Ameen Qudir

Published:
2017-03-07 01:02:29 BdST

চিকিৎসক সম্মান ও অধিকার আন্দোলন নস্যাতে বহুমুখী ষড়যন্ত্র চলছে


 



ডা. রাজীব দে সরকার
_______________________


আমাদের দেশের মিডিয়া বা মিডিয়া পার্সনরা রাজনীতিতে নেমেছেন বেশ আগেই। অবশ্য তাদেরটা মাঠের রাজনীতি না।

মাঠের রাজনীতি করতেন আগের দিনের বাঘা বাঘা ত্যাগী নেতারা। এখন মাঠের রাজনীতি তারা করেন যাদের অন্য কোথাও রাজনীতি করার জো নেই।

মিডিয়া রাজনীতি করে অনলাইনে আর খবরের পাতায় পাতায়। রাজনীতি হয় লাইকে আর শেয়ারে। কখনো হয়তো সেটা ভালোর জন্য। তবে অধিকাংশটাই খারাপ উদ্দেশ্যে। অন্তঃত ইতিহাস তাই বলে।

আপনাদের মনে আছে কী না জানি না আমাদের দেশের বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাও এই রাজনীতির শিকার হয়েছেন। ওয়ান ইলেভেন এর সময়ে তথ্য জালিয়াতি করে মিডিয়া তাঁর কারাভোগ করিয়েছিলো। প্রধানমন্ত্রী একবার বলেছিলেন তিনি প্রথম আলো - ডেইলি স্টার এই পত্রিকা দু'টি বিশ্বাস করেন না, তাই পড়েনও না।

পিলখানা হত্যাকান্ডের কথাও তো আমাদের মনে আছে। "বিডিআর বিদ্রোহ" নাম দিয়ে একে ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করেছিলো মিডিয়া। এর কোন প্রতিকার হয়েছিলো সে সময়ে?

বিচারহীনতার সংস্কৃতি যে দেশে প্রাচীন, সে দেশের চালাক মিডিয়া এই সুবিধা নেবে না কেন? কোন মিডিয়া পার্সনের বিচার হয়েছে কোনদিন বাংলাদেশে?

সারাদেশে চলমান ইন্টার্নী চিকিৎসক তথা গোটা চিকিৎসক সমাজের ঘুরে দাঁড়ানোর যে বিপ্লব চলছে, সেটাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ব্লু প্রিন্ট তৈরী হয়ে গেছে।

১। ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে অনলাইন মিডিয়াতে টুকরো খবর এর ছড়াছড়ি শুরু হয়েছে। খবরগুলো পড়লে যে কেউ ভাববেন যে চিকিৎসকই দোষী।

২। প্রায় সবগুলো পত্রিকার ইন্টার্নী চিকিৎসকদের কর্মবিরতির খবর/ফলোআপ গুলো একই ধাঁচের লেখা দিয়েই শুরু।

"রোগীর স্বজনকে মারধর করায়... ... ..."

- আমার প্রশ্ন রিপোর্ট লেখা মানুষগুলোর প্রতি। ঘটনাটা মাঝখান থেকে শুরু করছেন কেন? গল্পটা মাঝখান থেকে শুরু করলে তো আঙ্গুল চোষা দুধের বাচ্চারাও বলবে... ডাক্তাররাই খারাপ।

একটা মিথ্যা কথাকে অলংকার দিয়ে সাজালে তা সত্যের মতো শোনায়। এ ধরনের রিপোর্ট লেখার উদ্দেশ্য কি তাই?

একজন রোগীর লোক সাধারণতঃ রোগীকে নিয়ে অসহায় থাকেন বলেই আমরা জানি।

কিন্তু যে রোগীর স্বজন একজন নারী চিকিৎসককে অবলীলায় এই উক্তি করেন, "আপনার মতো মাল থাকলে ওয়ার্ডে তো গরম লাগবেই" - তাকে কী আর সাধারণ একজন রোগীর অসহায় স্বজন ভাবার সুযোগ আছে?


৩। স্বাস্থ্যমন্ত্রী কিংবা আমাদের চিকিৎসক নেতাদের বরাত দিয়ে নিউজ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে যে চিকিৎসকদের আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে। এই বানোয়াট মিথ্যা ছড়ানোর উদ্দেশ্যই একটা। সফল আন্দোলনের তরীকে তীরে পৌছতে না দেওয়া।


৪। অনলাইন সোশ্যাল মিডিয়াতে চেষ্টা চলছে এই আন্দোলননে অজনপ্রিয় করে তোলার। আন্দোলনকে নস্যাৎ করার সবচেয়ে সুন্দর কৌশল এটা। উপকরণের অভাবও হবে না, কারন সবার পকেটেই এখন ছবি তোলার মোবাইল থাকে। আর রোগীরা তো মাথার কাছে ডাক্তার দাঁড়িয়ে না থাকলে সেবা পেয়েছেন বলে মনেই করেন না।


৫। মিডিয়া কৌশলগত কারনেই "ইভটিজিং" এর ফ্যাক্টটাকে পরিহার করে গেছে। কারন তারা ভালো করেই জানে নারীর ক্ষমতায়নের এই যুগে নারীর প্রতি অসম্মানকারীকে মারধর করা সব দিক থেকেই জাস্টিফাইড।


৬। যেখানে ঘরে ঘরে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলার জন্য বিজ্ঞাপন তৈরী হচ্ছে, শেয়ার হচ্ছে, সেখানে নারীর প্রতি অসম্মান এর প্রতিবাদ করায় চার জন চিকিৎসককে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে - এটা কোন সভ্য সমাজ মেনে নেবে না। মিডিয়া এটা জানে, বোঝে। তাই হয়তো মিথ্যাকে পুঁজি করার এতো প্রবণতা।


একটা কথা গত কয়েকটি ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে গেছে।

চিকিৎসকদের আন্দোলনে মিডিয়া, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, অনলাইন সেলিব্রিটি, তুখোড় প্র্যাকটিস এর সিনিয়র চিকিৎসক কিংবা চেয়ারপ্রিয় চিকিৎসক নেতা- এদের কাউকেই পাশে পাওয়া যাবে না।


সুতরাং "যদি তোর ডাক না শুনে কেউ না আসে..."


_______________________________

ডা. রাজীব দে সরকার

কো-অর্ডিনেশন অ্যান্ড মিডিয়া মনিটরিং সেল,
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঢাকা।

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়