Ameen Qudir

Published:
2019-08-04 06:27:16 BdST

ডেঙ্গু রোগীদের জীবন বাঁচাতে নির্ঘুম সুপার হিরোদের কথা


একজন সুপার হিরো আইরিন নবী। তার কথা উঠে এসেছে বিবিসির প্রতিবেদনেও। ছবিটি বিবিসির সৌজন্যে নেয়া।

ডেস্ক
_______________________
লড়েই চলেছেন চিকিৎসকরা। নিজেদের জীবন বাজি রেখে সদা অতন্দ্র নির্ঘুম রোগীদের পাশে। জীবন রক্ষার পণ তাদের। বাচাতেই হবে মানুষকে। তাদের এই মহায়ুদ্ধের কথা একদম আসছে না মিডিয়ায়। মিডিয়া ব্যস্ত ডাক্তারবিরোধী নানা ইস্যু বানিয়ে বাজার গরম করতে। তার মাঝেও কৃতজ্ঞ মানুষের অনন্য আত্মতৃপ্তি থেমে নেই। অনেকে জানাচ্ছেন ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে লিখে।
সুলেখক রাফি শামস তার এক লেখায় নিজ অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন কৃতজ্ঞ সুললিত ভাষায়। তিনি জানান, বোনের ছেলেকে নিয়ে শিশু হাসপাতালে গিয়েছিলাম ‘ডেঙ্গু’ সন্দেহে। সেখানে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা বুথ খোলা হয়েছে। ডেঙ্গু সন্দেহ করছি, বলার পর তারা সরাসরি NS1 টেস্ট করতে পাঠালো। আলাদা স্লিপ দিয়ে দিল যেটা দেখালে টিকিট কাটা এবং টেস্ট করানোর কাজটা সাথে সাথে করে দেয়া হবে, আলাদা সিরিয়াল লাগবে না। এই টেস্ট তারা বিনামূল্যে করছে এবং ১০ মিনিট এর মধ্যেই রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের কপাল ভালো আমার বোনের ছেলের ডেঙ্গু নেগেটিভ এসেছিলো। কিন্তু ডেঙ্গু পজিটিভ আছে এরকম রোগীর অভাব নেই। এমার্জেন্সিতে এই পরীক্ষা সম্পন্ন হয়, তাই সেখানে কিছু সময় থেকে অবস্থাটা বুঝতে চেষ্টা করলাম।

শুধু যে ডেঙ্গু রোগী আসছে তা নয়, এর সাথে অন্যান্য রোগীতো আসছেই। তাদের ট্রিটমেন্ট করতে হচ্ছে। ব্যবস্থাপত্র লিখে দিতে হচ্ছে, এমার্জেন্সি রোগীকে ভর্তির জন্য বেড খালি আছে কিনা সেটারও খোঁজও তাদেরকেই নিতে হচ্ছে। এক বেডে দুজন করে রোগী দেয়ার পরেও কোন বেড ফাঁকা নেই। নতুন কাউকে ভর্তি নেয়া যাচ্ছে না। এরই মধ্যে ‘উপর’ থেকে ফোন আসছে, অমুক স্যার, তমুক স্যারের রোগীর জন্য বেড দরকার সেই তথ্য টুকে রাখতে হচ্ছে। এরমধ্যে কীভাবে যেন এক সাংবাদিক ঢুকে পড়েছে। তিনি বিভিন্ন তথ্যের জন্য একে ওকে প্রশ্ন করছেন। বাইরে একজন গার্ড ক্রুদ্ধ এবং প্যানিকড স্বজনদের সামলানোর চেষ্টা করছে। সে এক ম্যাসাকার অবস্থা। যে তিন জন মানুষ এই সামগ্রিক অবস্থা হ্যান্ডেল করছে, তাদের ধৈর্য্যের সীমা কতটুকু, আমার জানা ছিলো না। তবে ঐ দুজন ডাক্তার এবং একজন সহকারী যেভাবে সব কিছু সামলাচ্ছে সেটার জন্য কোন প্রশংসা বাক্য যথেষ্ট নয়।

অন্যান্য সরকারি হাসপাতালের অবস্থা আমার জানা নেই, তবে সম্ভবত এর থেকে ভালো হবার সম্ভাবনা নেই। এই মুহুর্তে আমাদের মেয়রদ্বয় যদি ‘ডেঙ্গু ভিলেন’ হয়ে থাকে, তবে আমাদের সুপার হিরো হচ্ছে আমাদের ডাক্তার এবং নার্সরা। স্বল্প সামর্থ্য, স্বল্প লোকবল নিয়ে তারা যে বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করছেন সেটার জন্য কখনোই তাদের ধন্যবাদটুকু দেয়া হবে না, বরঞ্চ ছিদ্রান্বেষণ হতে পারে, হচ্ছে।

আমাদের দেশের সাংবাদিকরা কখনোই খুব একটা সেন্সিবল ছিলেন না। এই ক্ষেত্রে তারা সেন্সিবিলিটি দেখাবেন- এই আশা আমরা করতেই পারি। এখন পর্যন্ত কত মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং কতজন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছে- এই তথ্যও তাদের প্রচার করা উচিত যেন মানুষের প্যানিক কিছুটা প্রশমিত হয়। সেই সাথে ডাক্তারদের ভিলেন হিসেবে উপস্থাপন না করে, সরকারি হাসপাতাল গুলোতে ডাক্তারদের যেসব অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে সেগুলো এড্রেস করা উচিত।

এই দেশে কেউই তার কাজটি ঠিক মতো করে না। ডাক্তাররা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে তাদের স্বাভাবিক কাজটা করার চেষ্টা করছে- এর জন্য তাদের প্রতি আলাদা করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা যেতেই পারে।

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়