Ameen Qudir
Published:2016-11-15 14:11:07 BdST
শুভ জন্মদিন কবি জিল্লুর রহমান : অমৃত মন্ত্রের সাধক
মোশতাক অাহমদ
___________________
কবি জিললুর রহমানের জন্মদিনে তাঁকে নিয়ে কিছু কথা বলবার তাগিদ অনুভব করছি। তাঁর কবিতা নিয়ে অনেকবার লিখতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার জ্ঞান কিংবা ভাষা তাঁকে ধারণ করবার উপযোগি মনে হয়নি , আর দায়সারাভাবে তাঁকে নিয়ে লিখতে যাওয়া পাপের শামিল। কবির পঞ্চাশ বছর পূরতির সুবাদে দু চারটি কথা বলব।
মেঘে মেঘে বেলা হল অনেক। জিললুর রহমানের লেখালিখির শুরু থেকেই তাঁকে আমি জানি। তাঁর সাহিত্যের পথে দীর্ঘ পরিক্রমার সবটুকু হয়তো জানা হয়নি কিন্তু প্রধান প্রবণতাগুলো, প্রধান ঘটনাগুলো জেনেছি। কবিতাই তাঁর আরাধ্য বিষয়, কিন্তু কবিতার বাইরেও যেসব এলাকায় পরিভ্রমণ করেছেন, সব জায়গাতেই পেয়েছেন সাফল্য। এ এক বিরল ব্যাপার- তিনি গদ্যে সফল, তাত্ত্বিক রচনায় সফল, অনুবাদে সফল, পেশাগত জীবনে সফল, পরিব্রাজক হিসেবে ঈর্ষনীয়। কবিতার বাইরে এত সব সাফল্যের কারণে ঘনিষ্ট পাঠক হিসেবে আমার একটাই অনুযোগ, পরিমানগত দিক দিয়ে তাঁর কবিতার সংখ্যা যথেষ্ট কম, কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা এখন পর্যন্ত মাত্র দু খানি।
সমসাময়িক হবার কারণে তাঁর কবিতাকে মান ধরে নিয়ে নিজের কবিতাকে মূল্যায়ন করবার সুযোগ ছিল; তাতে দেখেছি যে এক কথায় আমার লেখালিখি অনেকটাই পশ্চাদপর, ভুল ছন্দে গতায়াতপ্রবণ এবং কিছুটা চটুল, আর জিললুর রহমানের কবিতা যেনবা মহামন্ত্রের এক প্রকল্প হিসেবেই লিখিত হতে শুরু করেছিল যার ধারাবাহিকতা এই পঞ্চাশেও সমান দাপটের সাথে চালিয়ে যাচ্ছেন। উল্লেখ করতে চাই যে, কাব্যজীবনের শুরুর দিকের কবিতা অনেকে লুকিয়ে ফেলতে চান, কিন্তু জিললুরের প্রাথমিক কবিতাগুলো হীরেমানিকের খনি যা কীনা নিত্যনতুন অনুসন্ধান দাবি করে। কবি তাঁর কাব্যজীবনের শুরু থেকেই পরিপূর্ণভাবেই কবি এবং গুরুত্বপূর্ণ কবি। ছাত্রজীবনে আমরা একসাথে লিখেছি, পত্রিকা করেছি, দেয়ালিকা করেছি। কিন্তু যখন কবিতা প্রতিযোগিতায় কবিতা পাঠাবার পরিস্থিতি হল, জিললুরের জিজ্ঞাসা- কবিতার বিচারক কে? আর আমি ও অন্যরা খ্যাতি বা পুরষ্কারের লোভে অত কিছু জানবার আগেই কবিতা জমা দিয়ে দিয়েছি। এখানে তাঁর ম্যাচুরিটিকে তুলে ধরবার জন্যেই ঘটনাটি বললাম। কবিতায় তিনি শুরু থেকেই পরিণত এবং সকল বিচারেই পরিমিত। অতিকথন তাঁর নেই, তাঁর সঙ্গীত ছড়িয়ে পড়ে ইঙ্গিতে। সমসাময়িক হবার কারণেই আমরা পরস্পর সম্পর্কে কম লিখে থাকি, কেননা উদ্দেশ্যের আবেগ যাই থাকুক তাতে করে পারস্পরিক পিঠ চুলকানোর অনুযোগ উঠতে পারে।
জিললুর রহমানের দুটো গ্রন্থের পরিচিতিমূলক লেখা লিখবার সুযোগ আমার হয়েছিল। প্রথম কবিতার বই ‘অন্য মন্ত্র’ আর প্রবন্ধ সংকলন ‘ অমৃত কথা ‘। এই অভিজ্ঞতা আর তাঁর নিয়ত প্রশ্রয় আমার জন্যে গৌরবের। যে সকল পাঠক আজও এই মন্ত্র আর অমৃতের সন্ধান পাননি তারা আসলেই সুধা থেকে বঞ্চিত।
জিললুর শুরু থেকেই সমাজ ও রাজনীতি সচেতন – শ্লোগানমুখরতা ছাড়াই কীভাবে সমাজ ও রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতিকে কাব্যিকভাবে তুলে আনা যায় তা আমরা যে কোনো বয়সেই তাঁর কাছ থেকে শিখতে পারি। তিনি এ দেশে উত্তর আধুনিক কবিতাচর্চার একজন অন্যতম পুরোধা। তত্ত্বের অ-আ-ক-খ না জেনেও তাঁর উত্তর আধুনিকতা কবিতার রস আহরন করতে পাঠকের বিন্দুমাত্র কষ্ট করতে হয় না।
অন্ধের হস্তী দর্শনের মত এই হচ্ছে কবির জন্মদিনে আমার কিঞ্চিৎ জিললুর দর্শন।
________________________
লেখক মোশতাক আহমদ : দেশের খ্যাতিমান কবি। চিকিৎসক। সিএমসি ২৮।
Senior Manager, National Scale-up Initiatives at Save the Children
Past: CARE Bangladesh and BRAC
আপনার মতামত দিন: