Ameen Qudir
Published:2016-12-11 01:03:54 BdST
মেডিকেল স্টুডেন্টের মা : বাবা, মেডিকেলে হাড্ডির দাম কত
সালেহ মনির রাজী ,এমবিবিএস শিক্ষার্থী
______________________________
মাইক্রোবায়োলজি পরীক্ষার ভাইভার পর ক্যাম্পাসে দাড়িয়ে গল্প করছিলাম। এমন সময় এক মহিলা এসে দাড়াল। রঙ জ্বলা মলিন শাড়ি পোষাক আষাক। ,চেহারায় দারিদ্র্যের ভাব স্পষ্ট । বলেন, বাবা এট্টু কথা ছিল। ভাবলাম ভিক্ষার জন্য টাকা চাইবে। কিন্তু অবাক করে বললেন, বাবা মেডিকেলে হাড্ডির দাম কত?
আমি সাথে সাথে ধরে ফেললাম মহিলার ছেলে বা মেয়ে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কেন?
তিনি বললেন, না বাবা কন না,কত দাম?
আমি বললাম, আপনার আপনার কেউ মেডিকেলে চান্স পাইছে তাই না?
উনি বললেন, হ্যা আমার ছেলে। আমি বললাম, হাড্ডির দাম ৩০ হাজার টাকা। পাঁচ ছয় জন মিলে কেনে। কিন্তু আমি কিনি নাই। এর ওর ধার করে দেড় বছর পার করে দিছি। মহিলাটা মনে হয় শান্তি পেল একটু।
ঘটনা সত্যি। আমি ফয়সাল,রাহুল এর বোন্স দিয়েই পার করে দিয়েছি। এরপর বলে, মেডিকেলে বাবা বই খাতার অনেকদাম। কত লাগবে টাকা?
আমি বললাম,মেডিকেলে বই খাতা লাগে না। লেকচার তুলতে বলবেন, লাইব্রেরি থেকে একটু মিলায় নেবে আর গাইড সিনিয়র ভাই দের কাছ থেকে জোগাড় করে নেবে। রাজশাহীর ভাষায় বললাম, আপনি টেনশন লিয়েন না তো। তাও আশ্বস্ত হয় না।
বলে, বাবা খাওয়া খরচ কত? আমি বললাম, দেখেন এটা নিজের খরচের উপর নির্ভর করে। আমার রাজশাহীতে ডাইনিং এ দুবেলা খাবারে খরচ হয় মাসে দু হাজার টাকা ( কমিয়ে বললাম)। আপনার ছেলে এখানেই ভর্তি হয়েছে না??
উনি বললেন, না বাপো দিনাজপুর মেডিকেলে। আমি বললাম, চিন্তা করেন না সব ঠিক হয়ে যাবে।
উনি বললেন, বাপো তোমার সাথে কতা কয়ে ভাল লাগল। উনি হোস্টেল এর দিকে যেতে লাগলেন। দেখি একটা লম্বা, শ্যামলা, কালো ছেলে যাচ্ছে মায়ের সাথে। দারিদ্র্যের চেহারা স্পষ্ট। ঘাড়ে ব্যাগ, মাথাভর্তি চিন্তা।কি হবে??
-----
এবার আমি কিছু কথা বলি। এবারের ভর্তি পরীক্ষা ফেয়ার হওয়ায় এরকম অনেক তুখোড় মেধাবি চান্স পেয়ছে। যাদের হয়ত টাকা পয়সা,জামা কাপড় এর টানাটানি। কিন্তু না এরা এগিয়ে যাবে কারন তাদের মেধাবি মাথা আছে,দু পা আছে আর দু হাত আছে....আর কি লাগে রে পাগলা! হোস্টেলে ওঠ.. প্রথমে কষ্ট হবে প্রচন্ড.. দেখবি তারপর কোন না কোন রাস্তা হয়েই গেছে। ফয়সাল,বা রাহুল টাইপ বন্ধু জুটে যাবে যারা তোকে পড়াশোনাতে সাহায্য করবে, রবিন ভাই টাইপ সিনিয়র জুটে যাবে যারা দু একটা টিউশনি ধরে দিয়ে বলবে,যা বেটা করে খা...কোন স্যার হয়ত কোন ফাউন্ডেশন বা পার্সোনাল ফান্ড থেকে বৃত্তির ব্যবস্থা করে দেবে। চিন্তা নিস না.. সব ঠিক হয়ে যাবে রে..কষ্ট একটু করতে বেশি এই যা....
শেষ কথা: এ রকম অনেক ছেলে মেয়ে সারাদেশে সব মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে তাদের সাহায্য করব।
________________________________
লেখক
সালেহ মনির রাজী ,এমবিবিএস শিক্ষার্থী । রাজশাহী মেডিকেল কলেজ।
আপনার মতামত দিন: