Ameen Qudir
Published:2018-03-14 19:26:49 BdST
দগ্ধ মেডিকেল শিক্ষার্থীর চিকিৎসক হয়েও চিকিৎসক হতে না পারার বিষাদসিন্ধু
ডা রাজীব দে সরকার
____________________________
আজ সারাদিন ফেইসবুকে যে কয়বার এসেছি, মন খারাপা এর পাশাপাশি বিরক্ত হয়েছি।
কোন অসভ্য সমাজের সদস্য হয়ে বাস করছি, তা একটি 'নেপাল ট্রাজেডী' চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেলো।
মন ভালো নেই। নিজেই যেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছি ভাবনার জগতে। আমাদের মেডিকেল ফ্র্যাটার্নিটির এতোগুলো প্রাণ নীরবে ঝরে গেলো।
চিকিৎসক হবার সুবিশাল স্বপ্ন সুবিস্তৃত আকাশের সীমানায় ধোঁয়া হয়ে উড়ে গেলো। রোগীদের সেবা দেবার হাতগুলো পুড়ে পুড়ে নিঃশেষ বিকৃত হয়ে পড়ে রইলো এয়ারপোর্টের মাঠে। মেডিসিনের পোড়া বই, মেহেদী দেওয়া তর্জনী, প্রিয়জনের জন্য লেখা অধিকারমাখা গিফটনোট - ছবিগুলো অন্তর্জাল ভেদ করে নিউজফীডে ভেসে উঠছে বারবার।
অথচ...
আমরা যারা দেশে আছি, সুস্থ আছি - নিজেদের নিয়োজিত করেছি ঘটনার চুল চেড়া বিশ্লেষণে। অশ্রাব্য মন্তব্যে কিংবা অযাচিত বিতর্কে আজ আমরা সবাই এভিয়েশন এক্সপার্ট হয়ে নেমে পড়লাম ফেইসবুকে। এর মাঝে আবার ফুটে উঠলো আমাদের হাজার বছরের নারীবিদ্বেষী মৌলবাদী বীভৎস চেহারা।
নেপালের কেউ কেউ বলেছেন, আমাদের প্রমীলা কো-পাইলটের কারনে বেঁচে গেছে বেশ কিছু প্রাণ। আর আমাদের গৃহপালিত অবোধ বরাহ শাবকেরা বলছেন, মেয়েদেরকে কেন প্লেন চালাতে দেওয়া হলো।
কোন সভ্য বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে আছি??
এই কথাগুলো কেন বলছি?
কারন যারা মন্তব্য করছেন, তারাও বাংলাদেশী। তারাও আমার আপনার মতো একটি করে ভোট দেবার ক্ষমতা রাখেন। তারা বোঝেন না এমন কিচ্ছু নেই। পদ্মা সেতু, রোহিঙ্গা ইস্যু, স্বাস্থ্য সেবা, গ্রামে ডাক্তার না থাকা, ডাক্তারের অবহেলায়/ভুলে রোগী মারা যাওয়া, বাজেট, হুমায়ুন আহমেদ-শাওন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা - সব বিষয়েই তারা বোঝেন। মতামত দেন।
মতামত প্রকাশে অতি অধিকার জাতির জন্য শুভ কী না, ভেবে দেখার সময় কী আসে নি?
কোন এক্সক্লুশনে এখন আমরা না হয় না পৌছাই।
চলেন না কিছুদিন অন্তঃত কোন মতামত না দেই, এভিয়েশন এক্সপার্ট না হই।
শুধু একজন বাংলাদেশী হই।
শোকার্ত মানুষগুলোর শোকটাকে বোঝার চেষ্টা করি।
একজন দগ্ধ মেডিকেল স্টুডেন্ট এর চিকিৎসক হয়েও চিকিৎসক হতে না পারার বিষাদসিন্ধুটাকে ছুঁয়ে দেখি।
আসুন, একটু মন খারাপ করি।
সময়টা শুধু এখন মন খারাপের, শোকের, কষ্টের।
আর কিচ্ছুর না...
আর কিচ্ছুর না...
___________________________
ডা রাজীব দে সরকার
রেজিস্ট্রার, সার্জারী বিভাগ
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
প্রচার ও জনসংযোগ সম্পাদক, বিএমএ, রাজবাড়ী
আহবায়ক, সুহৃদ সমাবেশ, গোয়ালন্দ।
আপনার মতামত দিন: