Ameen Qudir
Published:2017-02-15 16:30:58 BdST
খবরটি পড়লে সব ডাক্তারের হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাবে
ডা. তারিক রেজা আলী, সহকারী অধ্যাপক
_________________________________
১৪ ফেব্রুয়ারী সারাদিন ছিল বসন্তের খবর, কাল থাকবে তথাকথিত ভালবাসা দিবসের খবর। ডামাডোলে হারিয়ে যাবে গণতন্ত্র উদ্ধারের প্রথম যুদ্ধের, প্রথম শহীদ দিবস ১৪ ফেব্রুয়ারী, ১৯৮৩ এর খবর ।
তেমনি খুব কম সংখ্যক মানুষের নজরে এসেছে এদিনের সমকালে প্রকাশিত চিকিৎসা অবহেলা রোধে " স্বাস্থ্যসেবা আইন-২০১৭" খসড়া চূড়ান্ত করার খবর।
সত্যিকথা বলতে আমার নিজেরই জানা ছিল না আজকের সমকালের প্রকাশিত এই অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির কথা। সন্ধ্যায় ব্যস্ত চেম্বারে এক স্নেহভাজন ছোট ভাই, যিনি নিজেই এখন এক প্রতিথযশা চিকিৎসক, আমাকে জানালেন এ সম্বন্ধে। কণ্ঠে তার এমন এক বিষাদ কাজ করছিল, এত হৃদয় ভাঙ্গা আর্তনাদ ছিল, আমার হাত-পা কেমন অসার হয়ে যাচ্ছিল। শেষে তিনি অনুরোধ করলেন, এই খবরটি যাতে আমি পড়ি।
বাড়ী ফিরে পড়লাম, পড়ে আত্মস্থ করার চেষ্টা করলাম। কি থাকবে এই আইনে? যে কোন ব্যক্তি চিকিৎসার প্রয়োজনে সরকারী-বেসরকারী যে কোন হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা পাবার অধিকারী হবেন। আমার দৃষ্টিতে খুবই ভাল কথা।
ডাক্তারদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ফি সরকার নির্ধারণ করে দিবেন তাঁদের যোগ্যতা অনুসারে। ভাল কথা।
তাহলে নিশ্চয়ই ডাক্তারদের দাবী অনুযায়ী অন্য সব পেশাজীবি যেমন আইনজীবী, ব্যারিস্টার, নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা, খেলোয়াড় সব পেশাজীবির ফি নির্ধারণ করবেন সরকার।
এই রকম নিয়ন্ত্রণ কম্যুনিষ্ট শাসিত সমাজে করা হয়, এমন গল্প শুনেছি। আমাদের দেশে এ নিয়ন্ত্রণ সবার জন্য সমান ভাবে প্রযোজ্য হবে নাকি শুধু ডাক্তারদের সৎ আয় নিয়ন্ত্রণে প্রয়োগ হবে এটা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাবে।
প্রকাশিত সংবাদের দ্বিতীয় অংশ, যেটা ১৭ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে, সেটা পড়ে আমার না শুধু, সব চিকিৎসকের হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। সবাই ঠাণ্ডা মাথায় পড়বেন দয়া করে। রোগীর চিকিৎসায় ইচ্ছাকৃত অবহেলা কোন চিকিৎসক করেন বা করতে পারেন, আমি বিশ্বাস করি না।
আমি যে অবহেলা করেছি, কে কিভাবে তা ঠিক করবেন? অনেক চেষ্টা করেও অনেক সময় রোগীর চোখের রেটিনা আমি জোড়া লাগাতে পারি না। অথবা ছেড়া রেটিনা জোড়া লাগিয়েছিলাম, তিন মাস পর দেখা গেল সেই রেটিনা আবার ছিঁড়ে গেছে। রোগীকে হয়তো আমি আগে থেকে সব বলে, তাঁর অনুমতি নিয়েই অপারেশন করেছি, রোগী যদি সরকারের ট্রাইব্যুনালে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, সেই ট্রাইব্যুনাল আমার অবহেলা ছিল, না কি প্রাণান্তকর চেষ্টা ছিল রোগীর চোখের স্বার্থে, কিভাবে ঠিক করবেন? আমি জানি না। শুধু জানি আমি অপারেশন করা কমিয়ে দিব। রোগীদের কে বাধ্য হয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে হবে।
কোন চিকিৎসক ইচ্ছাকৃত ভাবে রোগীকে প্রয়োজনের তুলনায় কম বা বেশী ঔষধ দিতে পারেন? কর্মস্থলে কি শুধু চিকিৎসকেরাই দেরী করে আসেন? তাঁরাই কি শুধু সময়ের আগে অফিস ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন?
আমি আইনজীবী নই। এই অধ্যাদেশ ভাল ভাবে হৃদয়ঙ্গম করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কি আছে পুরো আইনে তা আরও ভাল করে জানতে-বুঝতে হবে। চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ এটা নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করবেন এ দাবী করছি। এই আইন রোগীদের স্বার্থ রক্ষার না হয়ে পরবর্তীতে শুধু যদি চিকিৎসকদের নিপীড়নের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, তা হলে প্রতি বৎসর আমরা যে পোনা মাছের মত হাজার হাজার ডাক্তার ছেড়ে দিচ্ছি, তাঁদের ভবিষ্যৎ কি হবে?
মনে হয় মেধাবী সন্তানেরা আর চিকিৎসক হতে চাইবেন না, আইনজীবী বা সরকারী কর্মকর্তা হতে চাইবেন, চিকিৎসকেরা চাইবেন কত তাড়াতাড়ি বিদেশে থিতু হওয়া যায়।
হায়, আমার যদি সেই বয়স থাকতো!
____________________________
লেখক ডা. তারিক রেজা আলী Assistant Professor, Retina. at Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University
আপনার মতামত দিন: