Ameen Qudir

Published:
2019-05-29 21:06:39 BdST

পঙ্গু হাসপাতালে উপচে পড়ছে সারা দেশের বিপুল রোগী : ৩ বছর পর অপারেশনের তারিখ


 

 

ডা. সাহজাহান সাজু
__________________________

বাংলাদেশে আরও কয়েকটি পঙ্গু বা অর্থোপেডিক হাসপাতাল গড়ে তোলা দরকার। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতালে) উপচে পড়ছে রোগী। সারাদেশের রোগীর চাপ সামলাতে ডাক্তার স্বাস্থ্যকর্মীরা হিমশিম। কোন ভাবেই এই হাসপাতাল দেশের বিশাল চাপ আর নিতে পারছে না। এ কারণে নানারকম ভুল বোবোঝাবুঝিও হচ্ছে। রোগীদের অপারেশনের সিরিয়াল পড়ছে ২ / ৩ বছর পরেও। সম্প্রতি এক রোগীকে পর্যায় ক্রম মেনে অস্ত্রোপচারের জন্য ভর্তির তারিখ দেওয়া হয়
তিন বছর পর ২০২২ সালের ২১ মার্চ । এ নিয়ে মিডিয়ায় বিষোদ্গার হচ্ছে। অথচ পঙ্গু হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতা বা অপারেশন ক্ষমতা কোন মিডিয়াই আমলে না নিয়ে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে জেহাদে নেমে পড়েছে।
কয়েক মাস আগে সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় যান ‘আলফা’ ধাক্কা দিলে পড়ে গিয়ে পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায় বরিশালের নথুল্লাবাদ এলাকার বাসিন্দা মো. মাসুম বিল্লাহর (২১)।

এরপর বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে পাঠান।

এর পর রোগী স্বজনসহ চিকিৎসা নিতে গত ২৩ মার্চ রাজধানীর শ্যামলীতে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতালে) যান ।

চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা করে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে এক মাস পর যেতে বলেন। নির্ধারিত সময়ে তিনি কাগজপত্র নিয়ে হাজির হলে তাকে তিন বছর পর ২০২২ সালের ২১ মার্চ অস্ত্রোপচারের জন্য ভর্তির তারিখ দেওয়া হয়।

ভর্তির তারিখ জেনে রীতিমতো হতভম্ব হয়ে যান মাসুম বিল্লাহ। তার দুর্ভোগের কথা জানিয়ে সময় এগিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান। হাসপাতাল থেকে তাকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, এর আগে তারিখ দেওয়া সম্ভব নয়।

মাসুম বিল্লাহ পরে মিটফোর্ড হাসপাতালে যান। সেখানে অর্থোপেডিক বিভাগে রোববার তার অস্ত্রোপচার হয়েছে। মিটফোর্ডের চিকিৎসকরা বিশেষ ব্যবস্থায় তার চিকিৎসা করেন।

কিন্তু পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, তাদের সেখানে রোগীর অসম্ভব চাপ। রোগীর অপারেশনের বিশাল লাইন ও সিরিয়াল। এই বছরের পর বছরের রোগীর অপারেশনের সিরিয়াল সামলাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অভিজ্ঞ সার্জন, স্বাস্থ্য কর্মী ও অপারেশন থিয়েটার দরকার। অন্যথায় সারা দেশের অব্যাহত চাপ সামলানো সম্ভবই নয়। নতুনভাবে বিশাল পরিসরে হাসপাতালকে ঢেলে সাজানো দরকার।

রোগী মাসুমের কাহিনি মিডিয়ায় সয়লাব


মাসুম বলেন, ‘২৩ মার্চ পঙ্গু হাসপাতালের বহির্বিভাগে যাই। টিকিট কেটে ডাক্তার দেখাই। ডাক্তাররা আমার টেস্টের কাগজপত্র দেখেন এবং এক মাস থেরাপি নিতে বলেন। এক মাস থেরাপি নেওয়ার পর দেখা করি। তখন ২০ থেকে ২২ জনের ফাইলের সঙ্গে আমার ফাইলটি নেন চিকিৎসকেরা। অপেক্ষা করার পর তারা টিকিটে ২০২২ সালের ২১ মার্চ ভর্তির ডেট লিখে দেন।’

তিনি জানান, তিন বছর পর ভর্তির তারিখ দেখে তিনি হতভম্ব হয়ে পড়েন। বলেন, ‘আমি পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারি না। পায়ে ব্যথা অনেক। আমার দুর্ভোগের বিষয়টি জানিয়ে দ্রুত অপারেশন করার অনুরোধ জানাই। কিন্তু তারা জানান, সিরিয়াল অনেক লম্বা। সবাই অপেক্ষা করছে। কোন সিরিযাল কেউ ছেড়ে দিলে তবে সেখানে ঢোকানো সম্ভব। ডাক্তাররা রোগীকে ঢাকার অন্য কোন সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। বলেন, তাদের পক্ষে সম্ভব হলেও হতে পারে। সে অনুযায়ী মাসুম মিটফোর্ডে আসেন। সেখানে বেড খালি থাকায় ও অপারেশন ডেট পান।

এ ব্যাপারে পঙ্গু হাসপাতালের ডাক্তার মিডিয়াকে বলেন , হাসপাতালে লিগামেন্টের রোগী ভর্তির জন্য মাত্র দুটি বেড আছে। সপ্তাহে দুজনের বেশি ভর্তি করা যায় না। রোগী আসেন দিনে ৬০ জন। তাই অস্ত্রোপচারের দীর্ঘ অপেক্ষার সারিতে থাকতে হয় রোগীকে।

একজন রোগী অস্ত্রোপচারের জন্য তিন বছর অপেক্ষা করতে পারেন কি না, তা জানতে চাইলে ডাক্তার বলেন, এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। এখানে এটাই সিস্টেম। সরকারি হাসপাতালে কোনো রোগীকে “না” বলা যাবে না। কিন্তু এখানে বেড স্বল্পতা রয়েছে। হাসপাতালে ৫০০ বেডের নতুন ভবন হচ্ছে, তখন সমস্যার কিছু সমাধান হতে পারে।’

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়