Ameen Qudir

Published:
2019-11-14 00:45:25 BdST

দেবদূতের মত এগিয়ে এলেন মেডিসিনের রেজিস্ট্রার:একটি ব্যক্তিগত কৃতজ্ঞতার গল্প


 

ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন

_______________________


প্রায় সার্বক্ষণিকভাবেই ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলাম, তাই ক্লাসগুলো ঠিকমত করতে পারিনি। তবে পরীক্ষার আগে পড়ে, ন্যূনতম প্রস্তুতি নিয়েই হলে যেতাম। আমার সৌভাগ্য ছিল দুর্দান্ত কিছু বন্ধু পাবার। নিজেদের তৈরী করা লেকচার নোট দিয়ে, রীতিমত ওয়ান টু ওয়ান পড়িয়ে তারা আমাকে পরীক্ষার জন্য তৈরী করে দিত। সেইসাথে পরীক্ষা এলে অদ্ভূতভাবে ম্যাগনেটিক মেমোরির অধিকারী হয়ে যেতাম। একমাসের প্রস্তুতিতে পরীক্ষার জন্য তৈরী।

১৯৯২ সালের মে মাসে ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষা। বছরের শুরুতেই দুই বছরের জুনিয়র রাহাতের দুরারোগ্য লিভার ডিজিজ ধরা পড়লো। ওর বন্ধুরাসহ আমরা সবাই দিশেহারা। ওকে চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যেতে হবে, অনেক টাকার দরকার। ওর বন্ধুরাসহ সবাই ওর জন্য অনুদান সংগ্রহে ব্যস্ত। আমি তৎকালিন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার কাছে গিয়ে বললাম, রাহাত অসুস্থ, ভারতে চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা লাগবে। নেত্রীর নির্দেশে সালমান এফ রহমান আমাদের ৫০০০০ টাকা দিলেন, আর মতিঝিলের প্যান্থার ট্রাভেলস এর মালিক প্রয়াত কামাল চৌধুরী আমাদের ঢাকা-দিল্লী-ঢাকার দুটো বিমান টিকেট দিলেন। রাহাতকে নিয়ে মার্চ মাসে আমি আর ওর সহপাঠী দেবানন্দ দিল্লীতে গেলাম। দিল্লীতে পৌছে এক বিকেলে রাহাতের ভয়াবহ রক্তবমি হলো, আমরা ভয় পেয়ে ওকে আগে থেকে ঠিক করা ক্লিনিকে নিয়ে গেলাম। ঢাকা থেকে পপসি ভাই সব চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।

রাহাতের চিকিৎসা শেষে এপ্রিলে ফিরলাম, আমার ফাইনাল প্রফের তখন এক মাস বাকী। বন্ধু অমরের গাইনির সব লেকচার নোট নিলাম, সাথে রিডিং পার্টনার দেবেশ। সারারাত জেগে পড়ি। পাশাপাশি দেবদূতের মত এগিয়ে এলেন সেই সময়ের মেডিসিনের রেজিস্ট্রার, তুমুল জনপ্রিয় বড় মুজিব ভাই। মেডিসিনের মত ব্যাপক ও কঠিন বিষয়কে তিনি প্রতিদিন নিয়ম করে ওয়ার্ডে কী যে সহজ করে আমাকে পড়াতেন! এখনো ভাবলে মুগ্ধ হই।

তখন বিএনপি ক্ষমতায়, আমি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা। সুতরাং, ভাইবার টেবিলে কোন ছাড় পাবার কোন সম্ভাবনা নাই। পড়েই ফাইনাল প্রফের বাধা পেরোতে হবে। আমি সেবার এক চান্সেই মেডিসিন, সার্জারি এবং গাইনি পাশ করে ডাক্তার হয়ে গেলাম। মুজিব ভাইয়ের কারণে আমি মেডিসিনে এত মজেছিলাম যে, ক্লিনিক্যালে ক্যারিয়ার করলে মেডিসিনেই করতাম। তখন মুজিব ভাই যদি অমন মমতায় আমাকে আলাদা ভাবে মেডিসিন না পড়াতেন, আমি কবে পাশ করতাম কে জানে! সেই থেকে মুজিব ভাইয়ের প্রতি আমার ভীষণ কৃতজ্ঞতা, অথচ মুখ ফুটে কোনদিন বলা হয়নি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, মুজিব ভাই।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিনের অধ্যাপক মুজিব ভাইয়ের মত জ্ঞানী, হৃদয়বান ও ছাত্র-ছাত্রীবান্ধব শিক্ষক এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে ডিন পদে প্রার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের বৃহত্তর কল্যানের স্বার্থেই তাই সময়ের সেরা শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক মুজিবুর রহমানকে নির্বাচিত করা উচিত।

ব্যক্তি মুজিবের জন্য নয়, মেডিক্যাল শিক্ষার বৃহত্তর উন্নয়নের স্বার্থেই আসন্ন ডিন নির্বাচনে অধ্যাপক মুজিবের কোন বিকল্প নাই। আমার সকল মুরব্বী, বন্ধু এবং স্নেহধন্য অনুজসম ভোটারদের কাছে প্রিয় মুজিব ভাইয়ের জন্য ভোট চাইছি।

জয়তু অধ্যাপক ডা. মুজিবুর রহমান।
_____________________________

ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
চেয়ারম্যান, ফাউন্ডেশন ফর
ডক্টরস সেফটি অ্যান্ড রাইটস

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়