Ameen Qudir

Published:
2019-11-26 21:24:17 BdST

নিজ দেশের ডাক্তারদের প্রতি আস্থা রাখতে না পারাটা এক ধরণের কমন মাইন্ড সেটিং


ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল
বাংলাদেশের বিশিষ্ট রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ:
দু বাংলা সমাদৃত সঙ্গীত শিল্পী
________________________

পৃথিবী জুড়েই চিকিৎসা নিয়ে বাণিজ্য হচ্ছে৷ পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে চিকিৎসা এখন পণ্য।

মিশনারিজদের হাতে উপমহাদেশে হাসপাতাল সংষ্কৃতির গোড়াপত্তন হয়েছিল। তারা মশলার জাহাজে চড়ে, বগলে বাইবেল নিয়ে ইউরোপ থেকে এসেছিলেন। চিকিৎসার সাথে সাথে তাদের একটা হিডেন এজেন্ডাও ছিল৷ প্রভু যীশুর ব্র‍্যান্ডিং করা। উপরে যীশু নিচে ডাক্তারের নাম নিয়ে ওষুধ বড়ি খেয়ে, আর কাজ না হলে হাওয়া বদল করতে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। এই ছিল চিকিৎসা।

সেই থেকে ধারণা হলো চিকিৎসা হচ্ছে একধরণের স্পিরিচুয়াল ব্যাপার- নিঃস্বার্থ সেবা। ডাক্তার হলো দ্বিতীয় ভগবান।

কিন্তু সময় গড়িয়েছে। বিজ্ঞান এগিয়েছে। রোগনির্ণয় ও চিকিৎসাখাতে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন প্রযুক্তি। পুঁজি বাজারের বিকাশ হয়েছে৷ পুঁজি বাজার অর্থনীতিতে পুঁজিই হলো ঈশ্বর। চিকিৎসা কনজিউমার প্রোডাক্ট। দ্বিতীয় ভগবান ডাক্তাররা এখন আর মিশনারিজদের মত সাদা পোশাক পরে যীশু যীশু করেনা৷ তারা বিয়ে করে। সংসার হয়, বাচ্চা-কাচ্চা হয়। বাচ্চা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে৷ দ্বিতীয় ঈশ্বর গাড়িতে চড়ে৷ ফ্ল্যাট বাড়ি কেনে। ফরেন ট্যুর করে।

বর্তমান পৃথিবীতে 'কর্পোরেট হাসপাতাল' বলে একটি শব্দই তৈরি হয়েছে৷ সেটা হয়েছে জনগণের চাহিদা মোতাবেকই। সমাজের একটা শ্রেনী, যাদের হাতে টাকা আছে তারা লাক্সারি চায়, কম্ফোর্ট চায়৷ যার নেই সেও কামনা করে। দেশীয় ডাক্তারদের উপর ভরসা নেই বলে যারা বিদেশ যায় তারাও মূলত বাণিজ্যিক হাসপাতালেই যায়। ভারতের ফর্টিজ, এপোলো, সিংগাপুরের জেনারেল হাসপাতাল, ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ বা পাতায়া হাসপাতালের কাছে আমাদের দেশীয় চিকিতসা বাণিজ্য নেহাত শিশু। ওসব হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যায় আমাদের দেশের দশগুন। ওরা একে নাম দিয়েছে হেলথ ট্যুরিজম। কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য।

বাণিজ্য মাত্রেই খারাপ কিছু নয়। সমাজ দাঁড়ায় ব্যাবসা বানিজ্যের উপরই। সরকার সবকিছু দেবেনা, আশাও করা ঠিক না৷ বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে বেসরকারি হাসপাতালগুলির অবদান অনস্বীকার্য। সরকারি হাসপাতালে যেমন রোগী যায়, তেমন রোগী বেসরকারি হাস্পাতালেও যায়। একারণে দেশে দিন দিন বেসরকারি হাসপাতাল বাড়ছে। সুযোগ সুবিধা বাড়ছে৷ ডায়াগনস্টিক ফ্যাসিলিটি বাড়ছে। আবার সরকারি হাসপাতাল সবগুলো রোগীশূন্য হয়ে যাচ্ছে এরকমও না।

দেশের চিকিৎসায় জনগণের আস্থা নেই এটাও ঠিক না। বিদেশি চেইন হাসপাতাল গুলি এখন বাংলাদেশে হাসপাতাল করার জন্য উদগ্রীব। দেশীয় বিনিয়োগকারীরাও হাসপাতাল খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছে৷ স্কয়ার, ইউনাইটেডের পর এখন আকিজ গ্রুপ,সিটি গ্রুপ, বিআরবি গ্রুপও আধুনিক হাসপাতাল করেছে। মানুষের আস্থা আছে বলেই ব্যাবসায়ীরা বিনিয়োগ করছে৷ না থাকলে হতোনা।

আজকে যদি দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলি বন্ধ হয়ে যায় দেশে হাহাকার পড়ে যাবে। আর ব্যাবসা ছাড়া এগুলো টিকবেও না। সুতরাং বেসরকারি হাসপাতালে ব্যবসা লাগবেই৷ মাউন্ট এলিজাবেথ যেটা করছে সেটাও ব্যাবসা। ব্যবসা মাত্রেই খারাপ কিছুনা।

নিজ দেশের ডাক্তারদের প্রতি আস্থা রাখতে না পারাটা একধরণের কমন মাইন্ড সেটিং। এটা সারা দুনিয়াতেই কম বেশি আছে৷ যে ভারতীয় ডাক্তাররা আমাদের চোখে ভগবান তাদের নিয়েই নচিকেতা " ও ডাক্তার " গান লিখেন। কেরালার ডাকতার ও নার্সরা জগত বিখ্যাত। কেরালারা জনগণ ডাক্তার পিটানোতেও উপরেই আছে। ইউটিউবে বেশ কিছু ভিডিও আছে৷ ডাক্তার নির্যাতন বন্ধ করার জন্য অস্ট্রেলিয়া কঠোর আইন করেছে৷ তার মানে ওখানেও ডাক্তার আক্রান্ত হয়।

তাই বলে বলছিনা আমাদের ডাক্তারদের সমস্যা নেই৷ সমস্যা জর্জরিত সমাজে সমস্যা থাকবেনা এটা ভাবা তো বোকামি। কিন্তু সেটা এমন নয় যে এখানে কিচ্ছু হয়না। এমন নয় যে এদেশে কোন চিকিৎসা হয়না।
#

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়