Ameen Qudir

Published:
2017-03-06 19:47:55 BdST

'সিস্টার,বাথরুম কোন দিকে! দেখেন তো, এইটা কোথার টিকেট!' প্রতিদিন শুনতে হয় ডাক্তারকে




ডা. মিথিলা ফেরদৌস
___________________________________

 

শজিমেক এর ইন্টার্ন এর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা আমাদের প্রতিটা ডাক্তারের সঙ্গে প্রতিনিয়তই ঘটছে,ঘটে।


প্রতিদিন গড়ে ৮-১০ জন রুগির লোক হুট করে রুমে ঢুকে জিজ্ঞেস করে,সিস্টার বাথরুম কোনদিকে?এদের মধ্যে কেউ কেউ আমাকে জিজ্ঞেস না করেই আমার রুমের ভিতর দিয়ে পিছনে যাবার চেষ্টা করে,আবার কেউ বললে বুঝে,আর কেউ বাইরে গিয়ে এমন ভাবে কথা শুনায়,যেন মনে হয়,এদের বাথরুমে নিয়ে যাবার দায়িত্ব ডাক্তারদের।


গড়ে ২০-২২ জন রুমে সরাসরি ঢুকে জিজ্ঞেস করে,সিস্টার দেখেনতো এইটা কোথাকার টিকেট?

যেটা জানি,সেটা বলে দেই আর সব জানা সম্ভবও না।আর বলার দায়িত্বও আমার না।এরা বাইরে গিয়ে আমারে শুনায় শুনায় বলে,আমাদের টাকায় বেতন পায়,সরকার এদের পোষে আমাদের সেবার জন্যে।

তিনটি প্রামান্য ঘটনার বিবরণ _________________


নিচে তিনটা ঘটনা বললেই বুঝবেন আমারা হাসতালে কতটা নিরাপত্তাহীন!!


এক রুগির, অনেকগুলা লোক একসাথে আসছে রুগি ছাড়াই,সাথে অনেক পরিক্ষার কাগজ,দাবী কাগজ দেখে চিকিৎসা দিতে হবে, রুগি দেখে না।আমি অনেকক্ষন বুঝানোর চেষ্টা করলাম রুগি ছাড়া চিকিৎসা দিতে পারবোনা।আমি কোনভাবেই যখন তাকে বুঝাতে সক্ষম হচ্ছিলাম না,তখন মাথায় দুই হাত দিয়ে বললাম ভাই আপনাদের আর বুঝাতে পারবোনা,আমার মাথা ব্যাথা করছে।সে ডিরেক্টর স্যারকে গিয়ে বিচার দিছে ডাক্তার রুমে ঘুমাচ্ছে।আমার রুমের তিনদিকে দরজা,সামনের দরজায় সবসময় ২৫-৩০ রুগি, কেমনে সেখানে ঘুমানো সম্ভব!!

 

মাঝবয়সি এক রুগি আসলো তার গোপন সমস্যা নিয়ে,বিষয়টা আমার ডিপার্টমেন্টেও পড়েনা।আমি তাকে রেফার্ড করলাম,সে ক্ষেপে গেলো।মারমুখী হয়ে বলল,আপনি আমাকে ঘুরাচ্ছেন কেনো,আমি আপনাকে দেখে নিবো,বাইরে গিয়ে পটাপট আমার নেম্পেল্টের ছবি তুললো।


দুইটার পর রুগি কমে যায় তখন বই খুলে একটু পড়ার চেষ্টা করি,এক কম বয়সি ছেলে আসলো লাইপোমেটসিস নিয়ে,আমি তাকে বুঝালাম এটা কিছু করার নাই,একটা পরিক্ষা করে দেখতে পারেন খারাপ কিছু না।আর যেটা সবচেয়ে বড় তা কেটে ফেলতে পারেন।সে আমাকে বলে এই রোগটা সম্পর্কে আমাকে বুঝান।(এই ঘটনা প্রায় ঘটে)।তারে কি লাইপোমেটসিস বুঝানো সম্ভব?দুইটার পর ব্লক খালি হয়ে যায়।


আমার খুব ভয় করছিলো,ছেলেটা রীতিমতো আমাকে গালি দেয়া শুরু করলো বসেইতো আছেন,কাজ তো করেন না।সরকারের টাকা বসে বসে খান"।আমি কিছুই বললাম না।আমার মত অনেকেই এমন শুনে যান কিছুই বলেন না।এইজন্যে আজ আমি শজিমেকের ইন্টার্ন দের ধন্যবাদ দেই।তারা মুখ খুলেছে।


পুরা স্বাস্থ্য ব্যাবস্থাকে সরকার আর জনগণের মুখামুখি দাড় করাচ্ছে পার্শ্ববর্তি দেশের হাইলিপেইড দালাল, আমাদেরই কিছু পত্রিকা।এর উদ্দেশ্য যদি আমরা বুঝি তাহলে সরকার কেনো বুঝতে পারেনা।সবচেয়ে বড় কথা স্বাস্থ্য খাতে সফলতা,শুধু ডাক্তারদের না এই সরকারের অবদান,এই ব্যাপারটাকে ধংস করার চেষ্টা করা কি সরকারের বিরুদ্ধে কোন চক্রান্ত কিনা এইটা আগে বুঝতে হবে।
ডাক্তারদের উপর অত্যাচারের সীমা বাংলাদেশের যেকোন সরকারের সময়কে ছাড়ায় গেছে,এমনকি এইসরকারের প্রথম মেয়াদেও এই অবস্থা ছিলোনা।এর কারণ একটাই বর্তমান স্বাস্থ্য মন্ত্রীর অস্বাস্থ্যকর কর্মকান্ড।তাকে যখন পুনরায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফার দেয়া হয়েছিলো,তখন উনি নিজেই বেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কেনো নিয়েছিলেন এইটাই একটা বিরাট রহস্য।


সবচেয়ে অবাক হই,এত ঘটনার পর বিএমএর নীরব ভুমিকা দেখে।তারা আসলে কাদের পক্ষে?আমার মনে হয় কনজেনিটালি যাদের স্পাইন থাকেনা,তারাই মনে হয় মেডিকেলে চান্স পায়,আর যত বয়স বাড়তে থাকে ব্যাক মাসেলগুলাও আট্রোফি হতে থাকে,ডাক্তাররা আরো ঝুঁকতে থাকে।


আজ নবীন ডাক্তারদের আন্দোলন দেখে,আনন্দিত হই,যদি ওদের মাধ্যমে আমাদের দাবী দাওয়া আদায় হয় এই আশায়,নিজেরা শরিক হতে চাইনা।আমাদের অভ্যাস তো ঝুকে থাকার।তবুও নবিনদের উদ্দেশ্যে একটাই অনুরোধ,কাউকে তো শুরু করতেই হবে।তোমরা দাবী আদায় ছাড়া কোন কিছুতেই, কোনভাবেই ফিরবেনা।এইটা তোমাদের ভবিষতের জন্যেই দরকার।শুভকামনা সবসময় তোমাদের জন্যে।

_______________________________

লেখক ডা. মিথিলা ফেরদৌস । সোহরাওয়ার্দি হাসপাতাল।

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়