Ameen Qudir
Published:2019-02-20 08:27:06 BdST
একটি ভুল, একটি গুজব আর বিনা অপরাধে শাস্তি
ডা. শিরীন সাবিহা তন্বী
___________________________
একটি বিভাগে ডিপ্লোমা কোর্স আনার প্রক্রিয়া চলছিল।উৎসাহী হয়ে তাড়াহুড়ো করে শেবাচিম গাইনী প্রধান অধ্যক্ষ স্যারের শরনাপন্ন হলেন।
গাইনী তেও ডিপ্লোমা কোর্স আনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে প্রক্রিয়া শুরু করলেন।
হাতে সময় কম।
বিএএমএমইউ থেকে কোর্স এর আবেদনপত্র আনলেন। দ্রুততার সাথে করছিলেন পেপার ওয়ার্ক। আর সেই সাথে ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী পরিত্যক্ত ক্লাস রুমে তৈরি করা ষ্টোর রুম টাকে খালি করার নির্দেশ দিলেন দায়িত্ব রত স্টাফ নার্স কে।
নার্স বস্তা বন্দী অপ্রয়োজনীয় সবকিছু সরিয়ে রুম পরিস্কারের দায়িত্ব দিলো আউট সোর্সিং এর মালেকাকে।পান চিবানো আর রুগীদের আত্মীয় দের থেকে টাকা আদায় করাই যে এদের চাকরি না, তা তো পৃথিবী ভুলে যেতে বাধ্য হয়েছে।
বার বার গাইনী থেকে বের করে দেয়ার পরে ও বহাল তবিয়তে ঐখানেই থাকছে মালেকা।
কাজ শুনেই বিরক্ত মালেকা পঁচিশ ত্রিশ বছরের পুরনো জারে সংরক্ষিত মৃত ভ্রুন গুলোকে খাটুনী এড়াতে ডাস্টবিন ফেলে দিয়ে এসেছে।
স্বনামধন্য গাইনী প্রধান গন ছাত্র ছাত্রীদের ব্যবহারিক শিক্ষার জন্য কাচের জারে মৃত সংগৃহীত ভ্রন,টিউমার, গর্ভফুল শতভাগ নিয়ম মেনেই রেখেছিলেন।
এই দেখে হাতে কলমে শিক্ষা নিয়ে হাজার হাজার ডাক্তার তৈরী হয়েছেন।
কোর্স কারিকুলাম চেন্জ হওয়াতে এখন আর স্পেসিমেন ব্যবহৃত হয় না।
বহুদিনের অব্যবহারের সে স্পেসিমেন নিয়ম মেনে ডিজপোজ করলেই এই অনাকাঙ্খিত ইভেন্ট হতো না।
অথবা সাংবাদিক গন একটু সময় নিয়ে সত্য এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করলে হাসপাতাল এবং ডাক্তার গন উর্ধ্বতনের রোষানলে পরতেন না।
স্বাস্থ্য মহাপরিচালক স্যারের আদেশ ক্রমে অধ্যক্ষ স্যার গাইনী প্রধান কে বরখাস্তের সুপারিশ পাঠাতে বাধ্য হয়েছেন।
পরিচালক মহোদয়কে বরখাস্ত করতে হয়েছে স্টাফ নার্স কে।
এই ঘটনা অত্যন্ত অমানবিক।
কিন্তু এটা কারোর ই ইচ্ছাকৃত অপরাধ ছিল না।
তাই তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি সুস্ঠ তদন্ত করার পর ই পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হোক - এটা আমাদের দাবী।
যে স্পেসিমেন গুলো চিকিৎসক দের শিক্ষার উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে তাদের জন্য আমার কিছু বলার আছে।এইসব স্পেসিমেন আর দশটা স্বাভাবিক শিশুর মতো পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয়নি।এই প্রানহীন রাই মানব প্রজাতির চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক তৈরী তে ব্যবহৃত হয়েছে।তাদের প্রয়োজন শেষে তাদের অপমান অনভিপ্রেত। তাদের পোষ্ট মর্টেম হয়েছে। নিয়ম মেনেই ডিজপোজ করা হবে।
তাই যারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন, ভীতি ছড়াচ্ছেন - তারা মিথ্যাচার বন্ধ করুন। এদের কারো মাথার খুলি নাই। বুক পিঠ লাগানো জমজ বা দুই মাথা শিশু। পরিবার ফেলে গেছে বলেই জারবন্দী হয়েছে এরা।
আয়া মাসীদের দৌরাত্ম্য, অভদ্রতা এমন কোন সরকারী গাইনী বিভাগ
নাই এদেশে যারা মাত্রা ছাড়িয়ে না। আর এদের ভুল এবার সারা দেশের সামনে শেবাচিম কে অপদস্ত হতে হলো।
মিটিং এ স্যার দের বিরক্ত মুখ/সাক্ষাৎকার দিতে দিতে ক্লান্ত পরিচালক স্যার, আপনি এই ঘটনার জন্য কাকে দায়ী করেন, এর উত্তরে ম্যাডামের বলা তকদীর শব্দ টা আমাকে বিষন্ন করেছে।
চিকিৎসক রা এতটাই মূল্যহীন?
এক UNO মেয়ের ফেসবুক পোষ্ট কে আবেগ আপ্লুত নিউজ করে সাংবাদিক রা প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌছে দেন।ডিসির মেয়ে প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হলে প্রশংসার মাতম তোলেন সাংবাদিক রা।
আর একজন সহযোগী অধ্যাপক চিকিৎসক তার বিভাগের উন্নতির চেষ্টা করতে গিয়ে অধঃতন দের করা নেগ্লেজেন্সীর নির্মম শিকার হয়ে তার এমন দীর্ঘ কেরিয়ার টা হারাবেন?সাংবাদিকদের করা আপনাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এতে আপনার প্রতিক্রিয়া কি, প্রশ্নের জবাব দেয়ার সময় আমার বার বার মনে হচ্ছিল ধরনী দ্বিধা হও। উনি আমার হাত চেপে পাশে থাকতে বলছিলেন। আমি বাক্য হারা হয়ে করুন মুখে এক মেধাবী পরিশ্রমী চিকিৎসকের মুখমন্ডলে কষ্ট আর অপমানের রেখা গুনছিলাম।
অনেক অনেক প্রশ্ন মনে। উত্তর জানা নাই।
বিনা অপরাধে আর কেউ যেন শাস্তি না পাই।
কেউ ভগবান বলো, কেউ বলে কসাই।
সবার জীবন পূর্ণ করে আমাদের শুধু নাই নাই।
_____________________________
ডা. শিরীন সাবিহা তন্বী । সুলেখক। বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
আপনার মতামত দিন: