Ameen Qudir

Published:
2017-09-07 19:08:12 BdST

মানুষের পাশে সন্ধানী






মনির হোসেন শিমুল

______________________________


১৬ আগস্ট ভোর থেকে তাঁরা কাজ করেছেন। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সন্ধানীর কর্মীরা হাসপাতালের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, রোগীদের কাছে সাহায্যের বাক্স নিয়ে গেছেন। ওয়ার্ড ও কেবিনে ঘুরে, আউটডোরের সিরিয়ালের লাইনে, জরুরি বিভাগের সামনে রোগীর আত্মীয়দের কাছে গিয়ে সাহায্য চেয়েছেন। মেডিক্যাল কলেজটির অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে প্রায় সবাই সাহায্য করেছেন। কোথাও পেয়েছেন ৫০০, কেউ ৫, ১০ টাকাও দিয়েছেন। তাঁদের মতো সন্ধানীর আরো ২০টি ইউনিট সাহায্য সংগ্রহ করেছে।


এ নিয়ে বলতে গিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ‘সন্ধানী’র সভাপতি নাজমুন নাহার তানিয়া বললেন, ‘কেউ আমাদের স্বেচ্ছায় সাহায্য করেছেন। কেউ টাকা দিয়ে কী করবেন জানতে চেয়েছেন। তাঁদের বলেছি, এই নগণ্য টাকাই একসঙ্গে মিলে অনেক হয়ে যাবে। তাঁর এই টাকায়ই কোনো না-খাওয়া মানুষের এক বেলা পেট ভরে থাকবে। মেডিক্যালের চৌহদ্দি পেরিয়ে শপিং মল, পথঘাটেও ঘুরেছি।

রাজশাহী শহরের মানুষের কাছে গিয়েছি। ’ গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিক্যাল কলেজের সন্ধানীর বন্ধুরা ক্যাম্পাস, সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়েছেন।


এই কলেজের সন্ধানী ইউনিটের ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ আরমান বললেন, “২২ আগস্ট সন্ধ্যায় স্মৃতিসৌধে মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে আসা বাবাকে সাহায্যের জন্য বললাম। তিনি তাঁর তিন বছরের মেয়ের সামনে ১০০, ৫০ ও ১০ টাকার তিনটি নোট রেখে বললেন, ‘মা, ওদের টাকা দাও। ’ তিন বছরের ছোট্ট মেয়েটি ঠিকই ১০০ টাকার নোট তুলে দিল। ” কেন্দ্রীয় পরিষদের ডোনার ক্লাব ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক এ এস এম রাকিবুল ইসলাম এই বিরাট কাজের কিভাবে শুরু হয়েছিল বললেন, ‘বন্যা শুরুর খবর পেয়েই আমরা প্রতিটি ইউনিটের কাছে সাধ্যমতো সাহায্যের জন্য আবেদন জানাই। ’ যেসব এলাকা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেখানকার ‘সন্ধানী’ বন্যার্তদের সাহায্য করেছে। দিনাজপুরে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়েছে।


দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজের ‘সন্ধানী’ ইউনিটের সভাপতি মুশফিক উল মুকিত বললেন, ‘১৪ আগস্ট বন্যার শুরুর দিন থেকে আমরা বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সঙ্গে যৌথভাবে টানা তিন দিন ১২টি আশ্রয়কেন্দ্রে হেলথ ক্যাম্প করেছি।


আমাদের কলেজের অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে মিলে ২২ আগস্ট বিরল উপজেলার ৩৫০টি পরিবার, ২৩ আগস্ট রানীগঞ্জের সাঁওতাল পল্লীতে ১০০টি পরিবার ও পরদিন কানাই গ্রামের ১০০ পরিবারকে ত্রাণ দিয়েছি। কেন্দ্রীয় পরিষদের সঙ্গে মিলে আমরা আরো ১০-১৫টি ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম ও হেলথ ক্যাম্প করব। ’ রংপুর মেডিক্যাল কলেজের ‘সন্ধানী’র সভাপতি রায়হান শরীফ বললেন, ‘২৪ আগস্ট গাইবান্ধার সিধাইচরে ২০০ পরিবার ও লালমনিরহাটের কুলাঘাট উপজেলায় ১০০ পরিবারকে ত্রাণ দিয়েছি। ’ বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজের সন্ধানী ত্রাণ বিতরণ, হেলথ ক্যাম্প করেছে, বলেছেন ইউনিটের সভাপতি তাবিহা তানজীম।

 

কেন্দ্রীয় পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক সুফিয়ান সিদ্দিকী বললেন, ‘সব ইউনিটের তোলা চাঁদায় ২৯ আগস্ট কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় ৫০০ পরিবারকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। ছিল চিঁড়া, গুড়, খাওয়ার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধ করার ট্যাবলেট, মোমবাতি, দিয়াশলাই। ’ কেন্দ্রীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রিদওয়ান জুবায়ের রিয়াদ বললেন, ‘মেডিক্যাল ও ডেন্টালের ছাত্র-ছাত্রীদের একটি সংগঠনের মাধ্যমে এত বড় ক্ষতির মোকাবেলার জন্য সাহায্য তহবিল জোগাড় করতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়েছে। ’


কেন্দ্রীয় পরিষদের সভাপতি শাহ পরান ইসলাম প্রবাল বললেন, ‘ঈদের পর আমরা কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর ও লালমনিরহাটে আরো ত্রাণ পাঠাব। হেলথ ক্যাম্প করব, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পানিবাহিত রোগের হাত থেকে বাঁচার উপায় নিয়ে প্রচারণা চালাব। ’ তাঁর কাছ থেকে জানা গেল, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় তাদের সাহায্য চেয়েছে। ঈদের পর বন্যাকবলিত এলাকাগুলোয় সরকার ত্রাণ ও ওষুধ দেবে। সন্ধানী তাদের সাহায্য করবে। সরকারি হেলথ ক্যাম্পগুলোয় সব ইউনিট একসঙ্গে কাজ করবে। এ ছাড়া তাঁরা নিজ উদ্যোগে দিনাজপুরের ১৫ থেকে ২০টি পরিবারকে বাড়ি তৈরি করে দেবেন।

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়