Ameen Qudir

Published:
2019-02-26 03:47:44 BdST

মৃত ডাক্তারের জাল সার্টিফিকেট বানিয়ে আক্তার মস্ত ডাক্তার: চেম্বার , প্র্যাকটিস ছিল জমজমাট


 


গাজীপুর থেকে সংবাদদাতা
________________________

 

মাত্র এসএসসি আক্তারুজ্জামান সবাইকে ঘোল খাইয়ে ছাড়ছেন। দীর্ঘদিন ছিলেন ভবঘুরে । পরে বেশ জবর বুদ্ধি করলেন। দুই বছর মেয়াদি পল্লী চিকিৎসকের প্রশিক্ষণ নিয়ে এক সার্জনের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিন্তু বুদ্ধিধর আক্তার থেমে থাকার নয়। এক পর্যায়ে মৃত এক ডাক্তারের নাম ধারণ করার প্লান আসে তার মাথায়। সেমতো বাগেরহাটের প্রয়াত ডাক্তার আকরাম হোসেন দিদারের সার্টিফিকেটের ফটোকপি সংগ্রহ করেন তিনি। পরে এই সার্টিফিকেটকেই মূল পুঁজি করে নিজেকে ডা. দিদার নামে পরিচয় দিতে থাকেন। নাক-কান-গলা; ঘাড় এবং মাথাব্যথা বিশেষজ্ঞ ও সার্জন হিসেবে শুরু হয় তার প্রতারণা।

ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু থেকে শুরু করে নানা প্রতারণার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। ভুয়া ডাক্তার হিসেবে পুলিশের হাতে একবার গ্রেফতার হয়ে ৬ মাস কারাভোগও করেছিলেন তিনি। কারাগার থেকে বের হয়ে আবারও একই পথে নামেন। এ পর্যায়ে শনিবার রাতে গাজীপুর মহানগরের চান্দনা এলাকার আপন ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদেই নিজের দোষ স্বীকার করে প্রতারণার নানা তথ্য দিয়েছেন আক্তারুজ্জামান।

জানা যায়, মৃত এমবিবিএস ডাক্তার আকরাম হোসেন দিদারের নাম ধারণ করে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিলেন আক্তারুজ্জামান। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার রহিমাবাদ গ্রামে। বাবার নাম চাঁদ আলী। গ্রেফতারের পর ভুয়া এই ডাক্তার জানিয়েছেন, বাগেরহাটের বিভিন্ন হাসপাতালে নিজেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা দিতে শুরু করেন তিনি। ভিজিট নিতেন ৫০০ টাকা। এরই মধ্যে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করা বাগেরহাটের ভট্টপ্রতাপের সুতাল গ্রামের আকবর হোসেনের ছেলে ডা. আকরাম হোসেন দিদার ২০১৪ সালে মারা যান। তিনি বাগেরহাট সদরের ডাকবাংলা মোড় এলাকার হেলথ কেয়ার ক্লিনিকে নিয়মিত বসতেন। আক্তারুজ্জামানও তখন ওই এলাকার কোনো একটি ক্লিনিকে বসতেন।

ডা. দিদারের মৃত্যুর পর আক্তারুজ্জামান নতুন একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করবেন বলে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে হেলথ কেয়ারে গিয়ে দু'একজন ডাক্তারের সার্টিফিকেটের ফটোকপি চান। কর্তৃপক্ষ ডা. দিদারের সব সার্টিফিকেটের ফটোকপি আক্তারুজ্জামানকে দিয়ে দেয়। এই সার্টিফিকেটগুলোই কালার প্রিন্ট করে ডা. দিদার হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেওয়া শুরু করেন তিনি। ডা. দিদারের মুখে দাড়ি থাকায় আক্তারুজ্জামানও দাড়ি রাখেন। সেজে ওঠেন একদম আসল ডাক্তার। এর পর কখনও মাদারীপুর, কখনও চাঁদপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ সার্জন হিসেবে অসংখ্য রোগীর অস্ত্রোপচার করেন। মাদারীপুরে তার হাতে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

আক্তারুজ্জামান পরে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের এক হাসপাতালে সার্জন হিসেবে যোগ দেন। সেখান থেকে পুলিশ তাকে ভুয়া ডাক্তার হিসেবে গ্রেফতার করলে ৬ মাস কারাবাসের পর মুক্তি পেয়ে চলে আসেন গাজীপুরে। ডা. দিদারের সেই সার্টিফিকেটকে আবারও মূল পুঁজি করে গাজীপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার নামে প্রতারণা শুরু করেন। টাকার জন্য অপ্রয়োজনে রোগীদের অস্ত্রোপচারসহ নানা রকম হয়রানি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তার এ প্রতারণার খবর পান গাজীপুরের পোড়াবাড়ি ক্যাম্পের র‌্যাব সদস্যরা। অবশেষে ওই ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে ওই হাসপাতালে অভিযান চালানো হয়। এ সময় আক্তারুজ্জামানের কাছ থেকে অপারেশনে ব্যবহূত যন্ত্রপাতি, ভুয়া ভিজিটিং কার্ড ও ডাক্তারি ব্যবস্থাপত্র উদ্ধার করা হয়।

লে. কমান্ডার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রতারণা করার কারণে এর আগেও গ্রেফতার হয়েছেন ভুয়া ডাক্তার আক্তারুজ্জামান। জেলও খেটেছেন। নিজেকে এমবিবিএস ডাক্তার পরিচয় দিয়ে একাধিক বিয়েও করেছেন তিনি।

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়