Ameen Qudir

Published:
2018-12-13 23:57:54 BdST

একটু টাকা পয়সা হলেই বাংলাদেশীরা স্বদেশী স্পেশালিস্টের সাজেশনকে পাত্তা দিতে চান না


 

 


ডা. তারিক আলম অনি
________________________________

তিন দিন ধরে তিন সুপুত্রের বাবার বুকে ব্যথা। তিন ছেলে সবাই প্রতিষ্ঠিত, তিনজনই আমার চেয়ে বয়সে বড়, ঠিকাদারী ব্যবসা করেন, কেউ কারো থেকে কম বুঝেন না। তিন পুত্রের বাবার আগে NSTEMI (মাইনর হার্ট অ্যাটাক) ছিল, ইন্ডিয়ার কলকাতা থেকে রিং পরিয়ে এনেছেন। তারা দেশে ডাক্তার দেখান না (খুবই ভালো কথা)। হার্টের রোগী নিয়ে দেশে ডাক্তার না দেখিয়ে কিভাবে ম্যানেজ করে আসছেন সেটাই আমার বোধগম্য হলো না। তিন জনই পরিচিত বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়দের মধ্যে গোটা পাঁচ দেশী ডাক্তারকে ফোন দিলেন, সবাই হাসপাতালে নিতে বললেও কারও কথাই শুনলেন না। যারা কিছু ঔষধ যোগ করতে বললেন তাদের উপর একটু খুশি হলেন, ফার্মেসীতে থেকে এনে খাওয়ালেন।

আমি বিদেশী ডাক্তার হয়েও দেশ থেকে পাশ করা বলে, সবচেয়ে খারাপ উপদেশটা দিলাম। কোনরকম ঔষধ তো দিলামই না, বললাম জিহ্বার নীচে দেওয়ার যে এসপিরিন এর ছোট্ট জিটিএন ট্যাবলেট বাসাতেই আছে সেটা দিয়ে তাৎক্ষণিক ঢাকা মেডিকেল/ জাতীয় হৃদরোগে নিয়ে যেতে। বারান্দায় ফেলে রাখে...কেবিন ব্যবস্থা হবে কি না...কেয়ার টা ভালো হয় না... তোমরা বিদেশী ডাক্তাররা তো শুনেছি কোন ঔষধই দিতে পারো না... এসব যুক্তিতে আমার উপদেশ আরও দ্রুত উড়িয়ে দিলেন।

সেদিন থেকে বাবার শ্বাসকষ্ট, কথাও বন্ধ। বাধ্য হয়ে দামী প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে গেছেন। এসি কেবিন পাওয়া গেছে, ২৪ ঘন্টা নার্স ডাকলেই পাওয়া যায়। রিপোর্ট আমাকে ইনবক্স করলেন। ইসিজি তে STEMI( মেজর হার্ট অ্যাটাক)। কোন বিশেষজ্ঞ নাকি দেখেছেন। বললাম ব্রেইন এর CT করেন। বিশেষজ্ঞ নাকি হেসেই উড়িয়ে দিয়েছে, বলেছে CT লাগবে না। যাই হোক আরও একদিন পর আরেকজন বিশেষজ্ঞ দেখে CT করতে বললেন, CT করা হলো- দেখা গেল মাথার বাম গোলার্ধও উড়ে গেছে, ঘন কালো তার বর্ণ। অর্থাৎ স্ট্রোক ( Ischemic Stroke) হয়েছে হার্ট অ্যাটাকের সাথে।

ডাক্তাররা খুব পরিষ্কার বুঝতে পারছেন কী হয়েছে! যারা ডাক্তার নন তাদের জানাচ্ছি, রোগীর হার্ট অ্যাটাক করে হার্ট ঠিকমতো পাম্প করতে পারেনি, মস্তিস্কে রক্ত সরবরাহ কমে গেছে, আগে থেকেই ছোটখাটো ব্লক ছিল, তাই একটি অংশে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে এখন স্ট্রোক হয়ে গেছে।

এখন ছেলেরা ভিসা আর কাগজপত্র নিয়ে দৌড়াচ্ছেন ইন্ডিয়া যাবেন এবং আমাকে জিজ্ঞেস করছেন- “এবার যেহেতু মেজর অ্যাটাক, কলকাতার থেকে মাদ্রাজের হাসপাতাল ভালো হবে কিনা? টাকা পয়সা তাদের কাছে কোন ব্যপার না...”

আমি অবাক হয়ে একটা ব্যপার ভাবছি, “ আমাদের দেশের মানুষের কাছে একটু টাকা পয়সা হলেই তারা সব কিনে ফেলতে চান, কোন স্পেশালিস্ট বা এক্সপার্টের সাজেশনকে কেন যেন পাত্তা দিতে চান না এবং চেষ্টা করেন সিস্টেম কে তাদের মত করে কথা বলাতে...”

রোগীর আরোগ্য কামনা করছি, যদিও ডাক্তারী শাস্ত্রমতে এই অবস্থা থেকে খুব একটা আরোগ্যের কিছু আছে বলে আমার জানা নেই।
________________________

ডা. তারিক আলম অনি
রেজিস্ট্রার
ডিপার্টমেন্ট- এক্সিডেন্ট এন্ড ইমার্জেন্সী,
গ্ল্যাডস্টোন হাসপাতাল।
সেন্ট্রাল কুইন্সল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া।

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়