Ameen Qudir

Published:
2017-10-13 00:55:24 BdST

তিন ক্যাটাগরির লোভীরা ডাক্তারি পড়ে


 

ডা. মিথিলা ফেরদৌস

__________________________

 

 

 

মেডিকেলে পড়া মানেই যে সবাই সেবার জন্যেই এই পেশায় আসে তা না,এর বিভিন্ন কারন আছে,কেউ আসে,
১.সেবার মনোভাব নিয়ে।
২.কেউ গুটিকয়েক ডাক্তারদের গাড়ি বাড়ি দেখে ভাবে ডাক্তারদের টাকা বেশি এই আশায়,বোঝেনা বেশিরভাগ ডাক্তার কি গরিবী হালে দিন যাপন করতেছে।
৩.কেউ কেউ রোগ সারানোর মধ্যে একটা আনন্দ আছে।সেই লোভে আসে।

আমি তৃতীয় শ্রেণীর লোভী।এইটা সত্য সেবা বা টাকার লোভে এখানে আসিনি।একেকটা রুগীর চিকিৎসা করার পর ভাল হয়ে যাওয়ার মধ্যে একটা থ্রিল কাজ করে আমার মধ্যে।তার সংখ্যা যাই হোক।সেইটা হাসপাতাল বা বাইরেই হোক কোন সমস্যা নাই।হাসপাতালের বাইরে এমন হইছে,রুগী ভাল হবার পর টাকা না দিয়া এসে মিঠা কথা কইছে,তাতেই খুশি,রোগ সারাইছি।মাথায় হাত দিয়া দোয়া দিছে।আমি জানিনা দোয়ায় কোন কাজ হয় কিনা!তাই সাময়িক রোগ সারানোর আনন্দটাই আমার কাছে বড়।

এখন আসি প্রথম দুই শ্রেণী নিয়া,সেবা বা টাকা অন্য সব প্রফেসনেই আছে।প্রতিটা প্রফেসনেই কিন্তু সেবার জন্যেই।সেবার মাধ্যমে সৎ উপার্জন। কিন্তু একমাত্র ডাক্তারিটাকেই সেবার পেশা হিসেবে সবাই কেন চিহ্নিত করে বুঝিনা।তাদের কি উপার্জনের দরকার নাই?তাদের কি পরিবারের মানুষ হাওয়া বাতাস খেয়ে থাকবে? আজব কারবার।

আর টাকা ইনকাম যদি মুল উদ্দেশ্য হয় তবে ডাক্তারিতে আসাটা বোকামো।অন্য যেকোন পেশায় খুব সহজে টাকা উপার্জন করা যায়,যেখানে ডাক্তাদের টাকা টোকায় টোকায় আনতে হয়।বেশির ভাগ ধনী ডাক্তার(আমাদের দেশের) দেখবেন বৃদ্ধ।যখন টাকা দিয়া আনন্দ করার কিছু থাকেনা।

কাজেই আপনার টার্গেট যদি হয়,আমার প্রথম দেয়া দুইটা টাইপ তাহলে অন্য পেশা কিন্তু খারাপ না।
এখন আসি মেধা।মানুষের মেধা দুই ধরনের কেউ সৎ পথে মেধা খরচ করে বড় হয়,আর কেউ অসৎ পথে।এই সৎ -অসৎ রা সব প্রফেসানেই আছে।কিন্তু লাফালাফি করা হয় ডাক্তার আর পুলিশ নিয়ে।পুলিশ নিয়া গালাগালি হয় গোপনে।আর ডাক্তার নিয়া প্রকাশ্যে কারণ নিরীহ প্রজাতির উপর রাগের প্রকাশ ঘটানো সবচেয়ে সোজা।

আজকেও শুনলাম আমার হাসপাতালে দুই বিভাগে রুগী মৃত্যূকে কেন্দ্র করে ডাক্তার পিটানো হইছে।স্বাভাবিক ঘটনা।রুগী মরতেই পারবেনা কোন ভাবেই।রুগীর অমরত্বের দায়িত্ব একমাত্র বাংলাদেশের ডাক্তারদের।একটা হাসপাতালে গড়ে কয়টা রুগি প্রতিদিন মারা যায় কয়টা রুগি প্রতিদিন বেচে যায়,ভাল হয়ে ফিরে যায় সেই রেসিও কেউ জানেন কি?না জানলে জেনে নিবেন।
সম্প্রতি মেডিকেল ভর্তি পরিক্ষায় সর্বনিম্ন ৭০.৫ নিয়া সরকারী মেডিকেলে চান্স মিলেছে।বাকিদের জন্যে ৪০ নাম্বার পর্যন্ত বেসরকারীতে ভর্তি হতে পারবে।হতে পারে ৭০ নাম্বার যে পাইছে সে টাকা দিয়া ভর্তি হতে পারবেনা।আবার ৪০ নাম্বার নিয়াও ভর্তি হবে,শুধু তাই না অনার্স মার্ক নিয়া একদিন ডাক্তারও হবে।এমন অনেক দেখছি তাই বলতে বাধ্য হইলাম টাকা আর ক্ষমতার জোর অনেক বড় জোর রে ভাই।

মেডিকেলে পড়ার জন্যে খুব মেধাবীই হতে হবে এমন কোন কথাও নাই।মেডিকেলে আমার দেখা এভারেজ স্টুডেন্টরা ভাল করে।মেডিকেলে ভাল রেজাল্টের জন্যে পরিশ্রমী হওয়া দরকার।যেইটা মেধাবীরা করতে চায়না।সেক্ষেত্রে মেডিকেলে মেধাবীরা ভাল করতে পারেনা।সেই মেধা দিয়ে তারা যেকোন জায়গায় ভাল করতে পারতো।

ফাউন্ডেসান ট্র্বেনিং এ এক স্যার কে পেয়েছিলাম,জয়েন্ট সেক্রেটারি। উনি একবছর সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে পড়ে পরের বছর ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিলেন।অসম্ভব মেধাবী এই লোকের ক্লাশ সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতাম।দেখতে ভাল ছিলেন না।কিন্তু মেধা এমন,যা দিয়ে অসুন্দর মানুষকে সুন্দর লাগে।এত বছর পরে ও শ্রদ্ধা ভরে স্যারকে তাই স্মরণ করতে বাধ্য হলাম।

কেন সব মেধাবিকে মেডিকেল বুয়েটেই পড়তে হবে বুঝিনা।মেধার বিকেন্দ্রীকরণ দরকার।মেধাবীরা সবখানেই থাকবে সমানভাবে।বিশেষ করে প্রশাসনে মেধাবি, সৎ আর দক্ষ ছেলে মেয়েদের দরকার।তাই বার বার বলতে চাই পেশা নির্বাচনে একটু সিলেক্টিভ হউন প্লিজ।স্রোতে গা ভাসায় ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবার কোন মানে নাই।

________________________________

ডা. মিথিলা ফেরদৌস। সুলেখক।

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়