Ameen Qudir

Published:
2017-03-13 01:05:26 BdST

চিকিৎসক যখন আক্রান্ত হয় : তখন রাষ্ট্র, সরকার ও আমলারা এক হয়ে প্রতিপক্ষ বনে যায়


 

 

 

 

রাষ্ট্র ও তার নির্বাহী বিভাগ, রোগীর দুর্বৃত্ত-স্বজন দ্বারা আক্রান্ত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পুনরায় শাস্তি দিয়ে স্পষ্ট করল – ‘চিকিৎসকরা রাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ' । লিখেছেন ডা.বাহারুল আলম ।
_______________

আক্রান্ত নবীন চিকিৎসকদের শৌর্য-বীর্য ও সাহসিকতায় ইন্টার্নদের আন্দোলন স্পষ্ট করে দিয়েছে, - চিকিৎসক যখন আক্রান্ত হয় তখন রাষ্ট্র, সরকার ও আমলারা এক হয়ে প্রতিপক্ষ বনে যায়। রাষ্ট্রের মূলধারা থেকে চিকিৎসকদের যে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে তা অনুধাবন ও বিশ্বাসে নবীন-প্রবীণ চিকিৎসকদের মধ্যে ব্যাপক দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিল। এ আন্দোলনে রাষ্ট্র, তার নির্বাহী বিভাগ, চিকিৎসক এবং জনগণের কাছে সেটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

যৌন হয়রানি ও শারীরিকভাবে আক্রান্ত চিকিৎসকরা আত্মরক্ষার প্রয়োজনে রোগীর স্বজনদের প্রতিহত করতে গিয়ে যে ঘটনা ঘটেছিল, রাষ্ট্র আক্রান্ত চিকিৎসকদের পাশে না দাঁড়িয়ে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিল। নিরাপত্তা ও দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের পক্ষে রাষ্ট্রের অবস্থান থাকা ছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজন।

রোগী-চিকিৎসক ও চিকিৎসার পরিবেশ সবই রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকা সত্ত্বেও, দুর্বৃত্ত ও বহিরাগতরা যে মারাত্মক অপরাধ করেছে, রাষ্ট্র সেই দুর্বৃত্তদের শাস্তি দেওয়ার উদ্যোগ না নিয়ে আক্রান্ত চিকিৎসকদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে শাস্তি দিল।

রাষ্ট্র স্পষ্ট জানে , অহেতুক রোগীর দুর্বৃত্ত স্বজনদের স্বপ্রনোদিত হয়ে চিকিৎসকরা আক্রমণ করে নি। তাদের অনুপ্রবেশ , অবস্থান , চিকিৎসক যৌন হয়রানি ও আক্রমণ সবই ছিল রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনে মারাত্মক অপরাধ । দুর্বৃত্তরা মন্ত্রীর স্বজন বিধায় ও চিকিৎসকরা প্রতিপক্ষ হওয়ায়, শাস্তির ব্যবস্থা করা হল কেবল চিকিৎসকদের।

রাষ্ট্র অবশেষে চিকিৎসকদের আন্দোলনের চাপে শাস্তি প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হল। বগুড়ার এ ঘটনায় এরূপ পক্ষ-প্রতিপক্ষ সৃষ্টি হওয়ার কোন প্রয়োজন ছিল না।

চিকিৎসক সমাজ , মানবতাবাদী জনসংগঠন, রাজনৈতিক সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ সকলে প্রত্যক্ষ করল, পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে কিভাবে নবীন চিকিৎসকরা শাস্তি পায় !
এ বিশ্লেষণ থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, ‘নিরাপত্তাহীন ও অনৈতিক রাষ্ট্রীয় সমর্থনের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত চিকিৎসকদের কাজ করতে হয়’।

এরপরে এরূপ ঘটনায় প্রতিকারের নিমিত্তে সংক্ষুব্ধ চিকিৎসকরা যখন প্রতিবাদের আন্দোলন করবে- তখন রাষ্ট্রের নাগরিক ও নেতৃবৃন্দের সমালোচনা এবং বাধা দেওয়ার অধিকার থাকবে না ।

চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় মানবিকতা রক্ষার দায় ও দায়বদ্ধতা থেকে রাষ্ট্রে রোগী-চিকিৎসকের অধিকার আন্দোলনে সকলকে সমর্থন ও সহায়তা জানাবার আহ্বান জানাচ্ছি। - রাষ্ট্র, সরকার, নাগরিক, সকলের বিবেক জাগ্রত হোক । আমরা যেন কেউ কারো প্রতিপক্ষ না হই, সকলে সকলের হয়ে উঠি। মুক্তিযুদ্ধের এ মূল্যবোধ দৃশ্যমান হয়ে উঠুক। জয় বাংলা।

এ বিষয়ে বিশ্লেষণ ও মতামত প্রত্যাশা করছি।

______________________________

ডা.বাহারুল আলম । লোকসেবী চিকিৎসক। সুলেখক। সুবক্তা। প্রখ্যাত পেশাজীবী নেতা।

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়