Ameen Qudir

Published:
2017-09-16 20:02:00 BdST

"আধাঘন্টা পরে সে এলো: জানোয়ারটাকে দেখে বহু কষ্টে মুখ সামলালাম "


 

 

 

মুশতারী মমতাজ মিমি

 

_________________________________

টুকির সঙ্গে আমার প্রথম যখন পরিচয় তখন ও ক্লাস নাইনে পড়ে।আমি তখন সদ্য অনার্স শেষ করে বেকার জীবন পার করছি। বাপের হোটেলে খাই আর সারাদিন বিসিএস এর বইয়ের মধ্যে মুখ গুঁজে পড়তে থাকি। আমাদের বাড়ির ঠিক উল্টোদিকের বাড়িটাতেই ভাড়া থাকতো টুকিরা। টুকি ওর আসল নাম নয়। আমি আদর করে ডাকতাম...
খুব মিষ্টি আর দুরন্ত একটা মেয়ে ছিলো টুকি। ঠিক যেন ফড়িংয়ের মতো। বড্ড চঞ্চল আর বাঁধনহারা। সারাদিন ওর ফনিক্স সাইকেলটা নিয়ে টইটই করে ঘুরতো আর পাড়ার ছোট ছোট ছেলেদের সাথে ক্রিকেট খেলে বেড়াতো। সন্ধ্যে হলেই পড়া বুঝিয়ে নেয়ার ছল করে আমার রুমে হানা দিতো। পাড়ার সব কয়টা হাঁড়ির খবরাখবর থাকতো ওর কাছে।প্রতিদিন সেসবের আপডেট আমাকে না বললে ওর খাবারই হজম হতো না। কথার মধ্যে কোন বিরতি দিতো না টুকি। এক নিঃশ্বাসে গড়গড় করে সব বলে যেতো।
এতো সব দুরন্তপনার মধ্যেও টুকির একটা অদ্ভুত ভালো অভ্যাস ছিলো। ওর বই পড়ার নেশা ছিলো খুব। অদ্ভুত বলছি এই জন্য যে ওর চালচলনের সাথে ব্যাপারটা একদমই যায় না। রবীন্দ্রনাথ,শরৎ
চন্দ্র,সমরেশ থেকে শুরু করে গোয়েন্দা গল্প, সায়েন্স ফিকশন সবই পড়তো ও। কিছু বাছ-বিচার করতো না। আমার শেল্ফের যে তাক থেকে বই নিতো পড়া শেষ করে সেই তাকেই গুছিয়ে রেখে যেতো আবার। আর যাওয়ার আগে বইটা কেমন লেগেছে সেটার উপর একটা বিশাল বক্তৃতা ঝেড়ে দিতো আমাকে।
পড়াশোনার বাইরে টুকি ছিলো আমার একমাত্র বন্ধু। বন্ধু ঠিক না,ছোট বন্ধু।
আমি মাগরিবের নামাজ পড়ে টুকির জন্য অপেক্ষা করতাম। ওর চোখ বড় বড় করা ছেলেমানুষি গল্প শুনে একগাল হেসে তবেই পড়তে বসতাম।
টুকির জন্য আমার টেবিলের কলমদানীতে অনেকগুলো করে ম্যাংগো বার আনা থাকতো। ম্যাংগোবার খুব পছন্দ করতো ও। রুমে ঢুকলেই আগে একটা বার তুলে নিতো কলমদানী থেকে। তারপর একটা আকর্ণবিস্তৃত হাসি ছুঁড়ে দিতো আমার দিকে। সেই মুহূর্তে আমার মনে হতো আমি যেন বিশ্বজয় করে ফেলেছি। বারটা খেতে খেতে টুকি ওর সারাদিনের গল্প বলতো আমাকে। যদিও সেসব নিছক ছেলে মানুষিতে ভরা কথা ছিলো তবুও তন্ময় হয়ে শুনতাম...
আম্মা সেসময় প্রতিদিন সন্ধ্যার পর আমার রুমে বসে সুপারি কাটতেন।টুকির কথা শুনে হেসে কুটি কুটি হতেন।
হুট করেই আমাদের বাসায় আসা বন্ধ করে দিলো টুকি। ব্যাপারটা বেশ খটকা লাগলো আমার। যে মেয়ে টার্ম পরীক্ষার আগের দিনেও আমার রুমে এসে আমাকে দোয়া করতে বলে যায়,সে কিনা দু'সপ্তাহ ধরে আসছেই না। আর কিছুদিন দেখে ওদের বাসাতেই চলে যাবো ভাবছি তার আগে ও-ই আমাদের বাসায় এলো। হাতে একটা মোবাইল ফোন।আগের থেকে ওকে একটু আলাদা ঠেকলো যেন। কেমন একটা গোছানো গোছানো ভাব চেহারায়,দুচোখে শীতল চাহনি,চুলগুলো পরিপাটী করে আঁচড়ানো।

 

প্রতিবার ও নিজ হাতে ম্যাংগোবার নেয়,এবার নিলো না। আমি নিজেই একটা বার দিলাম ওকে। ও গম্ভীর হয়ে নিলো।
জিজ্ঞেস করলাম-"কি হয়েছে রে তোর?অমন গোবদামার্কা ভাব ধরেছিস কেন?"
টুকি অনেকক্ষণ ধরে মুখের মধ্যে একটা লজ্জাভাব ধরে থাকলো। তারপর কাচুমাচু করে বলল- "আমার একটা প্রেম হয়েছে।"
কথাটা শোনামাত্রই হাসতে হাসতে আমার মরে যাবার জোগাড়। এতটুকু বাচ্চা মেয়ে! তার নাকি প্রেম হয়েছে!

 

 


টুকি আমার দিকে জলন্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বুঝতে পারলাম ও বেশ সিরিয়াস। আমার হাসিটা স্থায়ী হলো না। যেন কোন বিশ্বযুদ্ধের মধ্যস্ততার মিটিং হচ্ছে চেহারায় এমন একটা ভয়ঙ্কর কাঠিন্য এনে বললাম-কি হয়েছে বল!
টুকি দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে খাটের পাশে রাখা একটা টুলট এনে আমার মুখোমুখি বসলো। ডান হাতটা টেনে ধরে বললো- আপু,তুমি কাউকে বলবে না কথা দাও।
ওর কথার ধরন দেখে হেসে ফেললাম। বললাম- তোর কথা মানুষকে বলে আমার কি লাভ?
টুকি: আমার সত্যিই একটা প্রেম হয়েছে। তুমি সিরিয়াসলি নাও আপু।
আমি:হুম। ছেলে কোথায় পড়ে?
টুকি:পড়ে না।পড়া শেষ।ইঞ্জিনিয়ার।
আমি:তুই ক্লাস টেন-এ পরিস আর ওই ছেলে জব করে?
টুকি: আমার থেকে মাত্র সাত বছরের বড়। বাবাও তো মার থেকে সাত বছরের বড়!
টুকির কথার কোন জবাব খুঁজে পেলাম না। কী বলবো ভেবে না পেয়ে টুকিকে বললাম যাই করিস না কেন পড়াশুনাটা করিস।
টুকি ফিক করে হেসে দিয়ে দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল টুকি।

 

আমি কিছুক্ষণ থ হয়ে থাকলাম।
অল্প কিছুদিনের মধ্যে টুকি একদম বদলে গেলো। সারাদিন দরজা বন্ধ করে বাড়িতে থাকে, বাইরে প্রায় একদমই বেরোয় না।ফনিক্স সাইকেলটা ওর বেলকনিতে খুব অবহেলায় পড়ে থাকতে লাগলো। আমি নিশ্চিত যে ওটাতে ধুলোর কয়েকটা পরদ পড়ে গিয়েছিলো। মাঝে মাঝে টুকিকে বেলকুনিতে কিংবা ছাদে দেখি। তখন ওর কানে ফোন থাকে। আমার সাথে চোখাচোখি হলে হাত নেড়ে হাই-হ্যালো করে কিন্তু ফোন কান থেকে নামায় না।
মাঝে মাঝে আমার মনে হতো টুকির মাকে ব্যাপারটা খুলে বলি,তিনি হয়তো টুকিকে বোঝাতে পারবেন। কিন্তু আন্টির বদমেজাজী স্বভাবের জন্য সাহস পেতাম না। টুকি নিয়ম করে প্রতি সপ্তাহে একবার আমার রুমে আসতো। যতক্ষণ থাকতো শুধু নাহিদের কথাই বলতো।
নাহিদ নাকি অনেক কেয়ারিং। ক্রিকেট খেলা পছন্দ করে না,ছেলে বন্ধুদের সাথে কথা বলা দেখতে পারে না, বাইরে বের হলে রাগ করে, স্কুল প্রোগ্রামে নাচ,গান করতে নিষেধ করে,সাইকেল চালাতে দেয় না,ব্লা,ব্লা...

 


টুকি এসব নিয়ে মহাখুশি। নাহিদ ওকে এতো ভালবাসে! আমি ওকে বুঝালাম এসব ভালোবাসা নয় ,এসব হলো কর্তৃত্ব ফলানো। ভবিষ্যতে এই ছেলে টুকির সব কাজে বাঁধা দেবে।টুকিকে একঘরে করে দেবে। টুকি এসব আমালেই নিলো না।
নাহিদকে এসব ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে নাহিদ বললো এখন থেকেই টুকিকে ও ওর মতো করে গড়ে তুলবে। সবকিছুতে টুকির মতো চলতে দিলে টুকি মাথায় উঠে যাবে। নাহিদকে মানবে না। নাহিদ যখন এসব বলতো নাহিদকে খুব বলতে ইচ্ছে হতো যে নাহিদ যখন ষোলো বছরের কিশোর ছিলো তখন ওকে কেউ এতো বাঁধা দিতো কিনা! পাছে নাহিদ আমার নামে টুকির কান ভারি করে সেই ভয়ে নাহিদকে কিছু বলতাম না। টুকি তখন কিশোর প্রেমের ফ্যান্টাসিতে ভুগছিলো। পুরো দুনিয়ার সবাইকে ভুল বুঝলেও নাহিদকে সে কখনোই ভুল বুঝতো না ও সেসময়।
এভাবে অসম প্রেমে প্রায় দুবছর কেটে গেলো ওদের।

 


টুকির নাহিদ ঘোর কেটে যেতে শুরু করলো প্রেমের তিন বছর পর হবার পর। যখন টুকি দিনাজপুর মেডিকেলে পড়তে শুরু করলো। টুকি দেখলো ওরা সব বন্ধুরা এক সাথে আড্ডা দেয়, ইচ্ছে হলেই যেখানে সেখানে ঘুরতে যায়, মনে চাইলেই বিনা নোটিশে শহরের এক কোনার রেষ্টুরেন্টে খেতে চলে যায়। পরীক্ষার সময় ছেলে-মেয়ে ভেদাভেদ ভুলে লাইব্রেরির টেবিলের গোল করে বসে দিনরাত পড়াশোনা করে, পরীক্ষার রেজাল্ট দিলে পাশের খুশিতে একসাথে দলবেঁধে খেতে যায়। টুকি এসব শুধু দূরে থেকে খেয়াল করে। নাহিদ এসব একদমই পছন্দ করেনা। বন্ধুদের সাথে কিছু একটা করার কথা শুনলেই সে টুকিকে বকাবকি করে,ঝগড়া বাঁধিয়ে একাকার করে দেয়। টুকি নাহিদের এসব ব্যবহারে খুব কষ্ট পেতো। নাহিদ ওদের সম্পর্কের প্রথম দিকে টুকিকে নাহিদের ভার্সিটি লাইফের লোভনীয় সব গল্প শোনাতো। টুকি নাহিদের গল্প শুনতো আর ভাবতো নাহিদের মতো টুকিও ওর ভার্সিটি লাইফটা মজা করবে।
কিন্ত সেই নাহিদই এখন টুকিকে সবকিছুতে বাঁধা দেয়। এমন আচরণ করে যেন নাহিদ কখনো ভার্সিটিতেই পড়ে নি। টুকির বড় দূর্বলতা ছিলো ও নাহিদকে অনেক ভালবাসতো। এজন্যই কিছু বলতো না।

 

এতোকিছুর মাঝেও টুকিটাকি আমরা সাথে যোগাযোগ রেখেছিলো।আমি তখন রংপুর মেডিকেল কলেজ কোয়ার্টারে থাকি।মাঝে মাঝে আমাকে ফোন করে কাঁদতো। আমি ওকে বোঝাতাম। নাহিদকেও বোঝাতাম। কিন্তু কোন লাভ হতো না।
নাহিদ বুঝতো না যে টুকি আগের সেই ষোল বছরের কিশোরীটা নেই। ও বড় হয়েছে, বুঝতে শিখেছে,ব্যক্তিত্ব পরিপক্ক হয়েছে। টুকির এখন অনেক স্পেস দরকার এই জন্য যে ওর কাছে যেন সম্পর্কটা বোঝা না হয়ে যায়। নিজেকে যেন হুকুমের গোলাম মনে না হয়! নাহিদ চাইতো টুকি কেবল নাহিদের মতো করে চলবে কিন্তু নাহিদ টুকিকে কোন ছাঁড় দেবে না।

 

টুকি আর নাহিদের ঝগড়া-ঝাটির সম্পর্ক সামলাতে আমি যখন একেবারেই ক্লান্ত হুট করে একদিন নাহিদ কল দিলো। বললো ও টুকিকে গোপনে বিয়ে করে রাখতে চায়। কারণ টুকি ওর কথা আজকাল একদমই মানছে না। আমি যেন বিয়ের ব্যবস্থা করি।আমি কড়া করে বকে দিলাম নাহিদকে। বললাম এই কথা আর দুবার তুললে টুকির বাবা মাকে সব বলে দেবো। সেদিনের পর থেকে নাহিদ আমাকে আর কল দেয় না।
তারপর প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেছে। তখন বর্ষাকাল।একদিন রাতে খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো। কাকভেজা হয়ে চেম্বার থেকে ফিরেছি কিছুক্ষণ আগে। কাপড় চেঞ্জ করে সবে কফির মগটা হাতে নিয়েছি দেখি মোবাইলে রিং হচ্ছে। ধরতে ধরতে কেটে গেলো। মোবাইলটা হাতে নিলাম। টুকি আট বার কল দিয়েছে। ভয় পেয়ে গেলাম। এতো রাতে মেয়েটার কি হলো আবার!
কল ব্যাক করলাম।
টুকি: আমি তোমার কোয়ার্টারের সামনে। তোমার ফ্ল্যাট কোনটা?
আমি: তুই এতো রাতে দিনাজপুর থেকে? কি সব বলছিস।
টুকি: আমি ভিজে চ্যাপচ্যাপা হয়ে গেছি। আগে তোমার বাসয় নাও।
বলে লাইনটা কেটে দিলো।
আমরা বর নীচে গিয়ে টুকিকে খুঁজে আনলো। বৃষ্টিতে ভিজে ঠকঠক করে কাঁপছে টুকি। চুলগুলো ভেজার পরেও এলোমেলো হয়ে আছে। দৃষ্টি উদ্ভ্রান্ত। কোন কথা না বলে ওকে আগে ড্রেস দিলাম চেঞ্জের জন্য। তারপর খেতে বসালাম। গপাগপ খেয়ে নিলো মেয়েটা।খাওয়া হলে হাতে কফির মগ ধরিয়ে দিয়ে বারান্দায় নিয়ে গেলাম ওকে।

 

টুকি আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। খুব ধীরে ধীরে থেমে থেমে বলে গেলো কথাগুলো।আমি স্তব্ধ হয়ে শুনছিলাম। নাহিদ ঝগড়া-ঝাটিকরে,মানসিক চাপ দিয়ে ওকে গোপনে বিয়ের করাতে রাজি করেছে।টুকি নাহিদের কথায় রংপুর এসেছে আজ সন্ধ্যায় । নাহিদের কোন এক বন্ধু সব ব্যবস্থা করবে বিয়ের।আজকেই ওদের বিয়ের কথা ছিলো। কিন্তু রংপুর আসার পর পর নাহিদ বিয়ের কোনও নামগন্ধ না করে ওকে একটা হোটেলের নিয়ে গেলো।নাহিদ স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে একটা কামরা বুক করতে চেয়েছিলো। টুকি ভয় পেয়ে চেঁচামেচি করে হোটেল থেকে বেরিয়ে এসেছে। গন্ডগোলের ভয়ে নাহিদ কিছু বলার সাহস পায়নি। বাইরে এসেই টুকি রিকশা নিয়ে আমরা কোয়ার্টারে চলে এসেছে।
আমি নাহিদের উপরে রাগে দিশেহারা হয়ে গেলাম। নাহিদ তখন টুকিকে বারবার কল দিচ্ছে।
আমি রিসিভ করলাম। নাহিদ আমতা আমতা করছে।

 

নাহিদকে আমার বাসায় চলে আসতে বললাম। ও খুঁট করে লাইন কেটে দিলো। ওর নম্বরে এসএমএস করলাম-
"নাহিদ, তুমি এই মুহূর্তে আমার বাসায় না আসলে আমি থানার পুলিশ করাবো কিন্তু। আমি আগের বাসাতেই আছি।"
আধাঘন্টা পর নাহিদ এলো। জানোয়ারটাকে দেখে বহু কষ্টে মুখ সামলালাম।
আমি:তুমি নাকি ওকে বিয়ের করতে চেয়েছিলে? কাজী কই?
নাহিদ:( হকচকিয়ে)। আপু,বৃষ্টির জন্য আসতে পারেনি।
আমি:কাজীর ঠিকানা বলো। আমার গাড়ির নিয়ে যাবো। আজকেই বিয়ের দেবো তোমাদের।
নাহিদ: আমিতো জানিনা। আমা ফ্রেন্ড জানে।
আমি:ফ্রেন্ডকে ডাকো। এটা বলো না যে,যোগাযোগ করতে পারছো না।সোজা থানার নেবো।
নাহিদ ভরকিয়ে গেলো। মাথায় নীচু করে বললো- আপু টুকি আমরা কথা শুনতো না জন্য আমি ওকে রংপুরে এনেছি। ফ্রেন্ডরা বলেছে ওর সাথে একরাত একসাথে থ্কলে ও আগের মতো আমার কথা শুনবে।

 

টুকিটাকি চুপচাপ সব শুনছিলো। হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল। এগিয়ে এসে নাহিদকে কষে একটা চড় দিলো। চিৎকার করে বললো -"তুই এই মুহূর্তে চলে যা। তোর সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক নেই।"
বলে জোর পায়ে হেঁটে বেলকুনিতে গেলো।
অপ্রত্যাশিত ঘটনায় নাহিদ ভয় পেয়ে গেলো। আস্তে আস্তে বাস থেকে উঠে গেট খুলে সিঁড়ি বেয়ে নামতে থাকলো। আমি গেট লাগিয়ে দিয়ে টুকির কাছে গেলাম।
নীচের রাস্তা দিয়ে নাহিদ দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে যাচ্ছে। ওর অবয়বটা ধীরে ধীরে অস্পষ্ট হয়ে আসছে। বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে টুকি ঝড় ঝড় করে কাঁদছে। আমি জানি টুকি আর কখনো নাহিদের কাছে ফিরবে না।
আর আমি এটাও জানি নাহিদ আজ যা হারালো তার জন্য সারাজীবন পস্তাতে হবে ওকে।
তারপর আরো তিনবছর পেরিয়ে গেছে।পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছে টুকির।আমার ছোট টুকি ভালো আছে এখন। বরকে নিয়ে অনেক ভালো আছে।
আজ চেম্বারে টুকি এসেছিলো চেক আপ করাতে। ওর পেটে আরেকটা ছোট টুকি বেড়ে উঠছে। সেও ভালো আছে। টুকি আর ওর বরকে বিদায় দিয়ে বড্ড নষ্টালজিক হয়ে পড়েছিলাম। সেজন্যই দুকলম লেখা...
প্রথম পর্ব:আগের স্ট্যাটাসে।
(বি:দ্র: সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা। সামান্য পরিবর্তন করে লিখেছি। ঘটনায় টুইষ্ট না পেলে লেখক দায়ী নয়।

___________________________________

মুশতারী মমতাজ মিমি। শিক্ষার্থী
রংপুর মেডিকেল কলেজ।

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়