Ameen Qudir

Published:
2019-07-30 22:06:50 BdST

ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় স্কয়ার হাসপাতালের বিশাল বিল: তদন্তে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর


 


ডেস্ক
_______________________

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৬ জুলাই রাত ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মারা যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী ফিরোজ কবির স্বাধীন। এরআগে ২৫ তারিখ রাত ১১টায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।

এই ২২ ঘণ্টায় ফিরোজের চিকিৎসা বাবদ প্রায় ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা বিল করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফিরোজ কবিরের স্বজনরা অভিযোগ তুলেছেন, এই বিলটিতে সামঞ্জস্যহীনতা রয়েছে।

বিলটি নিয়ে সমালোচনা এবং বিতর্ক তৈরি হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।

ফিরোজ কবিরের দুলাভাই মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বিবিসি বাংলাকে বলেন, আমরা কিছুই করি নাই। তারা বলছে আপনাদের কিছুই করতে হবে না। যা করার আমরাই করবো। জরুরী বিভাগে ভর্তির ২০-৩০ মিনিটের মধ্যে ওরা লাইফ সাপোর্টে দিয়ে দিছে।

তিনি অভিযোগ করেন, ওই হাসপাতালে কী কী টেস্ট করছে তাও আমরা জানি না। আসলে সব টেস্ট ওরা নিজেরাই করছে। বাইরে থেকে করা হয়নি। তবে বিলের সামারিতে টেস্টের সংখ্যা লিখছে। টেস্টের যে কাগজপত্র আছে সেটাও আমরা কখনোই দেখিনি।

খরচ বাবদ ভর্তির সময়েই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ৫৭ হাজার টাকা দিয়েছেন ফিরোজের স্বজনরা। যা বিলের ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা থেকে বাদ দিলে বাকি থাকে আরো ১ লাখ ২৯ হাজার টাকা। এই টাকা তারা পরিশোধ করেননি বলেও জানানো হয়।

তবে বিলের যে কপিটি বিবিসি বাংলাকে দেয়া হয় সেখানে চূড়ান্ত বিল দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৯৩২ টাকা।

কবির অভিযোগ করেন, যখন ভর্তি করি তখন ডিউটি ডাক্তার আমাদের বলেছিলো যে, সেখানে ভর্তি করলে প্রতিদিন ৬০-৭০ হাজার টাকা বিল হবে। তবে ২২ ঘণ্টা পার হলে এই বিল সামারি দেয়া হয় ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা।

‘তাদের কথা মতো ধরলেও দুই দিনের বিল এক সাথে করলেও আসে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তারপরও আরো ৪৬ হাজার টাকা বাড়তি বিল ধরিয়ে দেয়া হয়েছে আমাদের।’

এ বিষয়ে জানতে স্কয়ার হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ করা হলে সেখানকার কাস্টমার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিতর্কিত বিলটি নিয়ে বলেন, একজন মরণাপন্ন রোগী যখন আইসিইউতে থাকে তখন বিভিন্ন ধরণের টেস্ট একঘণ্টা-আধাঘণ্টার ব্যবধানে করতে হয়। যখন কারো ডেঙ্গু থাকে তখন তাকে সিবিসি, ইলেক্ট্রোলাইট থাকে। ডেঙ্গুর টেস্ট থাকে।

বিলটিতে ল্যাবরেটরি চার্জ অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের টেস্টের জন্য বিল ধরা হয়েছে ৭৩ হাজার ৮৩৬ টাকা। উল্লেখ করা হয় যে, আইসিইউতে থাকা অবস্থায় তার অন্তত ৪২-৪৩টি টেস্ট করানো হয়েছিলো। তবে ফিরোজের কি কি পরীক্ষা করানো হয়েছিলো তা নির্দিষ্ট করে বলেননি তিনি।

তবে তিনি জানান, ওনার ৪-৫ ব্যাগ রক্ত লাগছে। প্লাটিলেট লাগছে ৫ ব্যাগ যেগুলোর বিল আমাদের এখানে অনেক। ৫ ব্যাগ প্লাটিলেটে খরচ হয় ৩৬ হাজার টাকার মতো। রক্তের ক্রস ম্যাচিংয়ের জন্য লাগে সাড়ে তিন হাজারের মতো।

ফার্মেসি বা ওষুধের জন্য ৫১ হাজার ১৯৯ টাকা দেখানো হয়েছে।

ল্যাবরেটরি চার্জ দুই বার উল্লেখ করা আছে বললে কাস্টমার সার্ভিসের ওই কর্মকর্তা বলেন যে, প্রথমে ইমার্জেন্সি বিভাগে তার অবস্থা বোঝার জন্য ৯টি পরীক্ষা করা হয় যার খরচ ধরা হয় ১৪ হাজার ১০৪ টাকা। পরে আইসিইউতে নেয়ার পর বাকি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়। এরমধ্যে সিবিসি, ইলেক্ট্রোলাইট, ডেঙ্গুর টেস্ট করা হয়েছে।

বিলটির বিষয়ে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায় বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন তারা।

এরইমধ্যে তাদের একটি প্রতিনিধি দল স্কয়ার হাসপাতালে গিয়ে বিলটির বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করছেন বলে জানানো হয়।

অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, এই ছাত্রের বিস্তারিত তথ্য আমরা আনতে পাঠিয়েছি। তারা কিভাবে চিকিৎসা দিয়েছে তা আমরা অন্য চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে দেখবো।

তিনি বলেন, আমরা নজরদারিটা এমন ভাবে করার চেষ্টা করছি যাতে এই ডেঙ্গুর অসময়ে কেউ যেন মানুষকে না ভোগাতে পারে।

ল্যাবরেটরি টেস্ট কোথায় করিয়েছে সেটা আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখবো। সেখানে কত নিয়েছে সেটাও দেখা হবে। আমরা অন্য আরো অনেক ডায়াগনস্টিক হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি বিশ্লেষণ করে দেখবো, যোগ করেন তিনি।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়