Ameen Qudir

Published:
2016-11-18 15:02:08 BdST

নিষ্পাপ শিশুকে দিন দেখার অধিকার


     


ডা. তারিক রেজা আলী
__________________________

১৭ নভেম্বর ছিল বিশ্ব রেটিনোপ্যাথী অফ প্রিম্যাচিউরিটি (আরওপি) দিবস। আমাদের দেশে দিবসটি তেমন পরিচিতি পায় নি। আর এত দিবসের ভিড়ে এই দিনটি মনে রাখবই বা কি ভাবে। অনেক দিন ধরে মনে মনে ভেবেছিলাম এই দিবসটি নিয়ে কিছু লিখব, সময় পেলাম দিন শেষে।

 

রেটিনা হলো চোখের ভিতরের সংবেদনশীল এক পর্দা, যার উপর আলো প্রতিফলিত হলে ছবি তৈরী হয়, সেই ছবি আমাদের ব্রেইন বা মগজে পোঁছালে আমরা দেখতে পাই। প্যাথী বা প্যাথলজী মানে হলো কোন রোগ। আর প্রিম্যাচিউর শব্দের অর্থ তো আমরা বুঝিই, যে শিশু তার নির্দিষ্ট সময়ে আগে এই দুনিয়াতে জন্ম নিয়েছে। তাহলে 'রেটিনোপ্যাথী অফ প্রিম্যাচিউরিটি' মানে দাঁড়ালো অপরিণত বয়সে জন্ম নেওয়া শিশুদের চোখের রেটিনার রোগ বা ব্যাধি।

 

শিশু যদি মায়ের গর্ভে পুরো সময়টা থাকে, পুরো নয় মাস দশ দিন, তার পরেও রেটিনা পুরোপুরি তৈরী হতে আরও এক মাস সময় লাগে। আর অপরিণত শিশুদের রেটিনা তো আরো বেশী অপরিপক্ক থাকে। এত কিছুর পরেও সৃষ্টিকর্তা শতকরা ৭০ ভাগ অপরিণত শিশুদের রেটিনা ভাল করে দেন। শতকরা ৩০ ভাগ শিশু, যাদের জন্ম পরবর্তী সময়ে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ (নিওনেটাল আইসিইউ) তে অনেকটা সময় কেটেছে, অক্সিজেন দিতে হয়েছে অনেক বেশী মাত্রার, অথবা ভেন্টিলেশন মেশিনে নিতে হয়েছে, তীব্র শ্বাস কষ্ট ছিল, এরকম শিশুদের রেটিনা, যেটা অপরিণত, সেখানে নতুন নতুন রক্তনালী তৈরী হয়। সেই নতুন রক্তনালী থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে যে কোন সময়। এমনকি রক্তক্ষরণের পর রেটিনা ছিঁড়ে যেতে পারে, যাকে বলে রেটিনাল ডিটাচমেন্ট। রেটিনা একবার ছিঁড়ে গেলে সে শিশু কখনোই আর ভাল দেখতে পায় না। অথচ যখন কেবল রক্তক্ষরণ শুরু হচ্ছে বা হবে, তখন যদি আমরা রেটিনা লেজার করতে পারি, এই সব শিশুদের দৃষ্টি রক্ষা করা সম্ভব। এই সময় টা খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাকে বলে স্ক্রীনিং।

 

আমাদের দেশে অপরিণত শিশু জন্ম হার বাড়ছে। আগে এ সব শিশু মৃত্যু হার ছিল অনেক বেশী। নিওনেটাল আইসিইউর সংখ্যা বেড়েছে, তাদের সেবার মানও অনেক বেড়ছে। সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে এই সেবা। আন্তর্জাতিক সেবা সংস্থা গুলো নিয়েছে দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্রম। এসব কারণে এখন ২৮ সপ্তাহে জন্ম নেওয়া তো বটেই, ২৪ সপ্তাহে জন্ম নেওয়া শিশুও বেঁচে থাকছে। একই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রেটিনোপ্যাথী অফ প্রিম্যাচিউরিটর হার। যে সব শিশু জন্ম নিয়েছে মায়ের গর্ভে ৩৫ সপ্তাহ থাকার পূর্বে, অথবা যাদের ওজন ছিল ২কেজি বা ২০০০ গ্রামের কম, তাদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী। তাই এসব শিশুর চোখের রেটিনা পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরী। এটাকে বলা হয় স্ক্রীনিং, কার চিকিৎসা লাগবে, কার লাগবে না। সংক্ষেপে স্ক্রীনিং ক্রাইটেরিয়া হলোঃ

মায়ের গর্ভে ৩৫ সপ্তাহের কম অথবা ওজন ২০০০ গ্রামের কম ঃ ৩০ দিন বয়সে
মায়ের গর্ভে ২৮ সপ্তাহের কম অথবা ওজন ১২০০ গ্রামের কম ঃ ২০ দিন বয়সে

 

যদি কোন শিশুর চিকিৎসা দরকার হয়, প্রথমে চেষ্টা করা হয় লেজার করার। অনেক সময় চোখে ইনজেকশনও দিতে হয়। আর সব শেষে, যদি লেজার করেও রেটিনাকে রক্ষ্মা করা সম্ভব না হয়, আমাদের অনেক সময় অপারেশনে যেতে হয়। অপারেশনের রেজাল্ট বেশীর ভাগ সময়েই খুব ভাল হয় না। তবে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে লেজার করতে পারলে শিশুদের দৃষ্টি ভাল রাখা সম্ভব, এত ভাল যে শিশু আর সব বাচ্চাদের সাথে একই স্কুলে লেখা পড়া করতে পারে।

 

বিশ্ব রেটিনোপ্যাথী অফ প্রিম্যাচিউরিটি দিবসের অঙ্গীকার হোক, সকল প্রিম্যাচিউর শিশু কে আরওপি স্ক্রীনিং-এর আওতায় আনতে হবে, একজনও যেন বাদ না পড়ে। যে পরিবারে অপরিণত বয়সে শিশুর জন্ম হলো, সেই নবজাতকের সঠিক সময়ে চক্ষু পরীক্ষার ব্যবস্থা করা সেই পরিবারের সদস্যদেরও দায়িত্ব, নবজাতক বিশেষজ্ঞদের দায়িত্ব তো অবশ্যই আরও বেশী।

____________________


লেখক : প্রখ্যাত চিকিৎসক । বিজ্ঞান লেখক। Assistant Professor, Retina. at Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University

আপনার মতামত দিন:


বিএসএমএমইউ এর জনপ্রিয়