Ameen Qudir

Published:
2017-09-19 17:05:44 BdST

অপরাধ কার ? লাঞ্ছিত হয় কে ?


 

বিনা দোষে লাঞ্ছিত এক চিকিৎসক। ফাইল ছবি। 



ডা. বাহারুল অালম
___________________________

সরকার এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন সরবারহ না করে রোগীর চিকিৎসার কৃতিত্ব নিতে পারছে চিকিৎসকদের সুবাদে । চিকিৎসকগণ ‘এন্টিবায়োটিক প্রয়োজন’ এমন রোগীর চিকিৎসা দেওয়া থেকে বিরত থাকেন নি। তাদের এই মহানুভবতার কারণে স্বাস্থ্য/চিকিৎসা কর্তৃপক্ষের এই নির্লজ্জ উদাসীনতা দীর্ঘমেয়াদি রূপ নিয়েছে। নাগরিকদের স্বার্থে চিকিৎসকগণ ঐ ভূমিকা রাখা থেকে বিরত না থাকলে চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহ না করার বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদি থেকে চিরস্থায়ী রূপ নেবে ।


-----------
পত্রিকান্তরে খবর হল
যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে এন্টি বায়োটিক ইনজেকশন নেই দু’মাস
সাংবাদিক
বিল্লাল হোসেন জানান, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতারে অতি প্রয়োজনীয় এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন শূন্য হয়ে পড়েছে। গত দু’মাস ধরে হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে এ ওষুধের সংকট থাকায় গরিব রোগীর চরম বিপাকে রয়েছেন। মূল্যবান এসব ইনজেকশন বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনে এনে রোগীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে তারা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। ভুক্তভোগীরা বলেছেন এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন হাসপাতালে থাকলে তারা আর্থিকভাবে উপকৃত হতেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শেষ হয়ে যাওয়া ওষুধের চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে ওইসব ইনজেকশন এসে যাবে। জানা গেছে, যশোরসহ পাশের কয়েকটি জেলার মানুষ উন্নত চিকিৎসাসেবা পাওয়ার আশায় সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান যশোর ২৫০ শয্যা জেনরেল হাসপাতালে ভর্তি হন। ২৫০ শয্যা হলেও এখানে প্রতিদিনি সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ রোগী চিকিৎসাধীন থাকেন। যার অধিকাংশই গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের। এসব রোগীর অনেকেরই স্বজনের মূল্যবান এসব এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন কেনার সামর্থ্য থাকে না।

হাসপাতাল থেকে দেয়াসরকারের সরবরাহকৃত ওষুধ তাদের প্রধান ভরসা। রোগীদের কতা বিবেচনা করে সরকার ও ৮৪ প্রাকারের ওষুধ সরবরাহ করে থাকে। এর মধ্যে ইডিসিএলএর ৪৪ প্রকার ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্থানীয় অর্থে টেন্ডারের মাধ্যমে ক্রয় করা হয় ৪০ প্রকারের। এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে এ হাসপাতালে অতি প্রয়োজনীয় কোন এন্টিবায়োটিক নেই।


গত দু’মাস ধরে এ শূন্যতা চলছে। তবে কোন কোন ওয়ার্ডে এর অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। হাসপাতালে না থাকা এন্টিবায়োটিকের মধ্যে উলে¬খযোগ্য হচ্ছে ইনজেকশন সেফটিয়াক্রোন ১ গ্রাম, ২ গ্রাম, সেফুর এক্সিম ৭শ’ ৫০ গ্রাম, সিপ্রোফ্লোকসাসিন, মেট্রোনিডাজল। এছাড়া গ্যাসের ইনচেকশন ওমিপ্রাজল ও প্যানটোনিক্স না থাকার কারণে ওয়ার্ডে রোগীদৈর দেয়া হচ্ছে না। পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডসহ প্রায় ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে। অধিকাংশ রোগীর ব্যবস্থাপত্রে চিকিৎসকরা সেফট্রিয়াক্রোন ১ গ্রাম অথবা ২ গ্রামইজেকশন লিখেছেন। সাথে গ্যাসের ইনজেকশন। আবার ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় যোগ রযেছে সিপ্রোফ্লোকসাসিন ও মেট্রোনিডজল ইনজেকশন। যে কয়দিন হাসপাতালে রোগী চিকিৎসাধীন থাকবেন প্রতিদিন সকাল ও রাতে এসব এন্ট্রিবায়োটিকইনজেকশন রোগীর শরীরে প্রয়োগ করা হয় বলে মেডিসিন ওয়ার্ডে দায়িত্বরত এক সেবিকা জানান। ওষুধ ফার্মেসীতে খোঁজ নিয়ে জানা যায় ইনজেকশন সেফটিয়াক্রোন ১ গ্রাম প্রতি পিস ১৯০ টাকা, ২ গ্রাম ৩০০ টাকা, সেফুর এ´িক ৭শ’ ৫০ গ্রাম ১শ’ ২৫ টাকা, সিপ্রোপে¬াকসাসিন ১০০ টাকা, মেট্রোনিডাজল ৫৩ টাকা, ওমিপ্রাজল ৯০ টাকা ও প্যান্টোনিক্স বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকায়।


হাসপাতালের পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার বেলাট গ্রামের আক্কাস আলীর স্ত্রী জানান, প্রতিদিন ২টি করে সেফটিয়াক্রোন ১ গ্রাম ও ২টি প্যানটোনিক্স ইনজেকশন কিনতে তার ব্যয় হচ্ছে ৪শ’ ৬০ টাকা। প্রতিদিন এত টাকার ওষুধ কিনতে গিয়ে তার মতো অনেক রোগীর স্বতনেই হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে হাসপাতালের স্টোর কিপার আফজাল হোসেন জানিয়েছেন, রোগীদের চাহিদা বেশি থাকায় এসব এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন মেষ হয়ে গেছে। নতুন ওষুধ আসলে রোগীর স্বজনদের হতাশা কেটে যাবে।


হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ সাহা জানিয়েছেন, স্টোরে থাকা পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণে এসব ইনজেকশন রোহীদের দেয়া হয়েছে। শেষ হয়ে যাওয়ায় রোগীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। ফুরিয়ে যাওয়া ওষুধের চাহিদা পত্র ইিডিসি এলে পাঠানো হয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে এসব ওষুধ হাসপাতালে পৌঁছে যাবে। সচেতন মহল বলেছেন, ওষুধ ফুরানোর আগেই চাহিদা পত্র পাঠালে এ নেই নেই অবস্থার সৃষ্টি হতো না।
_____________________

ডা.বাহারুলের আরও বক্তব্য _________

হাসপাতালের সংকটাপন্ন রোগীর জীবন রক্ষার উপকরণ তৈরি ও পর্যাপ্ত রাখা, রোগ নির্ণয় যন্ত্রপাতি সচল রাখা, ঔষধের যোগান নিয়মিত রাখার দায়িত্ব সরকার > মন্ত্রণালয় > প্রতিষ্ঠান এর। এ সকল প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ না রাখার দায়িত্বহীনতা প্রশ্রয় পেতে পেতে এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে – জনগণ বিশ্বাস করে ফেলেছে এ সবকিছুর জন্য চিকিৎসক দায়ী । ফলে আক্রান্ত হচ্ছে, লাঞ্ছিত হচ্ছে চিকিৎসক, প্রতারিত হচ্ছে জনগণ। কর্তৃপক্ষ নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে ‘মুচকি হাসি’ দিচ্ছে — নিজেদের দোষ ঢাকতে মাঝেমধ্যে হুংকারও দিচ্ছে। আবার ‘হ্যালো চিকিৎসক’ বলে সুড়সুড়িও দিচ্ছে। অথচ হ্যালো বলে কখনও জিজ্ঞাসা করে না ‘ চিকিৎসা দেওয়ার সব ব্যবস্থা/ উপকরণ বিদ্যমান আছে তো ?
___________________________________

ডা. বাহারুল আলম । লোকসেবী চিকিৎসক ও পেশাজীবী নেতা।

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়