Ameen Qudir

Published:
2017-03-11 15:12:20 BdST

ইন্টার্নদের শাস্তি মওকুফ,চিকিৎসকদের অধিকার আদায়ের প্রথম বিজয়





ডা. শিরিন সাবিহা তন্বী
__________________________

 

আমি যা দেখি,তোমরা কি তা দেখ??
দেখার চোখ আলাদা বলেই আলাদা করে দেখা,আর বোঝার ক্ষমতা ও একেকজনের একেক রকম।আমি আমার ভাবনাটা বলছি।


আমি শজিমেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্নদের অভ্যুদয় এর ঘটনাটার কথা বলছি।
শেষ ভাল যার সব ভালো তার,পুরনো প্রবাদ টি মনে করে শেষটা আমাদের মনঃপুত হয়নি।
তাই বলে কি আমরা বিফল?

না।।বরং চিকিৎসা পেশার মানোন্নয়ন এবং সম্মান পুনুরূদ্ধারে এই ঘটনাটি একটি মাইল ফলক।
আমাদের ভবিষ্যতে প্রাপ্য স্বাধীনতায় এই ঘটনা একুশের চেতনা সম।


হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা প্রতিনিয়ত সম্মুখীন হচ্ছিল বিভিন্ন ধরনের অন্যায় অত্যাচারের।রোগীর স্বার্থে রোগীর আত্মীয় স্বজনকে সরে যেতে বললে,বেশী অসুস্থ বাচ্চাটাকে সিরিয়াল ব্রেক করে আগে দেখলে,পাতি নেতার বাড়ী সরকারী হাসপাতালের ডিউটি রেখে রোগী দেখতে না গেলেই এক দল অশিক্ষিত,বর্বর,কুলাঙ্গার পশুর মত ঝাপিয়ে পড়ছে ডাক্তারদের উপর।
হাড় ভাঙ্গছে,দাঁত ভাঙ্গছে,হাত কাটছে।তিক্ত থেকে তিক্ততর করে তুলছে ডাক্তারদের সাধারন রোগীর উপর।আর এই সব ঘটনায় প্রত্যক্ষ সাহায্য করছে এদেশের কিছু সাংবাদিক।যারা সত্য প্রচারের ব্রত নিয়ে এই পেশাতে এলেও লাক্সারী আর বিত্ত বৈভবের লোভে দিনের পর দিন করে চলছে মিথ্যাচার।


সাধারন মানুষ জানছে হাসপাতালে ঝামেলা হচ্ছে,ডাক্তারের দোষ।আসলে প্রতিবার ই ডাক্তার একক ভাবে চরম ভিকটিম।
এই ছিল প্রথম বার যখন একদল নবীন প্রান বিচারহীনতা আর অপবাদের এই সংস্কৃতি দেখে দেখে বিরক্ত হয়ে কর্মরত নারী ডাক্তারকে অপমান করার অপরাধে ইভটিজারকে শাস্তি দিল এবং ক্ষমা চাইতে বাধ্য করল।


ওদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ এই জন্য যে ওরা দেখিয়ে দিল যে আগের ঘটনাগুলোতে কি করা উচিত ছিল।
আমার নারী ডাক্তার সম্ভ্রম বাঁচাতে আত্মহত্যা করেছিল।ডাঃ মামুন দাঁত ভেঙ্গে হাসপাতালে কাতরাচ্ছিল।ডাঃ শম্পারানীকে কি কুৎসিত অপবাদ সইতে হয়েছিল!


মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কানে যদি সত্যি এগুলো এইভাবে পৌছে,তাহলে আমাদের কুম্ভকর্ন নেতারা কি জবাব দিবেন যারা চুপ করে সব সহ্য করেন আর আমাদের ও সহ্য করার পানি পড়া খাওয়ান!


আর কিছু অকৃতজ্ঞ লোভী সাংবাদিকদের অপসাংবাদিকতা তো বাদ ই দিলাম।
তোমরা তোমাদের সহপাঠীর অপবাদ সহ্য করনি।যে পাপিষ্ঠ তার অপকর্মের জন্য শাস্তি পেয়েছে,সে হুমকি দিয়েছিল।দেখিয়ে দেবে।
তোমরা হুমকি শুনে পিছিয়ে যাওনি।তোমাদের একতা,একনিষ্ঠতা এবং একে অন্যের প্রতি সহমর্মিতা সমগ্র দেশের সব কনিষ্ঠ ডাক্তারদের এক পতাকাতলে এনেছে।


আমাদের মত কিছু ক্ষুদ্র মানুষ তোমাদের পাশে সমগ্র সত্তা দিয়ে ছিলাম।
সন্ত্রাসী ইভটিজার যে হুমকি দিয়েছিল,যে শাস্তি তোমাদের উপর আরোপ করিয়েছিল,আন্দোলনের প্রবল স্রোতে সে শাস্তির খড়গ ভেসে গেল।শুধু তাই নয় সুযোগ এসেছিল আরো অনেক জঞ্জাল ভাসিয়ে নেবার!
এই পুরো ঘটনাতে বহু রমনীকে এন্টিহিস্টামিন গিলতে হয়েছে তোমাদের বিজয়ের ধাক্কায়।যে বা যারা ছোট কাজ করবে তারা ছোট।আমরা মহৎ ই শুধু না,আমরা বৃহৎ!

যে শক্তির খোঁজ আমরা পেয়েছি তা আমাদের ভেতরেই বিদ্যমান।যে একতাবদ্ধতা আমাদের স্বপ্নে ছিল,তা আমাদের মাঝেই বিদ্যমান।সেই শক্তির হাত ধরেই তৈরী হবে চিকিৎসক বান্ধব "চিকিৎসা সুরক্ষা আইন"।সেই শক্তির হাত ধরেই নিরাপদ হবে আমাদের কর্মস্থল।

কোন অযাচিত রোগীর আত্মীয় স্বজন অকারন হাঙ্গামা করতে হাসপাতালে আসবে না।হাসপাতালের একটা কিছু স্পর্শ করলে বা ডাক্তার/নার্স/আয়া কাউকে আঘাত করলে বিনা জামিন কারাবাস এই গুন্ডা দমনে সবথেকে সহায়ক হবে।

তাই ইন্টার্ন ডক্টরদের মার্চ মাসের এই অভ্যুদয়কে যে যেভাবে ব্যখ্যায়িত করুক,আমার কাছে এটা চিকিৎসকদের অধিকার আদায়ের বা স্বাধীনতা লাভের প্রথম বিজয় !!

___________________________________


ডা. শিরিন সাবিহা তন্বী । জনপ্রিয় লেখক-কলামিস্ট । পেশাজীবী নেতা।

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়