Ameen Qudir

Published:
2018-03-10 16:43:59 BdST

আয়া,বুয়া,ড্রাইভার,পিওন :তাদের খালাতো চাচাতো আত্মীয় : সবাই ভিআইপি রোগী


 

ডা. মিথিলা ফেরদৌস
______________________________

সরকারী হাসপাতালের ভিআইপি মানে,বিভিন্ন ভি আই পি অফিসের আয়া,বুয়া,দারওয়ান,ড্রাইভার,পিওন,লিফটম্যান এবং তাদের খালাতো মামাতো চাচাতো রিলেটিভস।

কেস১:
দরজায় সিরিয়ালে,কালো চশমার এক বৃদ্ধ দাঁড়ায় অপেক্ষায়,সে যখন ঢুকবে ঠিক তখন,তাকে প্রায় ধাক্কা দিয়ে একজন ঢুকলো।ঢুকে রুগীর টুল আমার খুব কাছে,এনেই বলে,

:আগে আমার পরিচয় আপনার জানা দরকার,আমি গণভবনে চাকরী করি।

টিকিট হাতে নিয়ে দেখি, অলরেডি,চারবার রেফার্ড।মেডিসিন থেকে অর্থো,সেখান থেকে ফিজিকেল মেডিসিন তারপর আমার কাছে কেসটা আমাদেরও না।বাইরে অসহায় বৃদ্ধ লোকটা দিকে তাকায় চোখ ফিরাই পরিচয় দাতার দিকে।ঠান্ডা ভাবে বলি,

:গণভবন মানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেখানে থাকেন তাই না?আপনি জানেন উনি নিজেও সরকারী হাসপাতালেই চিকিৎসা নেন,উনি প্রধানমন্ত্রী বলেই সম্মান করে উনাকে লাইনে দাঁড়াতে দেয়া হয় না।আমরাই দেই না।কিন্তু আমার মনে আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজেও লাইনেই দাঁড়াতেন আমি উনার সম্পর্কে যতটুকু শুনেছি।আর তাই উনি জননেত্রী।মানে জনগণের নেত্রী বুঝাইতে পারছি?
আমার বলার ঢং এ লোকটার মনে বিশাল সংশয়, আমিই ছোটখাটো নেত্রী কিনা?ভয়ে ভয়ে টুল পিছায় নিয়ে বলে,

:জ্বী ম্যাডাম তা তো ঠিক কথা।
বলতে বলতে পাশের রুমে রেফার্ড করি,কেসটা আসলে আমাদের হাসপাতালেরও না।ডাইরেক্ট সেই হাসপাতালেও রেফার্ড করা যায়।কিন্তু সেইটা নিয়মের মধ্যে পরে না।ভি আই পি দের জন্যে ভি আই পি চিকিৎসা। নিয়ম মেনেই চিকিৎসা।

কেস২:
মহিলাকে দেখে বেশ অবস্থাপন্ন মনে হলো।ঢুকেই বলে,

:আমি পরিবেশ অধিদপ্তরে চাকরী করি।যে যে টেস্ট দিবেন ফ্রি করে দিবেন,আর হাসপাতালের ঔষধ যা আছে তাই দিবেন।
:আমি এই হাসপাতালেই চাকরী করি,আমার নিজের জন্যেও ফ্রি করার কোন সিস্টেম নাই।টেস্ট টাকা খরচ করেই আমাদের করতে হয়।আর ঔষধ! আপনার রোগের ঔষধ সাপ্লাই থাকলে অবশ্যই দিবো না থাকলে কেমনে দিবো?
:আমি জানি সরকারী হাসপাতালের চুরির জায়গা।

রীতিমতো ডাক্তারদের দিকে ইংগিত করেই কথা বলা।
বাইরে একটা শীর্ণ মেয়ের মুখ দেখতে পাচ্ছি,পরনে বিবর্ণ পোষাক।বললাম,
:ওই যে মেয়েটাকে দেখতেছেন,ও কিন্তু একবারো ফ্রি কিছুই চাইবে না।আমার যদি ক্ষমতা থাকতো ওকে পুরাই ফ্রি চিকিৎসা দিতে পারলে ভাল লাগতো।
:ওরা তো চোর!ওরা চুরি করতে পারে।আমরা চুরি করতে পারিনা।
এইবার মাথা ঠান্ডা রাখা কঠিন হয়ে গেলো।
বললাম,
:আপনি মেয়েকে দেখেই বললেন চোর?আপনার কাছে তো পৃথিবীর সবাই চোর।আপনি কতটা ভাল এখন তো আমারই সন্দেহ হচ্ছে।

মহিলা গজ গজ করে,আমাকে গালি দিতে দিতে চলে গেলো।কিছুক্ষণ পর বাইরে,আমার পিওন এসে বলে,
:ম্যাডাম,আজ এক মহিলা আমার সাথে খুব খারাপ ব্যাবহার করছে।মহিলা দেখে কিছু বলতে পারিনি।মনে মনে হাসলাম।

একটা ডাক্তারের কাছে একটা রুগীর সবচেয়ে বড় পরিচয় সে রুগী।এখানে যে রুগীর শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ,আমার কাছে সে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। হাসপাতালের সাপ্লাই বিশাল রুগীর তুলনায় সীমিত। সেইটা ভোগ করে এইসব সুবিধাভোগীরা।অসহায় মানুষ জোর খাটায় না কখনও।অথচ এইসব তাদেরই পাওনা হওয়া উচিৎ।
_____________________________

ডা. মিথিলা ফেরদৌস। ঢাকা।

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়