Ameen Qudir

Published:
2017-05-25 19:45:01 BdST

আমেরিকায় দৈনিক গড়ে ৭০০ ভুল চিকিৎসার স্বীকার হচ্ছে, আর আমরা প্রাণ বাঁচিয়ে মার খাই


 

 

ডা. মিথিলা ফেরদৌস

___________________________

 

কোথাও কোন ঘটনা বা দুর্ঘটনা হলে,সাধারণ জনগণ রাস্তায় নিরাপরাধ মানুষের গাড়ি ভাংচুর করে।এর কারণ
১ একধরনের মানুষের মানসিক বিকৃতি। ২পরশ্রীকাতরতা,অন্যের রক্ত পানি করা গাড়ী ভেঙে নিজের গাড়ী না থাকার হতাশা মিটানো।
৩ কিছু অপদার্থ থাকে,যারা এইসব করেই সময় কাটায়।
৪কিছু ধান্দাবাজ এইসব থেকে ফায়দা নেবার চেস্টা করে।

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সেন্ট্রাল হস্পিটালের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আশিজন বীরপুরুষ একজন অসহায় নিরপরাধ ডাক্তারের উপর চড়াও হয়,রক্তাক্ত করে।প্রত্যক্ষ দর্শীর বিবরণ অনুযায়ী এদের মধ্যে দুই জনের হাতে পিস্তল ছিল,এবং তারা নাকি চিৎকার করে বলছিলো' মার দুই চারটা ডাক্তার।'

এত ক্ষোভের কারণ কি,উপরে দেখুন গাড়ী ভাঙার জন্যে যে কারণ গুলা বলেছি এখন মিলান।

কমিউনিটি বেসড মেডিকেল কলেজের ছেলে সাজিদের মত যারা বিভিন্ন প্রাইভেট বা সরকারি মেডিকেলে জব করছে বা অনারারী করছে,তাদের পারসোনাল জীবনের কথা কতটুকু জানেন?এরা দিনের তিন ভাগের এক ভাগ অনারারী ট্রেনিং নামক অমানবিক প্রথার মধ্য দিয়ে যায়,একভাগ ক্লিনিকে জব করে সংসার বাবা মা ভাইবোনের পড়াশুনার খরচের জন্যে পাঠাতে হয়,আর বাকি ভাগ পড়াশুনা করতে হয় ক্যারিয়ারের জন্যে।এরা প্রায় সময় খেয়ে না খেয়ে,বাসে বা হেটে কোন রকম সাধ আহ্লাদ ছাড়া জীবনের মুল্যবান সময় কাটায় দেয়।

ক্যারিয়ারের শুরুতেই যে নিরাপরাধ ছেলেটি বিনাদোষে এমন অমানবিকতার স্বীকার হলো সে পরবর্তিতে মানুষের প্রতি কি মমতা দেখাবে ,বা দেখাতে পারে?

ভুল চিকিৎসা কারা নির্ধারণ করবে?তাদের কতটুকু চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিৎ? ভুল চিকিৎসা যদি কোথাও হয়েই থাকে তাহলে কি সরাসরি ডিউটি,ডাক্তার পিটানো,হাস্পাতাল ভাংচুর করা কি কোন সভ্য মানুষের কাজ হবার কথা?নাকি বাংলা সিনেমার মত আইন শৃক্ষলা বাহিনীর উপর ভরসা রাখতে পারেননা।আইন শৃংখলা বাহিনীও বাংলা সিনেমার মতই,ঘটনা শেষ হবার পরেই আসে।এখন সিনেমা আলারা তাদের ফলো করে,না তারা সিনেমা আলাদের ফলো করে,আমার বুদ্ধিতে কুলায় না।
যেকোন কর্পোরেট হাসপাতাল গুলা ডাক্তার দিয়ে স্রেফ ব্যাবসা করে,একটা উদাহরন দিলেই বুঝবেন আমি কি বুঝাইতে চাইছি,ঢাকা শহরের নাম করা এক ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে একজন নামকরা রেডিওলোজিস্ট আল্ট্রা করে পায় ২০০ টাকা,সেখানে সেই ডায়াগনোস্টিক সেন্টার নেয় ১৮০০ টাকা।সাধারন জনগন একটু বোঝার চেষ্টা করুন,কারা কারা প্রতারনার স্বীকার হচ্ছে?আপনারা আর ডাক্তার রা।

এখন আসি সরকারী,বেসরকারি নামীদামী হাসপাতালে জুনিয়রদের কাজ প্রসঙ্গে যারা প্রতিনিয়ত খামোখাই মার খেয়ে যাচ্ছে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় অকারনে।একটা হাসপাতালে জুনিয়রদের কাজ একটা রুগী ভর্তির পর তার প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে, তারপর সিনিয়র কে জানানো,এরপর সিনিয়র চিকিৎসক বিভিন্ন পরিক্ষা নিরিক্ষার পর রোগ নির্ধারণ করে তার চিকিৎসা দিয়ে থাকেন,এরপর জুনিয়র চিকিৎসক তা ফলো আপ করে,রুগীর অবস্থা সম্পর্কে সিনিয়রকে অবহিত করেন,আর মাঝে মাঝে কিছু সিম্পটোমেটিক চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।

আর একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে সরকারী হাসপাতালে অতিরিক্ত রুগীর কারনে কিছু সিস্টেম লস থাকে,যেমন রুগী ভর্তির পর ওইদিন অনেক সময় পরিক্ষা নাও হতে পারে,পরেরদিন পরিক্ষা হবার পর চিকিৎসা করা হয়।সেক্ষেত্রে অনেক রুগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে।তার দায়ভার ও জুনিয়র চিকিৎসকদের না,হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট বা পুরা সিস্টেমটাই এর জন্যে দায়ী।

 

মানে একটু খেয়াল করলেই বুঝবেন একটা রুগীর চিকিৎসার ব্যাপারে একজন জুনিয়র চিকিৎসকের উপর আপনাদের ঝাল ঝারার কারন টা কোথায়?আসলে জুনিয়রা হাস্পাতালে সবসময় অরক্ষিত।আর দুর্বলের উপর যারা একযোগে চড়াও হয় তাদের কি বলা হয়,আপনারা সবাই জানেন।

জুনিয়রদের উদ্দেশ্যে বলবো একটা রুগী আসার পর আমি উপরে যা যা বললাম,তা তা রুগীর সঙ্গে আসা লোকজনকে কাউন্সেলিং করে নিন,তাদের বুঝতে দিন,যে চিকিৎসা তারা পাচ্ছে,তা আপনার না,হাসপাতালের অনিয়মের দায়ভারও আপনার না।অতএব মামলা হামলা যাই করেন,জায়গা মত করেন কাজে দিবে।একটা কথা মনে রাখবেন কেউ যদি আপনাকে ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করতে চায়,সেই ক্ষেত্রে নিজের প্রোটেকশানের ব্যাবস্থা নিজেকেই করতে হবে।

 

খোদ আমারিকায় দৈনিক গড়ে ৭০০ জন ভুল চিকিৎসার স্বীকার হচ্ছে,তারা কি হাস্পাতাল ভাঙচুর বা ডাক্তার মারপিট করছে?আমরা আর কবে সভ্য হবো কেউ বলবেন কি?

__________________________

ডা. মিথিলা ফেরদৌস । সুলেখক।

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়