Ameen Qudir
Published:2016-12-31 19:49:29 BdST
ডাক্তারের ওপর সব দায় চাপিয়ে হাসপাতালে নানা সিন্ডিকেট
ডা. শিরিন সাবিহা তন্বী
__________________________
অডিটের কারনে ফ্রি রুগীর আলট্রাসনোর আগে ডকুমেন্টস দেখে নি আমরা।রুগীকে রেফারেন্স আইডি কার্ডের নাম জিজ্ঞাসা করলে নাম বলল,সম্পর্ক বলল বাবা।কিন্তু ছবির ভদ্রলোকের ছেলে এত বড় হবার কথা না।একটু ধমক দিতেই সত্য বেরিয়ে এল।একশ টাকা দিয়ে আইডি কার্ডের ফটোকপি কিনেছে সে সামনে থেকেই।।
বুঝলাম দালাল চক্র !!!
উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র,হেল্থ কমপ্লেক্স,সদর হাসপাতাল,মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অথবা যে কোন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রকে ঘিরে বেশ কিছু মানুষ সৎ বা অসৎ পথে জীবিকা নির্বাহ করার পথ বের করে।
# পরীক্ষা নিরীক্ষায় মিনিমাম চার্জ না দিয়ে ফ্রি করাবার জন্য পেপারস রেডী করার দালাল গ্রুপ।
# রিপোর্ট বা অপারেশন আগে করিয়ে দেবে বলে হাসপাতালের কর্মচারী দ্বারা গঠিত গ্রুপ।
# কিছু কার্ড ঝোলানো সাংবাদিক রুপী চাঁদাবাজ।এরা আত্মীয় বলে অচেনা লোকদের থেকে টাকা নেয় এবং হাসপাতালের চার্জ ফাঁকি দেয়।
________________________________

চতুর্থ শ্রেনীর নিয়োগ বন্ধ বলে কন্ট্যাক্ট সার্ভিসে কিছু কর্মী।এরা যেহেতু সরকার থেকে বেতন পায় না এরা সবথেকে করাপটেড গ্রুপ।এদের থেকে সরকারী তৃতীয় চতুর্থ শ্রেনীর অনেকেই রেগুলার মাসোহারা আদায়ে ব্যস্ত থাকে।এরা সিন্ডকেট করে কেবিনের রুগী থেকে বিপুল বকশিশ নেয়।ডেলিভারীর পর বাচ্চা কোলে দিয়ে অযাচিত বকশিশ নেয়।রাতে যখন একা কোন ডাক্তার ডিউটিতে থাকে তখন রিতীমত ব্লাকমেইল করে ডাক্তারকে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা লিখতে চাপ প্রয়োগ করে।ট্রলী ঠেলে পরীক্ষা করাতে ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়।ট্রলী ঠেলা বাবদ রুগীর থেকে আর পরীক্ষা বাবদ ঐ সেন্টার থেকে কমিশন আদায় করে।সিন্ডিকেট টা এতই জটিল যে চিকিৎসক কথা বললে তার ডিউটি টাইমে কাউকে পাওয়া যাবে না।আর সব ডাক্তার একত্র হওয়া দূরহ।তবু যদি হয়।ওরা সকলে হরতাল করবে।ডাক্তারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেবে।।
# হাসপাতালকে ঘিরে যে ডায়াগনষ্টিক সেন্টার গুলো গড়ে উঠে তার বেশীর ভাগের ই মালিক এলাকার সাংবাদিক,কমিশনার,রাজনীতিবিদ আর সন্ত্রাসী টাইপ লোকজন।রুগীকে পরীক্ষা করাতে পাঠানোর জন্য এরা আউটডোরে এসে ডাক্তারের সামনে বসে থাকে।ইগনোর করলে সাজানো রুগী হয়ে চিকিৎসকের গায়ে হাত!!
____________________
________________________
# ডাক্তার ক্যান্টিনের ও লিজ থাকে এলাকার সন্ত্রাসীদের হাতে।প্রশাসন বাধ্য হয় দিতে।কারন মেডিকেল প্রশাসনের পাওয়ার এক্সারসাইজের সুযোগ নাই।।
# রুগীর খাবারের জন্য ও দরপত্র আহ্বান করা হয়।ঐ এলাকার কেউ কন্ট্রাকটারী পায়।রুগীর খাবার ভাল মন্দ,মিষ্টি না তিতা এর কিছু চিকিৎসকের জানার সুযোগ নাই।।
# হাসপাতালের ওয়ার্ডে বিছানা পত্র,চাদর,বালিশ বিছানা এসব কিছুর দায়িত্বে স্টাফ নার্স।এরা সময় মত ঔষধ না দিলে,ডাকলে না পেলে,ডাঃ দের কে রুগীর ব্যাপারে ইনফরমেশন না দিলে সেটার দায়ভার একান্তই তাদের।
# হাসপাতালের মধ্যে বসেই প্রশাসনিক দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেনীর কর্মকর্তা ডাক্তারদের থেকে কিংবা বিভিন্ন কাজের কন্ট্রাকটারী হিসেবে বা রেডিওলোজী ,প্যাথলজির পরীক্ষা নিরীক্ষা বা কেবিন থেকে অনৈতিক পথে আয় করে প্রচুর অর্থ।যা নিয়ে ডাক্তার কথা বলার দুঃসাহস টুকু করলেও ওদের শক্ত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে লড়বার আক্কেল সেলামী দিতে হয়।এবং এই কঠিন সময় গুলোতে সাহস বা শক্তি হয়ে পাশে কাউকেই পাওয়া যায় না।।
অত্যন্ত মজার ব্যাপার চিকিৎসা পেশার মত একটা টিম ওয়ার্কে সাধারন জনগন সব কিছুর জন্য এক এবং একমাত্র ডাক্তারকেই দায়ী করে।।ছেলেবেলায় পড়া "এইম ইন লাইফ" রচনা এজন্যে খানিক দায়ী।কোটি কোটি মানুষ ই ছেলেবেলায় পড়েছে - বড় হলে ডাক্তার হবে।বিনা পয়সায় রুগীর/দুস্থের সেবা করবে।যারা চান্স পেয়েছে সেই দুর্ভাগারাই কেবল ডাক্তার।রচনায় তো নিজে কি খাবে লেখা ছিল না।এখন ডাক্তার না হয়ে যারা অন্য কিছু হয়েছে তাদের পকেট ভর্তি টাকা,আরাম,আয়েশ সব আছে।কিন্তু ঐ যে না হতে পারা এইম!ডাক্তার হলে ফ্রি রুগী সেবা।
তাই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যা কিছু ঘটে সব এক্সপেকটেশন আর দায়ভার সব ডাক্তারের উপর চাপিয়ে বাকী সব অন্যায়কারীদের দ্বিগুন উদ্যমে অন্যায় করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।।যার ফলাফল এতটাই ভয়ংকর রূপ ধারন করছে যে স্বাস্থ্য খাতে বিশ্বের ইতিহাসে বর্বরতম অধ্যায় পার করছে বাংলাদেশ।।
# ডাক্তারের_গায়ে হাত_তোলার_এই বর্বরতার_জবাব এই বাংলা আরো ভয়ানক রূপে পাবে।
____________________________
ডা. শিরিন সাবিহা তন্বী । জনপ্রিয় কলামিস্ট। কথাশিল্পী। মেডিকেল অফিসার, শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
আপনার মতামত দিন: