Ameen Qudir

Published:
2016-11-25 15:04:31 BdST

টরেন্টোতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ


 

 


ডা. বি এম আতিকুজ্জামান

__________________________________________________

 

 

 

গতকাল থেকে তুষারপাত। টরোন্টের শীতের প্রথম তুষারপাত। তীব্র শীতের মাঝে হালকা পোঁজা তুলোর মতো তুষার পড়ছে। মেঘলা আকাশ। শো শো করে হাওয়া আসছে লেক অন্টারিও থেকে। লেকটাকে সমুদ্রের মতো লাগে। আজ ভোর সকালে ঘুম থেকে উঠে শোবার ঘর থেকে আধো আলো, আধো ছায়াতে লেকের ওপর তুষার পড়া দেখছি। আমার বন্ধু মন্জু চা নিয়ে ঘরে এসে স্মরন করিয়ে দিলো বিমানবন্দরে রওনা হতে হবে এখনই। আমি ওঁকে বললাম, "চল খালিপায়ে তুষারের ওপর হেটে আসি"। দুজন মধ্যবয়সি পাগল তরুন খানিকক্ষন তুষারপাতের মাঝে হাটলাম। সে এক অন্যরকম অনুভুতি!

দু'টি মায়ামাখা দিন কাটিয়ে ফিরে যাচ্ছি নিজ গৃহে।

দুদিন আগে অরল্যান্ডোর চমৎকার রোদ মাখা আকাশ ছেড়ে যখন টরোন্টতে পৌছুলাম তখন আকাশের রঙ বদলে গেছে। মেঘলা ধুসর আকাশ আর কনকনে শীতের মাঝে তো মনটা বিষন্ন হবার কথা। কিন্তু আমি আনন্দে উল্লসিত।

আমি টরোন্টতে এসেছি কানাডাতে বসবাসরত আমাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ঘনিষ্ট বন্ধুদের নিমন্ত্রনে। আমাদের পূনর্মিলনী অনুষ্ঠানে।

টরোন্টতে আসলেই আমার ঈদ হয়। আমার একগাদা আপনজন থাকেন শহরে। ঈদের মতোই সারাদিন মহাআনন্দে ঘুরে বেড়াতে পারি এ বাড়ি থেকে ও বাড়িতে। মজার মজার সব রান্না!

 

 

        

কিন্তু এবার সময়টা বড় অল্প।

আমার চিকিৎসক- কবি বন্ধু মোশতাক আহমেদ, পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিত এসেছে বাংলাদেশ থেকে, সত্যজিৎ এসেছে বিলেত থেকে, তিতাস মাহমুদ ক্লিভল্যান্ড থেকে, লোপা এসেছে বোস্টন থেকে, এহসানুল হক ভাই আসছেন ফ্লোরিডা থেকে। গুনী আয়োজক গবেষক-চিকিৎসক শাহরিয়ার মোর্শেদ সানি জানিয়েছে কানাডাতে বসবাসরত ষাটজন চিকিৎসক পরিবারসহ এ পূনর্মিলন উৎসবে থাকবেন। আমাদের প্রিয় অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেন, (যিনি মেডিকেল কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাএ ছিলেন) আসছেন তার জটিল শারীরিক অবস্হার মাঝেও। আরেক প্রিয়জন, প্রাক্তন অধ্যাপক ডা: খোকন কান্তি দাস এ বিশাল যজ্ঞের প্রধান উপদেশক। অন্যতম আয়োজক আমার প্রিয় বন্ধু এরশাদউল্লাহ সোহেল আর গানের পাখি ফাহমিদা নূতন দিনরাত পরিশ্রম করছে এ উৎসব সফল করার জন্য।

আমাদের ফাহমিদা নতুন পরিবারের সদস্য, বিশেষ করে আহসান ভাই আর রাইয়ানের প্রতি বোধ করি সবাই কৃতজ্ঞ। তারা হাসিমুখ নিয়ে দিনরাত খেটেছেন অ অনুষ্ঠানের সফল করার জন্য।

আর তাই সব পুরোনো বন্ধু বান্ধব নিয়েই কাটিয়েছি এ সময়।

অনুষ্ঠান ও মন্চ পরিকল্পনাতে ছিল নাসরিন চৌধুরী। এই প্রবাসেও কি শৈল্পিক তার কাজ!

' আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে' দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু। চমৎকার গান আর নাচ তার সাথে।

 

    

শুরুতেই সব প্রাক্তন ছাত্র- ছাত্রীরা দীর্ঘদিন পর এক জন আরেক জনকে দেখতে পেরে উল্লাসিত, আবেগে আপ্লুত। সে আবেগেই বয়ে গেলো সারাটা সময়।

দেশের গান দিয়ে শুরু। এরপরই সবার পরিচিতি পর্ব ।এরশাদ আর নুতন চাটগাঁর এক জনপ্রিয় গান 'কইলজার ভিতর গাঁথি রাইখতুম তারে' দিয়ে শুরু করলো আমাদের উৎসব। কবি মোশতাক আহমেদ রোকনের নতুন কাব্য গ্রন্থ "তিন ভুবনের যাত্রী"র প্রকাশনা উৎসব হলো তার পর পরই। মুশতাক মাহমুদ আর শায়লার যুগলবন্দী কবিতা আবৃতি নিয়ে এলো নান্দনিকতা। মুশতাক মাহমুদ আর নাসরিনের প্রাঞ্জল উপস্থাপনাতে এগিয়ে চললো অনুষ্ঠান। বিশ্বজিৎ আর সত্যজিৎ দু ভাইয়ের অম্ল মধুর রসিকতার চাপ ছিল অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে।

 

 

 

 

 

ফাহমিদা নুতন তার মায়াবী সুরের জাদুতে বাঁধলেন সবাইকে আবারো। আমি তার সাথে গাইলাম ' কে প্রথম কাছে এসেছি ..."। আমাদের সময়কার প্রিয় গান " আমি হেমিলনের সেই বাঁশি ওয়ালা ..." গাইবার পরে অনেকে এসে অবাক ভাবে বললো , 'গান শিখছো কতদিন ধরে? অর্জুন আর লক্ষীর পরিবার কি চমৎকার ভাবে মাতালো আমাদের। বিশেষ করে লুব্ধকের পরিবেশনা ছিল অনন্য।

সব গানের সাথে তবলাতে সওগাত করছিলো আমাদের চির চেনা মাহফুজুল হক সাইদ কেতন। গড়াতে থাকলো আমাদের অনুষ্ঠান শেষের দিকে । শেষ হলো সবাই মিলে ' আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম ..' গাইতে গাইতে।

মুখরোচক মধ্যাহ্ন ভোজ আর বিশাল এক কেক কেটে অনুষ্ঠানের শেষ হলো। তবে আমাদের উৎসবের কেবল শুরু।

আমরা গোটা বিশেক বন্ধু বান্ধব মিলে নতুনের বাসায় হাজির হলাম তার নিমন্ত্রনে। তিরিশ পদের রান্না খেয়ে শুরু হলো আমাদের শেষ রাট পর্যন্ত আড্ডা আর গান .. কেবল জীবনের জয়গান।

নিদ্রাহীন রাত কাটিয়ে, অশেষ আড্ডা মেরে বিমানবন্দরে এসে মনে হলো খুব শূন্য আমি। তবে বিশাল প্রাপ্তির আনন্দে মন ভরে আছে।

দশ হাজার ফুট ওপরে বিমান .... আমি ভাবছি কি বলেছিলাম আমি: আমাদের পুনর্মিলনী শেষ, তবে কাজের শুরু। হাজার হাজার মাইল ছেড়ে যে দেশ ছেড়ে এসেছি, যে দেশ আমাদের বড়ো করেছে তাকে ভুলে গেলে চলবে না। আমার বাংলাদেশের জন্য যে কাজগুলো আমরা শুরু করেছি তা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।বিশ্বায়নের এ যুগে চিকিৎসা প্রযুক্তিতে আমাদের দেশকে এগিয়ে নেয়াই আমাদের লক্ষ্য।


___________________________________

 

 

 

লেখক লিখেছেন ডা. বিএম আতিকুজ্জামান । আমেরিকা প্রবাসী প্রখ্যাত চিকিৎসক। সিএমসি ২৮। সুলেখক। কলামিস্ট ও গায়ক হিসেবে  ব্যাপক জনপ্রিয়তাধন্য।

_________________________
ঢাকায় টরেন্টো লেখা হলেও লেখক বানান লিখেছেন টরোন্ট ।তাঁর লেখায় সেটা রাখা হল। ডাক্তার প্রতিদিন টিম।

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়