Ameen Qudir

Published:
2017-03-06 22:05:28 BdST

একটা সফল আন্দোলনকে বানচালের নানা কৌশল


 


ডা. রাজীব হোসাইন সরকার
___________________________


____ একটা সফল আন্দোলনকে থামিয়ে দেবার অনেক কৌশল আছে।

কৌশলঃ ১- প্রথম ও প্রধান কৌশল- মেনে নিলাম টাইপের বক্তব্য দেওয়া।

সমাধানঃ খেয়াল করবেন, মেনে নিলাম আর কাগজে কলমে মেনে নিলাম...... এক কথা নয়। লিখিত বক্তব্য দেওয়ার আগমুহুর্ত পর্যন্ত কর্মবিরতি বহাল থাকবে। মেনে নিলাম... এটা আন্দোলনকারীদের অতি আনন্দে ভাসানোর কৌশল। আনন্দে ভাসবেন তো আন্দোলন ভেসে যাবে।

কৌশলঃ ২- আন্দোলনের প্রধান দাবীকে পাশ কাটিয়ে ডালপালা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়া।

সমাধানঃ ইন্টার্নদের শাস্তিটা ছিল অবৈধ। সেটাকে প্রত্যাহার করে মন্ত্রী সাহেব পাহাড় কেটে রাস্তা বানাল...এমন ভাবার অবকাশ নাই। আমাদের প্রধান দাবী- নিরাপদ কর্মস্থল।
আনসার দিবে নাকি হেলথ-পুলিশ দিবে এই পদ্ধতি বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত কর্মস্থলে ফেরা যাবে না। মনে রাখতে হবে, গোছানো আন্দোলন প্রতিদিন ভোরে করা যায় না। আগামীকাল মার খেয়ে পথে নামতে হবে না- এ নিশ্চয়তা কে দিবে?

কৌশলঃ ৩- মিডিয়ায় মিথ্যা ও বিকৃত সংবাদ প্রচার।

সমাধানঃ মিডিয়া খবর দিবে নাসিম সাহেবের পক্ষে। তার নির্দেশনা অনুযায়ী ‘আন্দোলন প্রত্যাহার’ হয়েছে বলে তারা বিবৃতি দিচ্ছে। মাথায় রাখতে হবে- এগুলো নোংরা কৌশল। পা দেওয়া যাবে না।

কয়েকটি হাসপাতালের পরিচালক মিডিয়ায় বলেছেন, হাসপাতালের কার্যক্রম ঠিকঠাক চলছে। প্রফেসর ও মিড লেভেলরা অতিরিক্ত ঘন্টা কাজ করে অভাব পুষিয়ে দিচ্ছেন।

মাথায় রাখতে হবে পরিচালকের পোস্টটিও পলিটিক্যাল। তাদের কোন আশ্বাসে আন্দোলনের অভিমুখ বদলানো যাবে না। তারা খুব ভাল করেই জানে, হাসপাতাল চলছে না। মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।

কৌশলঃ ৪- জনগণকে ভুল ধারণা দেওয়া।

সমাধানঃ আমাদের আন্দোলনে জনগণকে আমরা এখনো পাশে পাইনি। কেউকেউ এখনো ফেসবুকে ডাক্তারদের ট্রল করছে।
আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা স্বীকার করি। কিন্তু ইভটিজিং এর মত ব্যাপারেও তারা ডাক্তারদের সমর্থন দিচ্ছে না, এটা আমাদের দূর্বলতা নয়, এটা তাদের দূর্বলতা।

পাবলিককে জিম্মি করে আন্দোলন করছি... এই কমেন্ট শুনে আশাহত বা লজ্জিত হবার কিছু নাই। জিম্মি করার কিছু না থাকলে আন্দোলন হয় না। ড্রাইভাররা যখন আধমরা রোগীর এম্বুলেন্স ভাঙ্গচুর করে রোগীকে হাসপাতালে যেতে দেয় নাই, এই পাবলিকরাই তখন কিছু বলে না। ইগো কঠিন ব্যাপার। ইগো নিয়ে কেউ যদি আন্দোলন নিয়ে ট্রল করে তাহলে ভেবে নিবেন...এটা তার জ্ঞানের দৈন্যতা। এরাই ফ্রান্সে কেউ মরলে প্রো-পিক চেইঞ্জ করা জাতির সন্তান।

যুক্তি বলছে, আমাদের আন্দোলন আমাদেরকেই সফল করতে হবে। জনগন , সরকার, মিডিয়া কেউ পাশে থাকুক আর না থাকুক।

পরিশিষ্টঃ একমাত্র এনটিভি ‘ইভটিজিং’ এর ব্যাপারটি স্পষ্ট করে বলেছে। তাকে প্রকাশ্যে ধন্যবাদ দিন। তারা ইন্সপায়ার হবে। আমাদের পক্ষে কিছুটা হলেও সত্য কথা বলবে।
একাত্তর টিভি মিথ্যাচার করেছে। তার জন্য তিরস্কার। দে উইল পেইড বাই দেয়ার ওউন কয়েন।

রেনাটার এক সিনিয়র কর্মকর্তা বিকৃত কমেন্ট করেছিল আমাদের আন্দোলন নিয়ে। রেনাটাকে ধন্যবাদ...তারা এই কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করেছে।

"শরিফুল হাসান" নামের এক প্রথম আলোর রিপোর্টার গতকাল ‘ডাক্তার ও ড্রাইভার’ নিয়ে ট্রল করেছে। পরবর্তীতে পোস্টটি ডিলিট দিয়েছে। এগুলো অপরাধ। একজন সাংবাদিক হয়ে কোন বিশেষ পেশাকে ছোট করে পাবলিকলি মন্তব্য করা অপরাধ। এজন্য প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ও এসকে-এফ এর সকল প্রোডাক্ট নিষিদ্ধ বহাল থাকবে। যতদিন তারা লিখিত ক্ষমাপ্রার্থনা করছে না।

পরিশিষ্টঃ ২

মেডিকেল স্টুডেন্টরা অন্য সকল পেশার চেয়ে বেশি ফেসবুকিং করে। তনু বা দুনিয়ার সকল হত্যা, ধর্ষন ও নির্যাতনে আমরা সবচেয়ে বেশি অগ্রগামী ছিলাম। বিচিত্র কারণে কর্মক্ষেত্রে ইজ্জত বাঁচাতে আত্মহত্যা করা ডা. সাজিয়া, কর্মক্ষেত্রে হত্যাকণ্ডের শিকার হওয়া ডা. মুরাদসহ অসংখ্য ব্যাপারে আমরা সাধারন মানুষকে পাশে পাইনি...পাচ্ছি না...পাব না...

পরিশিষ্টঃ ৩-

ডা. সাজিয়াকে চেনেন?
নাইট ডিউটি ছিল। ক্লিনিকের এক লোক তাকে ধর্ষন করতে চেয়েছিল। মেয়েটা ইজ্জত বাঁচাতে জীবন দিয়েছিল সে রাতে...

চেনেন সাজিয়াকে?

'মাল' বলে যদি নিজের বোনকে কেউ টিজ করত, কি করতেন?
মেরে ফেলতেন না?

এই ইন্টার্নরা কিন্তু একটা টায়ার পর্যন্ত পোড়ায় নি। আন্দোলন কাকে বলে শেখাতে আসবেন না।

প্রিয় সহকর্মী,
মন খারাপ করার কিছু নাই।
বিবেকের চোখ সবার থাকে না।

শেষকথাঃ আন্দোলন চলছে... কর্মবিরতি চলছে

বিনীত
ডা. রাজীব হোসাইন সরকার
ইন্টার্ন চিকিৎসক, রমেক

 

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়