Ameen Qudir
Published:2019-06-23 21:52:02 BdST
বরগুনা সদর হাসপাতালের ডাক্তার নিগ্রহের প্রামাণ্য ভিডিও : নেপথ্যের কারণ
ডেস্ক
______________________
বরগুনা হাসপাতালে কেন ডাক্তার থাকে না ! থাকবেই বা কেমন করে! সেখানে চলছে গুন্ডারাজ। গুন্ডারা দিনে দুপুরে হামলা করছে লোকসেবী চিকিৎসকের ওপর। এব্যপারে জানাচ্ছেন বিস্তারিত চিকিৎসক নেতা ও সুলেখক ডাঃ শিরীন সাবিহা তন্বী। তিনি জানান,
শেবাচিম ৩১তম ব্যাচের ডাঃ মশিউর রহমান রহমান ।কথা হলো তার সাথে।
ইতিমধ্যে বরগুনা সদর হাসপাতালের ডাক্তার কক্ষে রুগীর মৃত্যু শেষে লাশ হাসপাতাল থেকে নামানো পর্যন্ত ডাক্তার কেন ঐ লাশের পাশে দাঁড়িয়ে না থেকে তার নিজ কক্ষে এসেছেন,যেখানে তার অন্য রুগীদের চিকিৎসা দিতে হবে, সেই অপরাধে ডাক্তার কে অপমান, গায়ে হাত, এলোপাথারি মারধর এবং টেনে হিচড়ে মারতে মারতে লাশের কাছে নিয়ে যাওয়ার ভিডিও ফুটেজ টি আপনারা প্রায় সকলেই দেখেছেন।
দুপুরে বরগুনা থানাতে এজাহার জমা দেওয়া হয়েছে।
_______________________________________
হামলার ভিডিও চিত্রের লিঙ্ক
https://www.facebook.com/watch/?v=2314823888766067
____________________________________
১৪ বছরের কিশোর রুগী। নিম্নবিত্ত পরিবারের।কয়েক বার বমির হিস্ট্রি নিয়ে আসা রুগী খুব দ্রুত খারাপ হয়ে যাচ্ছিল।অল্প সময়েই সম্ভাব্য সব চিকিৎসা দেয়া হয়েছে এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার কথাও বলা হয়েছে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে রুগীটি মারা যায়। ডাঃ মশিউর রহমান ডেথ ডিক্লেয়ার সহ রুগীর মৃত্যু পরবর্তী সব কাজ শেষ করে তার রুমে এসে বসেন। অন্য রুগীদের এটেইন করতে থাকেন।
হঠাৎ হাসপাতালে শত শত লোকের আবির্ভাব এবং তারা কেউ ই মৃতের কাছের কেউ না।মৃতের ভাই শুরু থেকে সাথেই ছিলো। তার কোন অভিযোগ ও নাই।
এই হঠাৎ আসা অনাত্মীয় গ্রুপটাই ডাক্তার কক্ষে ঢুকে ডাঃ মশিউরের উপর চড়াও হলো।প্রথমে ঔদ্ধত্ব আচরন।এবং দ্রুতই ডাক্তারকে এলোপাথারি মারতে শুরু করল।মেরেই ক্ষান্ত হলো না।মারতে মারতে শার্টের কলার ধরে টানতে টানতে রুম থেকে বের করে নিয়ে গেল।
তিনটা বিষয় ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমতঃএত বড় অন্যায়।এত বড় অসভ্যতা।এত বড় ছোটলোকী।এত বড় আইন লঙ্ঘন।এর পিছনে আত্মীয় মৃত্যুর দুঃখবোধ বা আবেগ কিছুই না। কারন মৃতের ভাই আরো সবাইকে নিবৃত্ত করতে চেয়েছে।
তাহলে এরা এটা কেন করেছে?করছে হিরো হতে। অরাজকতা কিংবা সন্ত্রাসীপনা করতে। ওরা জানে এতে কোন বিচার হবে না।
দ্বিতীয়তঃ ভিডিও তে ডাক্তারের পাশেই বসে ছিল একজন MLSS. একজন ব্রাদার।চোখের সামনে ডাক্তারকে এইভাবে হেনস্থা করছে।আর ঐ MLSS/ব্রাদার নীরব দর্শকের আচরন করেছে। এটা বাকী দেশের স্বাস্থ্য সেক্টরের ডাক্তারের অধীনস্থ অন্য চাকুরেদের অবস্থান নির্দিষ্ট করছে।ছ সাত জন সশস্ত্র কনষ্টেবল বেষ্টিত হয়ে অন্য ক্যাডারের অফিসাররা মুভ করেন। আর অরক্ষিত ডাক্তারগন এভাবে অত্যাচারীত হন।
তৃতীয়তঃ এই ঘটনার পর কেন্দ্রীয় থেকে শুরু করে লোকাল - কোথাও কোন চিকিৎসক নেতৃত্ব কোন ধরনের বিবৃতি/অভিব্যক্তি কিছুই দেয়নি।কারো কাছে নালিশ করেনি। বিচার চায়নি।
দু একজন ফেসবুকে ফিসফাস করছেন, এই পর্যন্ত। যারা বলবেন ফেসবুকে প্রতিবাদ হচ্ছে বলে বাস্তবে হচ্ছে না। পাশের দেশ ভারতে সাম্প্রতিক ঘটনা এবং চিকিৎসকদের আহত করলে যে আইন হতে যাচ্ছে তাতে এই নিয়ে আর কুতর্ক করার কথা না।
যে ডাক্তার আজ এইভাবে মৃতের পাশের বাড়ির কিছু লোকের অহেতুক, অনৈতিক, অভিযোগহীন অসভ্যতার শিকার হয়েছে ঐ ডাক্তারের মতো একজন মেধাবী ছাত্র খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আমার জানা মতে এমন ভদ্র এবং একাডেমিক কোয়ালিফেকশন সমৃদ্ধ একজন অফিসার যে কোন দেশের গর্ব হতো।
আজ সে নিরাপত্তার কারণে কর্মস্থল ছেড়ে দূরে অবস্থান করছে।
কথা বলতে গিয়ে গলাটা মলিন লাগছিল ওনার। আমার চোখের কোনে জল জমছিল। বুকটা ফাঁকা লাগছিল। এ কোন দেশ? এসব কি হচ্ছে?
এ দেশে ডাক্তারদের ভবিষ্যৎ কি???
এভাবে আর কতদিন???
কেউ কি এগিয়ে আসবে না? কেউ কি এই অন্যায় কে নির্মুল করবে না? নাকি আমরা অসভ্য থেকে অসভ্যতর দের হাতে নির্যাতিত নিগৃহীত হতেই থাকবো??
এভাবে আর কতদিন???
ডাঃ_শিরীন_সাবিহা_তন্বী
৩২ তম শেবাচিম, বরিশাল ।
আপনার মতামত দিন: