Ameen Qudir

Published:
2019-03-19 22:07:41 BdST

সেই কন্যাটিকে নিয়ে মর্মস্পর্শী বিবরণ লিখলেন চিকিৎসক


 

 

 

ডা. সাঈদ এনাম
_____________________________

#হোম_ডেলিভারী

" স্যার আমি বিদেশে থাকি। ছুটি শেষ, আমি চলে যাবো আগামী সপ্তাহে। কিছুদিন আগে এর রোগীর সাথে আপনার চেম্বারে এসেছিলাম। শুনলাম আপনি মানসিক রোগের চিকিৎসক। সে সময় আপনার সাথে আমার মেয়ে নিয়ে দুটো কথা বলেছিলাম। আপনি বলেছিলেন নিয়ে আসতে। আজ নিয়ে এসেছি"।

চেহারাটা মনে পড়লো। সেদিনের কথাও আবছা মনে হলো। ওর মেয়েটা নাকি একটু সাদাসিধে প্রকৃতির। আর ভালো করে কথা বলতে পারেনা। আমি বলেছিলাম, পারলে নিয়ে আসতে।

মেয়েটার বয়স দশ বছর। খুব একটা পরিষ্কার করে কথা বলতে পারেনা। নাম জিগ্যেস করায় সেটাও সুন্দর করে বলতে পারলোনা। কেবল হাসলো। অসম্ভব মায়াময় সে হাসি। গায়ে লাল জামা আর মাথায় লাল ফিতে যেনো ছোট্ট একটা পরী। মায়ের হাত ধরেই গুটিশুটি মেরে একই চেয়ারে বসে আছে।

স্কুলে যেতে চায়। প্রচন্ড আগ্রহ স্কুলের প্রতি। কিন্তু পড়াশোনা করতে পারেনা। এখনো ক্লাস ওয়ানের ছাত্রছাত্রীদের সাথে বসে, খেলা ধুলো করে। ছোট ছোট বাচ্চা ছেলেমেয়েরা তার সাথে খুব মেশে।

আসলে তার মেন্টাল রিটার্ডেশন। মনের বয়সটা খুব একটা বাড়েনি। ঐ পাঁচ বছরেই আটকে গেছে। তাই ঐ বয়সীদের সাথেই ভাব। নিজের কাজ গুলো ঠিকমতো করতে পারেনা। মা'ই করিয়ে দেন সব। বাবা বললেন, 'মেয়েটা বয়স দশ হয়ে গেলো এখনো কিচ্ছু বুঝেনা। দেখেন এই ছেলের বয়স আড়াই বছর । সিজার অপারেশন করে বের করতে হয়েছে অথচ দেখুন কি শক্ত সবল আর টপাটপ ঠিয়া পাখির মতো সব বলে বেড়ায়' কোলের ছেলেকে ইংগিত করে বললেন।

মা বাবা কারোর বংশে মস্তিষ্কের বিকাশ জনিত কোন জটিলতা বা রোগ আছে কিনা, জিগ্যেস করলাম। দুজনেই 'না' সুচক জবাব দিলেন। তাছাড়া স্বামী, স্ত্রী দুজনের মধ্যেও কোন শারীরিক বা মানসিক রোগের বিন্দু মাত্র লক্ষন নেই। সুস্থ সবল। তবে কেনো হলো এমন? ব্রেইনের বিকাশ জনিত রোগীদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পারিবারিক হিস্ট্রি পজেটিভ থাকে। সর্বশেষ প্রশ্নের উত্তর শুনে মনটা খারাপ হলো আমার।

"ওর জন্মের সময় আমি ছিলাম বিদেশে। মা বাবা বৃদ্ধ সেকালের। বাচ্চার জন্ম হয় হচ্ছে এই বলে বলে প্রায় ছয়দিন কেটে যায়। তারপরও ধাত্রী, আত্নীয় স্বজন কেউ বলেনি হাসপাতালে নিন। সবাই বলেছেন হয়ে যাবে। অবশেষে সপ্তম দিনের মাথায় মেয়েটা হয়। ধবধবে ফর্সা, যেনো চাঁদের টুকরো। কিন্তু নিথর। সবাই ভেবেছিলো মেয়েটা মৃত। কিন্তু হঠাৎ করে নড়তে থাকে তার বুকটা। মেয়ে আর মেয়ের মা'কে নিয়ে সরকারি হাসপাতালে। সেখান থেকে দ্রুত কিছু স্যালাইন অক্সিজেন সহ সদর হাসপাতালে। মেয়েটিকে আলোর বাক্সের ভিতর স্যালাইন আর ইঞ্জেকশন এর উপর ২৭ দিন রাখা হয়। মাঝেমধ্যে বের করে একটু দুধ পান করাতে হতো। ডাক্তার, নার্স সবাই খুব চেষ্ট করেছে। অবশেষে সে ফিরে আসে। হাটা বসা সব কিছুই দেরীতে হয়েছে। স্যার মেয়েটা কি স্বাভাবিক হতে পারবেনা। ওর বয়সী মেয়েরা এখন ক্লাস ফোরে পড়ে", বাবা চোখের জল মুছলেন।
মেয়েটা বাবার দিকে তাকিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে হাসছিলো, যেনো লাল টুকটুকে একটা ছোট্ট পরী।
________________________

ডা. সাঈদ এনাম

সাইকিয়াট্রিস্ট

মেম্বার, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন।
মেম্বার, ইউরোপিয়ান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন।

#হোম_ডেলিভারী

" স্যার আমি বিদেশে থাকি। ছুটি শেষ, আমি চলে যাবো আগামী সপ্তাহে। কিছুদিন আগে এর রোগীর সাথে আপনার চেম্বারে এসেছিলাম। শুনলাম আপনি মানসিক রোগের চিকিৎসক। সে সময় আপনার সাথে আমার মেয়ে নিয়ে দুটো কথা বলেছিলাম। আপনি বলেছিলেন নিয়ে আসতে। আজ নিয়ে এসেছি"।

চেহারাটা মনে পড়লো। সেদিনের কথাও আবছা মনে হলো। ওর মেয়েটা নাকি একটু সাদাসিধে প্রকৃতির। আর ভালো করে কথা বলতে পারেনা। আমি বলেছিলাম, পারলে নিয়ে আসতে।

মেয়েটার বয়স দশ বছর। খুব একটা পরিষ্কার করে কথা বলতে পারেনা। নাম জিগ্যেস করায় সেটাও সুন্দর করে বলতে পারলোনা। কেবল হাসলো। অসম্ভব মায়াময় সে হাসি। গায়ে লাল জামা আর মাথায় লাল ফিতে যেনো ছোট্ট একটা পরী। মায়ের হাত ধরেই গুটিশুটি মেরে একই চেয়ারে বসে আছে।

স্কুলে যেতে চায়। প্রচন্ড আগ্রহ স্কুলের প্রতি। কিন্তু পড়াশোনা করতে পারেনা। এখনো ক্লাস ওয়ানের ছাত্রছাত্রীদের সাথে বসে, খেলা ধুলো করে। ছোট ছোট বাচ্চা ছেলেমেয়েরা তার সাথে খুব মেশে।

আসলে তার মেন্টাল রিটার্ডেশন। মনের বয়সটা খুব একটা বাড়েনি। ঐ পাঁচ বছরেই আটকে গেছে। তাই ঐ বয়সীদের সাথেই ভাব। নিজের কাজ গুলো ঠিকমতো করতে পারেনা। মা'ই করিয়ে দেন সব। বাবা বললেন, 'মেয়েটা বয়স দশ হয়ে গেলো এখনো কিচ্ছু বুঝেনা। দেখেন এই ছেলের বয়স আড়াই বছর । সিজার অপারেশন করে বের করতে হয়েছে অথচ দেখুন কি শক্ত সবল আর টপাটপ ঠিয়া পাখির মতো সব বলে বেড়ায়' কোলের ছেলেকে ইংগিত করে বললেন।

মা বাবা কারোর বংশে মস্তিষ্কের বিকাশ জনিত কোন জটিলতা বা রোগ আছে কিনা, জিগ্যেস করলাম। দুজনেই 'না' সুচক জবাব দিলেন। তাছাড়া স্বামী, স্ত্রী দুজনের মধ্যেও কোন শারীরিক বা মানসিক রোগের বিন্দু মাত্র লক্ষন নেই। সুস্থ সবল। তবে কেনো হলো এমন? ব্রেইনের বিকাশ জনিত রোগীদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পারিবারিক হিস্ট্রি পজেটিভ থাকে। সর্বশেষ প্রশ্নের উত্তর শুনে মনটা খারাপ হলো আমার।

"ওর জন্মের সময় আমি ছিলাম বিদেশে। মা বাবা বৃদ্ধ সেকালের। বাচ্চার জন্ম হয় হচ্ছে এই বলে বলে প্রায় ছয়দিন কেটে যায়। তারপরও ধাত্রী, আত্নীয় স্বজন কেউ বলেনি হাসপাতালে নিন। সবাই বলেছেন হয়ে যাবে। তাছাড়া হাসপাতাল ক্লিনিকে গেলেই নাকি অযথা হাজার হাজার টাকার অপচয়। অবশেষে সপ্তম দিনের মাথায় মেয়েটা হয়। ধবধবে ফর্সা, যেনো চাঁদের টুকরো। কিন্তু নিথর। সবাই ভেবেছিলো মেয়েটা মৃত। কিন্তু হঠাৎ করে নড়তে থাকে তার বুকটা। মেয়ে আর আধমরা মা'কে নিয়ে ছুটেন সরকারি উপজেলা হাসপাতালে"।

"সেখান থেকে দ্রুত কিছু স্যালাইন অক্সিজেন সহ সদর হাসপাতালে। মেয়েটিকে আলোর বাক্সের ভিতর স্যালাইন আর ইঞ্জেকশন এর উপর ২৭ দিন রাখা হয়। মাঝেমধ্যে বের করে একটু দুধ পান করাতে হতো। ডাক্তার, নার্স সবাই খুব চেস্টা করেছে, কস্ট করেছে একটি মাস। অবশেষে সে ফিরে আসে। হাটা বসা সব কিছুই অন্য বাচ্চাদের তুলনায় দেরীতে হয়েছে। স্যার মেয়েটা কি স্বাভাবিক হতে পারবেনা। ওর বয়সী মেয়েরা এখন ক্লাস ফোরে পড়ে...", বাবা চোখের জল মুছলেন।

মেয়েটা বাবার দিকে তাকিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে হাসছিলো, যেনো লাল টুকটুকে একটা ছোট্ট পরী।
___________________________

ডা. সাঈদ এনাম

সাইকিয়াট্রিস্ট

মেম্বার, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন।
মেম্বার, ইউরোপিয়ান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন।

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়