইউএইচএফপিও হিসেবে ছিলাম ৩ বছর। বলা যায় ৩টি উপজেলা সফল ভাবে দাপটের সাথে চালিয়েছি। সাহস হারাইনি।

পাশাপাশি ছিলাম একজন পোস্ট গ্রাজুয়েশন করা স্পেশালিষ্ট চিকিৎসক। ইউএইচএফপিও শিপ এর পাশাপাশি ব্যক্তিগত ভাবে আমার মুল সাবজেক্টের বিভিন্ন সিম্পোজিয়াম সেমিনারে অংশ নিতে ইউরোপ আমেরিকা জাপান সহ বশ্বের অনেক দেশে যেতে হয়েছে৷ চেম্বারে ও ছিলো ব্যাস্ততা।

পরে একসময় সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে চলে এসেছি। বিদায় জানাতে হয়েছে স্বাস্থ্য প্রশাসন কে। তবে আমি স্বাস্থ্য প্রশাসন কে খুব মিস করি।

স্বাস্থ্য প্রশাসনঃ
আমার মতে বৈচিত্র্যময়, রোমাঞ্চকর একটা পোস্ট হলো ইউএইচএফপিও পোস্ট। যারা দায়িত্বে আছেন তারা বুঝেন, এনজয় করছেন।

সারাদিন -রাত ব্যস্ততায় পরিপূর্ণ পরিবেশ। অমুক উপজেলার, অমুন ইউনিয়নের, অমুক ওয়ার্ডের একটা বাচ্চার টিকা দেবার পর কনভালসন হয়েছে, কিংবা ডায়রিয়া আউট ব্রেক। মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, সাংবাদিকঃ ফোনের পর ফোন। মারমার কাট কাট অবস্থা। এক সময় সব ম্যানেজ, সব ঠান্ডা।

কম হলেও ২০০ স্টাফের অভিভাবক। ছাতার মতো অথবা বট গাছের মতো ঠায় দাড়িয়ে থেকে প্রয়োজন মিটাতে হয় সবার। দেখভালো করতে হয় সব।

আজ এই স্টাফের বিয়ে, তো'কাল ঐ স্টাফের জন্ম দিন, পরশু আরেক জনের বিদায় সম্বর্ধনা। তরশু কারো সন্তানের অন্নপ্রাশন। আরো আছে আজ এ আসতে পারছেনা, কাল ও আসবেনা, পরশু আরেকজন অন-অনুমোদিত অনুপস্থিত, তরশু কারো নানী শাশুড়ীর আপন ফুপাতো ভাই আই সি ইউ তে, আসতে পারছেন না, ছুটি প্রয়োজন। (আদতে সে বিয়েই করেনি!)। কারও ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়েছে কারোওবা জ্বর দিয়ে ঘাম।

শেষ নয়, সেই সাথে আছে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও সভাপতি কিংবা প্রধান অতিথি নতুবা বিশেষ অতিথি হিসেবে মঞ্চে থাকা। আরো আছে দিনের শুরুতে ও শেষে বায়োমেট্রিক দিয়ে সবাইকে লাইনে রাখা।

সরাসরি ডিজি মহোদয় এমনকি মন্ত্রণালয়ের সাথে ইউএইচএফপিও মহোদয়ের সম্পর্ক থাকে ক্ষেত্র বিশেষে।

যখন তখন স্থানীয় বা কেন্দ্রীয় অনেক হ্যাডম ওয়ালা পাবলিক কে চৌকসের সাথে মোকাবেলা করতে হয়। কেউ শাক দিয়ে মাছ ঢাকলো, নাকি মাছ দিয়ে শাক সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হয়।

তবে ইউএইচএফপিও পদটি পোস্ট গ্রাজুয়েশনহীন। তাই কিছুটা অফ পজিশনে থাকেন কেউ কেউ, কখনও কখনও। কেউ কেউ আছেন ব্যস্ততায় তাদের পোস্ট গ্রাজুয়েশন কম্পলিট করতে পারেন না। ইউএইচএফপিও দের পোস্ট গ্রাজুয়েশন এ সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা দিতে হবে, প্রয়োজনে কোটা রাখতে হবে। ইউএইচএফপিও দের ও সেই সুযোগ নিতে হবে।

যাহোক, সবশেষে নিরপেক্ষ ভাবে বলতে গেলে সবিনয়ে বলছি, ইউএইচএফপিও পদটি খুবই ভাইটাল পোস্ট। অনেক প্যারাময়, ইউএইচএফপিও কে একই সাথে এডমিনিস্ট্রেশন, একাডেমিক এবং পলিটিক্যাল সবদিক দেখতে হয়।

অন্যদিকে অধ্যপনা পোস্ট টি সম্পুর্ন আলাদা। অনেকটা এক ঘেয়ে এবং এক কামরায় বন্দী একটা পোস্ট। তেমন কোন বৈচিত্র্য নাই। সব খানে কেমন যেনো একটা পিন পতন নীরবতা। আর পিনপতন নীরব সিস্টেম ধীরে ধীরে অধ্যাপক মহোদয়দের দের জগৎকে একটা নির্দিষ্ট পরিসীমায় বন্দী করে ফেলে।

সোশ্যাল ইনভলভম্যান্ট তাদের কমে যায় একেবারে, জিরো হয়ে যায় এক সময়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী অধ্যাপক পাওয়া যায়। "সকাল ৭ টা হইতে ৮, বাদ জোহর হইতে পরদিন ফজর পর্যন্ত চেম্বার, আর শুক্রবার সারাদিনমান.."। ব্যাস, এটুকুই। চক্রাকারে ঘুরতে থাকে এই বন্দী জীবন।

এ থেকে দেশের সেরা মেধাবী অধ্যাপক নামক মানুষদের বের করে আনা উচিত, এবং তাদের নিজেরও বের হয়ে আসা উচিত।

একান্ত নিজের অভিজ্ঞতার কথা বললাম। ইউএইচএফপিও সাহেব বা অধ্যাপক মহোদয় কেউ দুঃখ পেলে নিজ গুনে স্কিপ করে যাবেন।
__________________________

ডা. সাঈদ এনাম
ডিএমসি কে-৫২, সাইকিয়াট্রিস্ট।
সহকারী অধ্যাপক
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ।
সাবেক ইউএইচএফপিও

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়