Ameen Qudir

Published:
2019-04-27 20:36:35 BdST

এমপি মাশরাফির হাসপাতাল অভিযান : যা দেখলেন, যা করলেন, যা বললেন


 



সংবাদদাতা নড়াইল / ডেস্ক
__________________________

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ওয়ান ডে ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মোরতাজা নড়াইলে হাসপাতালে অভিযান চালালেন। ডাক্তার নার্স ও হাসপাতাল কর্মীরা কে কোথায় খোঁজ সন্ধান করলেন। ফোনে স্যার স্যার সম্বোধন করে ডাক্তারদের ধমকালেন। সেসব ভিডিও এখন ভাইরাল।
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ৩ টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টানা ২ ঘন্টা নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে ঝটিকা অভিযান চালান এমপি । নারী ও শিশু ওয়ার্ডে রোগীদের সাথে কথা বলে তাদের কাছ থেকে নানা ধরনের সমস্যা শোনেন। ওই সময় পুরো হাসপাতালে মাত্র একজন ডাক্তারের উপস্থিতি দেখতে পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তিনি।



সদর হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে মাত্র ২ জন নার্স দেখে তাদের ডিউটির ব্যাপারে কৈফিয়ত তলব করেন। কয়েকজন নার্স দিয়েই বিভিন্ন ওয়ার্ড পরিচালিত হচ্ছে। ঘটনা শুনে তাৎক্ষণিক নিচে নেমে এসে নার্সিং সুপারভাইজারদের খোঁজেন মাশরাফি। নার্সদের কক্ষে তালা দেখতে পেয়ে টেলিফোনে দায়িত্বপ্রাপ্তদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। এসময় একজন সুপারভাইজারের ফোন বন্ধ পাওয়া যায় এবং অপরজনের ফোন খোলা থাকলেও রিসিভ করেননি।

রোগীদের অনুরোধে হাসপাতালের বাথরুম ও তার পরিবেশ নিজে দেখেন এবং মোবাইলে ছুবি তুলে নেন। কয়েকটি বাথরুমের দরজা ভাঙ্গা এবং দূর্গন্ধ খুবই বিরক্তি প্রকাশ করেন। সেসব প্রতিক্রিয়াও তার সঙ্গীরা তুলে ফেসবুকে দেন। তিনি এ ব্যাপারে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারকে ফোন করে কৈফিয়ত তলব করেন। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর বিথী খাতুন এসময় অফিসে উপস্থিত থেকে মাশরাফির নানা প্রশ্নের জবাব দেন।

এরপর মাশরাফি পুনরায় দোতলায় এসে ডাক্তারদের অবস্থান জানতে চান। হাজিরা খাতা তল্লাশি করেন। হাজিরা খাতায় সার্জারী চিকিৎসক সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা.আকরাম হোসেনের পেয়ে ছুটির আবেদন দেখতে চান।

সঙ্গীয়রা জানান,
এ সময় ক্ষিপ্ত হয়ে টাইগার ক্যাপ্টেন প্রথমে রোগী সেজে ওই চিকিৎসককে ফোন করলে তিনি রোগীকে অর্থাৎ মাশরাফিকে রবিবার হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিতে বলেন। এ সময় নিজের পরিচয় দিয়ে মাশরাফি ডাক্তারকে বলেন, ‘এখন যদি হাসপাতালের সার্জারী প্রয়োজন হয় তাহলে সেই রোগী কী করবে?' এরপর সেই ডাক্তারকে দ্রুত এলাকায় ফিরে আসার নির্দেশ দেন তিনি।

আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা.মশিউর রহমান বাবু চিকিৎসক ডা.আলিমুজ্জামান সেতু হাসপাতালে মাশরাফির কাছে উপস্থিত হন । এসময় ডা.আকরাম হোসেনকে ৩ দিনের অনুপস্থিত করে দেন।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে বসে মাশরাফি তত্ত্বাবধায়ক ডা.আব্দুস সাকুরকে ফোন করেন। ডা. সাকুর সরকারি কাজেই খুলনায় একটি সভায় অংশগ্রহন করছিলেন । মাশরাফির সঙ্গীয়রা জানান, তাকেও কৈফিয়ত তলব করেন। জানতে চান, স্টেশনে নেই কেন ! রাতের মধ্যেই তাকে হাসপাতালে চলে আসতে বলেন মাশরাফি। ডা. সাকুর খুলনার সরকারি কাজ সেরে একঘন্টার মধ্যেই সদর হাসপাতালে ফিরে আসেন যথারীতি ।

আবর্জনায় পরিপূর্ণ ড্রেন এবং নানা নোংরা পরিবেশ দেখে ক্ষিপ্ত মাশরাফি আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মশিউর রহমানের কাছে দূরাবস্থার কারণ তলব করলে ডাক্তার বলেন, এর দায় নড়াইল পৌরসভার । সাংসদকে জানান হয়: এটা ডাক্তারদের কাজ নয়। ডাক্তারদের কাজ চিকিৎসা দেয়া।
এসময় উপস্থিত দুই চিকিৎসক এবং কর্মকর্তা মাশরাফির কাছে এই সকল ঘটনার খবর মিডিয়ায় প্রকাশ না করার জন্য উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করেন। হাসপাতালের সংক্রামক ওয়ার্ডে গেলে রোগীরা নানা অভিযোগ করেন সংসদ সদস্যের কাছে। 'বাইরে থেকে স্যালাইন কিনে আনতে হয়'- এমন অভিযোগ শুনে তিনি হাসপাতালের বাইরের দোকানগুলোতে সরকারী স্যালাইন বিক্রি করা হয় কিনা তা দেখার জন্য নির্দেশ দেন। হাসপাতালের ঔষধ সংকট শুনে স্টোর কিপারকে ডাকেন পরে তাকে না পেয়ে রাতে আবার সভা করবেন বলে বেরিয়ে যান।

একই বিষয় নিয়ে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, সিভিল সার্জন, ডাক্তার,নার্স ও কর্মচারীদের সাথে সভা করেন সাংসদ মাশরাফি। এসময় তার সাথে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ছাড়াও হাসপাতালের অবকাঠোমো দেখভাল করা প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীও উপস্থিত ছিলেন। দুপুরে নানা জনের কাছ থেকে প্রাপ্ত নানা অভিযোগ এবং নিজের দেখা অনিয়মের ব্যাপারে বিষয়ে তিনি সকলের সাথে রূদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।

এসময় হাসপাতালের নানা অনিয়মের মধ্যে বাইরের অ্যাম্বুলেন্স, দালাল এবং বিক্রয় প্রতিনিধিদের কঠোর ভাবে দমনের নির্দেশ দেন।

নড়াইল সদর হাসপাতালের নানা অব্যবস্থাপনা বিষয়ে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা.মশিউর রহমান বাবু বলেন, 'হাসপাতালের প্রধান সমস্যা হলো চিকিৎসক সংকট। পরিচ্ছন্ন কর্মী সংকট এবং পৌরসভার সহযোগিতা না করার কারণে ময়লা-আবর্জনা সরানো সম্ভব হচ্ছে না ।

 

নিজের পরিদর্শনের ব্যাপারে সাংসদ মাশরাফি মিডিয়াকর্মীদের বলেন, ‘সাধারণ মানুষের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের একটি হলো চিকিৎসা। এই সেবার মান নিশ্চিত করতে আমার যা কিছু করার আমি সবই করব। কিছু মানুষের জন্য নিরীহ জনগন কষ্ট পাবে এটা সহ্য করা হবে না।

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়