Ameen Qudir
Published:2018-05-08 02:02:28 BdST
"তৃতীয় বারের মত সেকেন্ড প্রফে ফেলের খবরে ফুড কোর্টে বসে গলা খুলে হেসে উঠেছিলাম"
প্রতিকী ছবি ।
ডা. মোঃ বেলায়েত হোসেন
______________________________
আমার পরিষ্কার মনে আছে,যেদিন তৃতীয় বারের মতো আমাকে সেকেন্ড প্রফে প্যাথলজিতে ফেল করার খবর দেয়া হলো,আমি তখন বসুন্ধরা সিটির ফুড কোর্টে বসে গলা খুলে হেসে উঠেছিলাম।আমাকে খবরটা জানিয়েছিলো এক বন্ধু,যে কি না নিজেও কমিউনিটি মেডিসিনে তৃতীয় বারের মতো রি সাপ্লি খেয়েছে।
"কি বললি,আবার ফেল করসি প্যাথতে?আর তুই কম মেড এ?"বলে দুই বন্ধু ফোনের দুই প্রান্তে বসে হা হা করে হাসছি,আর আশেপাশের মানুষগুলো অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে-ভাবছিলো হয়তো "এরা কি পাগল নাকি?ফেল করার খবরে কেউ হাসে?"
এখন অবাক লাগে।কেমন করে,কোন আক্কেলে এমন করে হাসতে পেরেছিলাম ফেল করে?হতে পারে,সাপ্লি খাওয়াটাকে আর দশটা সাধারণ ব্যাপারের মতো নিতে শিখে গিয়েছিলাম,কিংবা পরীক্ষাকে কখনো জীবনের চেয়ে বড় করে দেখিনি।আসলেও কিন্তু তাই,জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই পরীক্ষায় পাশ ফেল,কিন্তু পুরো জীবনকালের একটা সামান্য অংশের বেশি কিছুতেই নয়।আমি সদ্য ত্রিশ পেরিয়েছি,জীবনের অনেক কিছুই হয়তো এখনো বুঝি না।তবুও যতোটুকু বুঝি,সেদিন যদি এই সাপ্লিমেন্টারীকে হাসি দিয়ে না উড়িয়ে দিয়ে নিজেকে হতাশার চাদরে ঢেকে নিতাম,তাহলে সেখানেই আমার জীবন থেমে যেত;আর আজকে আমি এমবিবিএস পাশ করতে পারতাম না,আমার বাবা মা'র যতোটুকু যা গর্ব তার সন্তানকে নিয়ে,সেটা তারা করতে পারতেন না,রোগীকে সুস্থ করে তোলার যে স্বর্গীয় অনুভূতি,সেটা আমার কিছুতেই পাওয়া হতো না।
জীবনে বড় বড় ডিগ্রী নিতে হবে,নিজেকে রেসের সবচেয়ে দামী ঘোড়া হতে হবে,হতে হবে সবার চেয়ে সেরা-এই জাতীয় চিন্তা আমাকে আজ অবধি স্পর্শ করতে পারেনি।বলছি না আমার সব চিন্তাই ঠিক,কিন্তু আমি এইটুকু নিয়েই ভালো আছি।আমার কেবলই জীবনানন্দ দাশের কয়েকটা লাইন মনে হয়-
"আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ বসে অপেক্ষা করবার অবসর আছে।
জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক; আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
জীবনে সুখি হওয়াটাই সবচেয়ে বড় কথা,সেটা কোন ডিগ্রী যেমন কাউকে এনে দিতে পারবে না,তেমনি ফাসির দড়িও না।সুখ থাকে অন্তরের গহীনে,তাকে শুধু একটু কষ্ট করে চারপাশ থেকে আর নিজের যা আছে তা থেকে খুজে নিতে হয়..।
______________________________

আপনার মতামত দিন: